Wednesday, August 21, 2019

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম ( ১৩তম পর্ব)

জানালার পাশে চায়ের কাপ হাতে বসে আছে ফারহান।সামনে গল্পের বই।
পড়ন্ত বিকালের আবহাওয়া একদম অতুলনীয়। কি বাতাশের ঘ্রাণ,,!
মুগ্ধ হয়ে বাতাশের ঘ্রাণ শুকা একধরনের অনুভূতি প্রকাশ প্রায়। সেটা হয়তো সবাই বুঝতে পারে না।

চায়ের কাপে একটু চুমুক দিয়ে চোখটা বুঝে একটা কড়া নিঃশ্বাস নেয় ফারহান। নিঃশ্বাসবন্ধ করে বাতাশের ঘ্রাণ, আকৃত্রি, কালার, স্বাদ, গন্ধ বোঝার চেষ্টা করলো,,,!
কিন্তু, ফারহান কোন বিশেষ বা বিখ্যাত ব্যক্তি না হওয়াতে কিছুই বুঝতে পারে নাই। শুধু এটাই বুঝতে ও অনুভব, অনুভূতি করতে পারছে, বাতাশের একটা তিব্র শক্তি, শক্তিগড়, শক্তিবল কিছু একটা আছে। যা ভেতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে মানুষের মন, রক্তকোষ, রক্তকমল, মনমানসিকতা সুন্দর করে দেয়। নিমেষে সব ক্লান্ত অবসাদ দূর করে দেয়। একটা অনুভূতি জাগিয়ে দেয়।

ফারহান চায়ের কাপে চুমুক দিতে মমতা বেগম রুমে ঢুকে পড়ে। ছেলেকে জানালার পাশে চা খেতে দেখে মমতা রহমান মৃধু হেসে দিয়ে এগিয়ে যায়।
ফারহান বুঝতে পারে কেউ রুমের ভেতর এসেছে। পিছন ঘুরতে দেখে মা।
---আম্মু চা খাবে,,?
.
মমতা রহমান ছেলের কথা শুনে একদম আনন্দে মেতে উঠলেন।
---উমম খাওয়া যায় এক কাপ যদি তুই নিজে না বানিয়ে দিস বউ বানাতো।
---কি,,! বউ আসলো কোথা থেকে,!
---কত করে বলছি চাকরি কর, তারপর বিয়ে কর।
---আম্মু আব্বুকে বল আমি চাকরি করবো।
---আব্বুকে বলবো মানে।
---এতদিন যে তোমরা বলতা শফিক আংকেলের ওখানে চাকরি কর।
---ও,,তুই কি সিরিয়াসলি বলছিস বাপ।
---হুমম।
---আলহামদুলিল্লাহ্,,! আল্লাহ তায়ালা তাহলে আমার দোয়াটা কবূল করেছে।
---তুমি প্রতিদিন দোয়া করতে আম্মু।
---হুমম।
---তুমি আমার বেষ্ট মম,,,
---হয়ছে হয়ছে আর ছেলেমানুষি করতে হবে না।
---চা খাবে না আম্মু,,!
---সেদিনই চা খাব যেদিন তোর বউ আমাকে বলবে "আম্মা এই নিন আপনার চা। খেয়ে দেখুন তো চিনি ঠিক আছে কিনা । আমি তখন বলবো, তুমি আবার চা বানাতে গেলে কেনো। আমি আছি না। তখন বলবে, না আম্মা,,! এখন থেকে আমি প্রতিদিন চা বানিয়ে দেব। এখন খেয়ে দেখুন চা'য়ে চিনি ঠিক আছে কিনা। তখন আমি বউমার থুতনি ধরে বলবো, আমার মিষ্টি বউমা যখন বানিয়েছে তখন তো সব ঠিক হবে।
---আর ওমনি লজ্জা পেয়ে যাবে তাই না আম্মু,,, এখন স্বপ্নের সানগ্লাস ছেড়ে বল ব্যস্তবে আসো,,,।
---তুই কি বুঝবি স্বপ্নের সানগ্লাস,,,,
---বাহ্, বাহবা,,,এখন চা খেতে পার।
---চা কি আমি বানাবো,,,,।
---বারে চা কি তোমাকে বানিয়ে খেতে বলছি নাকি। তুমি শুধু বল, আমি বানিয়ে আনছি Fast to Fast,,,,
---Ok my dear son,,,,
---হাহাহাহা,,,
---মশা দৌড় দিবে রে তোর মুখের ভেতর বুইড়া,,,এখন দয়া করে মুখখানা বন্ধ কর,,,,হিহিহিহিহিহি,, (চৈতী রুমের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে বললো কথাটা)
---হাহাহাহা,,,,
---আম্মু একদম হাসবানা বলে দিচ্ছি,,,,
---হাহা,,,না হেহেহেসে পারি বল,,,
---আম্মু জোরে জোরে হাসো,,,
---ডাইনি বিলাই,,,,
---যা যা কাজের পোলা চা নিয়ে আয়। আমি আর আম্মু খাব।
---তোর কপালে চা নাই কুটনি বিলাই,,,,,
---আম্মু দেখছো ভাইয়া জিব্বাহ্ বের করে আমাকে রাগাচ্ছে।
---কুটনি বিলাই,,,
---কাজের বুয়া,,, থুক্কু কাজের পোলা,,,
---তুই তো দত্তক মাইয়া,,,
.
ফারহান কথাটা বলে ভোঁ দৌড় দেয় কিচিনের দিকে।
---কি রে পালাস ক্রে,,, সাহস থাকলে সামনে আয়। তোর ঘাড় মটকাবো,,,,আর তুমিও হাসছো আম্মু হ্যাঁ,,,(রেগে)
---আচ্ছা আচ্ছা স্যরি,,,,
---আবার,,,
---ওকে,,,
---ভাইয়াকে কথাগুলি বলেছিলে।
---হ্যাঁ,,,
---ভাইয়া কি বললো,,?
---ও বললো স্বপ্নের সানগ্লাস ছেড়ে বাস্তবে আসতে।
---তখন তুমি ভাইয়াকে কি বললে,, ঠিক আছে তোর যা ইচ্ছে তাই কর। আমি জানি তাই বলবা। তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
---তুই তো জানিস ওর উপরে চোখ গরম করে কথা বলতে পারি না।
---ঠিক আছে। যা করার আমি করছি এখন,,,
---কাকে ফোন করিস,,
---দেখ তুমি।
---ফারহানকে মারবি নাকি লোক ভাড়া করে।
---আম্মু এসব কি বলো। সেদিনের কথা ভুলে গেলে।
---ওহ্! আমার মনে নাই।
---দেখ আমি কি করি,,,
.
ফোন রিং বেজে কেটে গেলো। ফোন রেখে যে কি করে আল্লাহ তায়ালা জানে।
---হ্যালো,,,
---ফোন রেখে কোথায় ছিলে,,, আচ্ছা বাদ দাও,,, কোথায় তুমি,,,?
---বারান্দায় ছিলাম,,,এখন রুমের ভেতর।
---ভাইয়া ফার্মেসির দোকানে যাবে। তুমি যতদ্রুত রেডি হও।
---ওকে,,
---আল্লাহ্ হাফেজ।
---আল্লাহ হাফেজ,,,।
.
নিশাত ফোনটা রেখে দ্রুত ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
.
ফারহান চট করে চা বানিয়ে নিয়ে আসে।
এক কাপ মাকে দিয়ে ফারহান নিজে এক কাপ নেয়। তারপরে এক কাপ টেবিলে রেখে দেয়।
---আম্মু ভাইয়াকে চা দিতে বলনা,,।
---আম্মু কোন চুন্নিবিল্লির জন্য চা নাই।
---আম্মু কি বলছে এসব,,,
---হয়ছে হয়ছে এবার থাম। ফারহান মজা করছে। তোকে ছাড়া কখন নিজে খেয়েছে।
---এখন তো ঠিকি খাচ্ছে।
---তোর সাথে মজা করছে বলে।
---আমার চা খেতে হবে না। তোমার ছেলের চা তুমি খাও,,,
.
কথাটা বলতে বলতে চৈতী বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
---ফারহান দিয়ে দে চা। রেগে গেলে তুই কষ্ট পাবি তখন।
---এই নি চুন্নিবিল্লি তোর চা,,,
---খাব না,,, (অভিমানি সুরে)
---খাবি না,,,
---নাআআআআআ,,,,
---আমি খাব কি,,,
---খাইলে তোর খবর আছে।
---হাহাহাহা,,,
---আবার হাসোস,,,
.
ফারহান চৈতীকে রাগানোর জন্য বিকট আওয়াজে হাসতে থাকে।
----হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা,,,, হিহিহিহিহিহি,,,
---মুখ বন্ধ কর। না হলে মশার দল ঢুকে যাবে দলবল সহ।
---আম্মু টাকা দাও,,,
---আমার রুমে আয়।
.
মমতা রহমান ছেলেকে নিয়ে রুমে যায়। ঔষুধ আনতে হবে। দুপুরে ফারহানের বাবাকে আনতে বললে মনে না থাকায় আনে নাই। তাই ছেলেকে দিয়ে ঔষুধের জন্য ফার্মেসি দোকানে পাঠানো হচ্ছে।
.
.
মাজেদা বেগম মেয়েকে সাজগোজ দেখে বলে উঠলো,
---কি রে তোর কি হয়েছে,,,? ইদানিং খুব সাজগোজ করছিস,,। কোথাও বের হচ্ছিস নাকি,,?
---আম্মু আমাকে কেমন দেখাচ্ছে।
.
নিশাত কানে দুল পড়তে পড়তে আয়না থেকে পিছন ফিরে তাকায় মায়ের দিকে।
মেয়ের ওমন কথা শুনে কিছুই বুঝতে পাড়লো না। মেয়েটার কি যে হয়েছে,,,হঠাৎ করে সাজগোজ করে বের হয়।
---তুই তো এমনিতে সুন্দরী। এই কথাটা কি আবার বলতে হয়।
---আম্মু যেটা বলছি সেটা বলো না প্লিজ,,,। আমাকে কেমন লাগছে,,,?
---বাহ্ আজকে সত্যি সত্যি পরীর মত লাগছে।
---আম্মু টিঁপের পাতা কোথায়,,,?
---নিশাত তুই তো ফেলে দিলি সেদিন। হাদিস শুনে বললি, আম্মু টিঁপের পাতা ফেলে দিবা আজকে। তোমার দিতে হবে না। আমি এখনি দিচ্ছি।
---ওহ্! আমার মনে নাই আম্মু। যে, টিপ ব্যবহার করা ইসলামে হারাম।
---তা কোথায় যাচ্ছিস,,,?
---এসে বলবো। আল্লাহ হাফেজ।
---ছাতাটা নিয়ে যা। কখন যে বৃষ্টি নামবে সেটার ঠিকঠিকানা নেই।
.
কথাটার শোনার আগে নিশাত রুম হতে বের হয়ে যায় দ্রুত।

নিশাত হাতে থাকা ফোনটা অনেক বাজার পর রিসিভ করলো,
---হ্যালো,,,।
---কতবার ফোন দিচ্ছি তোমাকে দেখ তো,,।
---আরে আম্মু ছিল পাশে, তাই ধরতে পারি নাই। আচ্ছা বাদ দাও,,, তোমার ভাইয়া কোথায়?
---রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।
---মানে,,, বাইক নিয়ে যাচ্ছে না।
---না,,। বাইক নিয়ো গেলে তোমাকে নিয়ে যাবে বল। আর বাইকের কি যেন সমস্যা হয়েছে। কাল আনবে।
---ও আমার খেয়াল ছিলনা।
---একদম উল্টাপাল্টা কিছু কর না আবার।
---এসব কি বল,,।
---আরে নিশাত বলছি, উল্টাপাল্টা মানে, ভাইয়ার অপছন্দীয় কিছু কর না।
---ও,,, আমি,,, আচ্ছা যাইহোক আমি ফোন রাখছি।
---দেখে যেও,,,
---হুম,,
.
ফোন কেটে চৈতী মনে মনে বলে উঠলো, আল্লাহ তায়ালা ভালো জানে কি ঘটবে ।
.
নিশাত গেট দিয়ে বের হয়ে দেখে যে ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। বোধহয় গাড়ির জন্য। আমি একটু ভাব নিয়ে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে রইলাম।

ফারহান পাশে তাকিয়ে দেখে নিশাত। ফারহানের তাকানো দেখে নিশাত একটু ভাব নিয়ে ফোনটা বের করে।
মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দরী। একদম পরীর মত। চোখে গাড় কাজল,,। মিষ্টি কালার শাড়ি,,। কানে, হাতে, ম্যাসিং করে দুল, চুড়ি পড়েছে। গলায় শুরু চেন। দেখতে একদম পারফেক্ট। যে কেউ প্রেমে পড়বে। না,না আমি এসব কি ভাবছি,,!
---এই যে মিঃ হা করে তাকিয়ে কি দেখছেন,,,? বুঝি সুন্দরী মেয়েদের এমন ভাবে তাকিয়ে থাকেন,,?
.
নিশাতের কথায় ফারহান একটু লজ্জায় লাল হয়ে যায়। সেটা দেখে নিশাত মুখ টিপে হাসছে।
---হ্যালো মিঃ,,,কি ভাবছেন হুম,,?
---কিছুনা,,, (একটু দ্রুততায় বললো ফারহান।)
---ও,,,আচ্ছা,,,
.
ফারহান আর কিছু বললো না। সে আর নিশাতের দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকালো। নিশাত সেটা দেখে আরও মুখ চেপে হাসলো। একটা ছেলে কতরকম,,!
.
৫ মিনিট হয়ে গেলো কোন রিক্সা নেই। কি আশ্চর্য ব্যাপার,,! কোন কোন সময় একটু পর পর গাড়ি আসে। আজ কোন গাড়ি নেই। নিশাত গাড়ি না থাকায় নিশাতের ভালো লাগছে । খারাপ না। ফারহানকে ভালো করে দেখছে কাছে থেকে।

ফারহান মনে মনে বলে উঠলো, মেয়েটা কি বজ্জাত রে বাবা। সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছে। আর আমি একটু তাকিয়েছিলাম আর তখন কি বললো,,,
---এই যে মামা,,,,
---এই যে মামা,,,
.
একটা রিক্সাওয়ালাকে দেখে দুজনে একসাথে বলে উঠে। রিক্সাওয়ালা গাড়ি থামালো সেখানে।
ফারহানের কাছে থামাতে ফারহান আগে উঠলো। নিশাত এগিয়ে এসে বললো,
---ওইদিকে সরে বসুন,,
---সরে বসুন মানে,,,?
---আমি রিক্সাতে যাব,,,
---হোয়াট,,,
---যেটা শুনেছো সেটাই বলেছি,,,। সরে বসুন।
.
কথাটা বলতে বলতে নিশাত রিক্সাতে উঠে পরে। ফারহান বাধ্য ছেলের মত সরে বসে। নিশাত রিক্সাওয়ালা চাচাকে বললো,
---এই মামা চলুন,,,
.
পাশ থেকে ফারহান বলে উঠলো।
---মামা যাবেন না।
---যাবেন না মানে।
---আমি তোমার সাথে যাব না। আমি একাই যাব।
---আমার সাথে যাবে না মানে।
---তুমি একা যাও,,,আমি রিক্সা ডাক দিয়েছি সো আমি একাই যাব।
---কিহ্ আমি ডাক দেই নি। আমি আগে ডাক দিয়েছি। সো আমি যাব।
---নো, আমি আগে ডাক দিয়েছি।
---নো,, আমি,,
---নো,,
---আচ্ছা ঠিক আছে দুজন একসাথে যাব।
---না,,। আমি কখন তোমার মত মেয়ের সাথে যাব না।
.
দুজনের ঝগড়া দেখে রিক্সাওয়ালা বলে উঠলো,
---আম্নেরা ঝগড়া কইরেন না।
---দেখছেন মামা। আমি আপনাকে প্রথমে ডাক দিয়েছি না,,?
---মামা আমি প্রথমে ডাক দিয়েছি না বলেন,,,?
---দুজন তো একসাথে ডাক দিলেন। কেডা আগে ডাক দিল বুঝবার পারি নাই।
---আমি আগে দিয়েছি,,।
---না, আমি দিয়েছি।
---ঠিক আছে,,একটা কাম করেন। দুইজনই চলেন।
---মামা যাব না।
---ক্যান,,? ম্যাডাম আপনের কিডা হয়।
---কিচ্ছু হয় না। আমাদের ভাড়াটিয়া,,।
---মামা ওর কথা বিশ্বাস করবেন না।
---আপনাদের কতা কিচ্চুই বুঝতাচি না,,,। আপনি বলছেন, ভাড়াটিয়া আর ম্যাডাম বলছে বিশ্বাস করবেন। হত্যি কইরা কন তো ম্যাডাম,, স্যার আপনের কে হয়,,?
---আমার বর,,,,
.
মুখ ফোঁসকে কথা বের হয়ে যায় নিশাতের। ফারহান অবাক হয়ে যায় কথাটা শুনে। নিশাতের দিকে রেগে তাকাচ্ছে। নিশাত একটু অবাক হয়েগেছে। কিন্তু, ফারহানের রিয়াক্ট দেখে হাসি পাচ্ছে খুব। ফারহানের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে রেগে যাচ্ছে। মনে মনে কিছু বলছে।
---আপনের স্বওয়ামি (স্বামী) হয়। তা ঝগড়া করছেন ক্যান।
---আর কইয়েন না মামা। নতুন নতুন বিয়ে হলে আধটু তো মানঅভিমান হয় তাই না।
---হ,,! এটা তো হওয়ারি কতা। নতুন নতুন সবার হয় ম্যাডাম।
---তাই এখন ভাব করছে যে আমি তার কিছুই হই না। আমি বাড়ি চলে যাব কাল দেখ। আর কখনও আসবো না।
.
নিশাতের কথা শুনে ফারহান শুধু রেগে যাচ্ছে। মিথ্যে অভিনয় ভালো করতে পারে দেখছি।
---আর মন খারাপ কইরেন না। সব ঠিক হয়ে যাইবোগা। ছেলে মানুষ এরকমই হয়। আমিও এরকম ছিলাম। আপনেরা বসে থাহেন। কন কোনহানে যাইবেন। সেহানে নিয়া যাই।
.
---ফার্মেসির দোকানে।
রিক্সাওয়ালা গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
নিশাত মনে মনে মহা খুশি। স্বপ্ন নাকি ব্যস্তব। সেটা বোঝার জন্য চিমটি কাটলে। চিমটি একটু জোরে হওয়াতে ব্যথা একটু শব্দ করে উঠে।
---কিচু হয়চে,,,
---না মামা কিছুনা।
---ও বুঝেছি। বোধহয় স্যার চিমটি মেরেছে।
---না মানে,,,
---আর কইতে হইবো না ম্যাডাম। এরকম আমিও করেচি।
.
নিশাত মনে মনে হেসে শেষ।
ফারহান রেগে ফায়ারিং। সবাই মাইয়া মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করে। ক্যান পুরুষ মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করতে পারিস না। পুরুষ মানুষ কি মিথ্যে বলে। মনে মনে অনেক কিছু বলে।
.
সারা রাস্তা আর কোন কথা বললো না কেউ। শুধু টুকটাক রিক্সাওয়ালার সাথে কথা বলেছিল নিশাত।
ফার্মেসির দোকানে গিয়ে থামে। রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে বিদায় দিতে গেলে নিশাত দিতে দেয় না। কারণ, রিক্সাওয়ালা যতক্ষণ আছে ততক্ষণে নিশাত একটু আস্থা পায়।
---কি হলো তাড়াতাড়ি যাও। মেডিসিন নিয়ে আসো। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। আকাশে মেঘ জমছে।
.
ফারহান কিছুই বলতে পাড়ছেনা রিক্সাওয়ালার জন্য। না পড়ছে কিছু বলতে,,। না পড়ছে রাগ দেখাতে। তাই বাধ্য ছেলের মত ফার্মেসির দোকানে চলে গেলো। এদিকে নিশাত রিক্সায় চড়ে বসে আছে। রিক্সাওয়ালা বেশ মজার মানুষ।
.
এশারের আজান শোনা যাচ্ছে। মুয়াজ্জিন সাহেব মসজিদের মাইক দিয়ে আজান দিচ্ছে।
মুসলিম নর-নারি কে নামাজের দাওয়াত দিচ্ছে মুয়াজ্জিন সাহেব। কল্যাণের দিকে আহ্বান করছে।
.
নিশাত ফোনের দিকে তাকালো, ১০ মিনিট হয়ে গেলো। তবুও আসছেনা।
---ম্যাডাম একটা কতা কইতে চাইলাম,,,?
---কি কথা মামা,,।
---আপনেরা কি কি যেন বলে,,, ইস মনে পড়তাচে না।
---লাভ ম্যারেজ,,,
---হ,, হ। আপনেরা লাভ ম্যেরেজ কইরা বিয়া করচেন।
---কেনো মামা,,?
---আপনেগরে ঝগড়া দেইহা মনে হইলো,,,।
---ও। হুমম।
.
নিশাত আবারও ফোনের দিকে তাকালো। ১৭ মিনিট হয়ে গেলো। কি করে উনি,,,?
---ম্যাডাম, স্যারকে ডাইহা নিয়ামু।
---না মানে,,
---আমি বুঝবার পারচি। ও কোন ব্যাপার না। নতুন নতুন এরহম অভিমান হয় এতটু,,, খারান আমি ডাইকা আনি,,,
.
কথাটা বলতে বলতে ফারহান বিষাধভরা মন নিয়ে চলে এলো। মন বার।
---উঠে পড়। যেখানে যাও সেখানে লেট কর। উঠ,,,
.
ফারহান দাঁতে দাঁত চেপে তাকালো। নিশাত অন্যদিকে তাকালো। রিক্সাওয়ালা তাকাতে ফারহান রিক্সাতে উঠে পড়ে। তখন রিক্সাওয়ালা চলতে থাকে।
.
নিশাত মনে মনে বলে উঠলো বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না। হলে হোক। যদিও ফারহানের মনের ভেতর জায়গা হয়।
নিশাত একটা কথা বলছেনা। ফারহান তো প্রথম থেকে মুখ বন্ধ। শুধু মাঝেমধ্যে রিক্সাওয়ালা কথা বলছে।
.
আকাশে মেঘ জমে গেছে। আকাশ কালো মেঘেরঘটা হয়েছে । মাঝেমধ্যে মেঘেরডাক ভেসে আসছে। রাস্তায় বেশি গাড়ি নেই। হঠাৎ একটা দুইটা,,,
ফারহান কিছুটা অস্বাভাবিক হয়ে আছে। কারণ, বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর হবে এটা নির্ঘাত। সেটা তো নিশাত জানে না।
হালকা বাতাস বয়ছে। ঠান্ডা বাতাস। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যে মুশাল দ্বারা বৃষ্টি হবে। যাই হোক বৃষ্টিতে ভিজতে পাড়বো। ফারহানকে কি বলবো, তুমি কি বৃষ্টি পছন্দ কর। নাকি বৃষ্টিতে ভিজতে বেশি পছন্দ কর।
---তুমি কি বৃষ্টি পছন্দ কর,,,।
.
ফারহান নিশাতের দিকে তাকায়। মেয়েটাকে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে বেশি সুন্দরী লাগছে। পাশে বসে আছে সেটার কোন লক্ষ নেই মনে হচ্ছে।
---এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো,,,? বল,,,!
---হুম বৃষ্টি পছন্দ করি।
আর কিছু বলার আগেই আকাশ জোড়া মেঘ আমাদের ভাসিয়ে দিল। রিক্সার হুড তুলতে তুলতেই ভেজা কাক হয়ে গেলাম। আজ বোধয় মেঘেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরো শহর টাকে ভাসিয়ে দেবে। সাথে আমাদেরও। রিক্সাটা থামিয়ে একপাশে ১টা গাছের নিচে নিয়ে আসলো রিক্সাওয়ালা। আমি হটাৎ নেমে পড়লাম রিক্সা থেকে। ফারহান অবাক-

“এই মেয়ে কি করছো......”

“চল বৃষ্টিতে ভিজি......প্লিজ।” ফারহানকে কিছু বলতে দিলনা নিশাত। সাথে সাথে ফারহান এক চিলতে হাসি দিয়ে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিল। ওর এই হাসিটা দেখলে কেমন যেন অসাড় লাগে। কেন যেন বারবার ওর এই হাসিমুখটা দেখতে ইচ্ছা করে। আমাকে অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও আমার সামনে হাত নেড়ে বলল “হ্যালো ... কি হল!” ভাগ্যিস ওর পেছনে একটা পিচ্চি ছেলে কদম ফুল বিক্রি করে বাসায় যাচ্ছিল। আমি ওকে সেদিকে ইশারা করলাম।

“এক মিনিট। আমি যাবো আর মহারানীর চরণের পুষ্পার্ঘ্য নিয়ে আসব” এই বলে ধ্রুব পেছন ঘোরার আগেই আমি বললাম “এই তোমার ঔষুধ কোথায়?
ফারহান মিষ্টি গলায় বললো,
---ঔষুধ সেভ যায়গায় আছে। পলিথিন দিয়ে নিয়েছি।
---“তাই কি......?”( ফারহানের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম।)
---আমি যাব আর আসব,,, । (” ফারহান খুব তাড়াতাড়ি বলে ফেলল।)
.
ফারহান দৌড়ে গিয়ে পিচ্চি ছেলের কাছ থেকে ফুল কিনে আনে।
---এই নাও ফুল,,। তোমার জন্য।
.
আমি ওর হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে শুরু করলাম।
কিছুদূর গিয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে বললাম “কি হলো ওখানে দাঁড়িয়ে গেলে। এখন আমি একাই বাসায় যাব? আমার হাতটা ধরে হাঁটে বে না......”
.
ফারহান দৌড়ে আমার কাছে এলো। আমি মিষ্টি হেসে দিলাম।
ফারহান আমার পাশে হাঁটতে থাকে। কি অদ্ভুত ছেলেটা। কত লাজুক,,! কত দুষ্ট,,! কত রাগি,,,! কত ভালোবাসা,,,! কত মায়া চোখে, মুখে,,! সব মিলিয়ে পারফেক্ট ছেলে,,,,

ফারহানের মাথাটা তুলে ভেজা চোখে ওর সেই অদ্ভুত হাসিটা আবার হাসল। আমি আবারো অসাড় হয়ে গেলাম। ভালবাসা কি সবাইকেই এমন অসাড় করে দেয়..................??????????!!!!!!!!!
.
.
.
চলবে,,,,,,

No comments:

Post a Comment