Wednesday, August 21, 2019

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম (১৮ তম পর্ব)

ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে।এ বৃষ্টি কখন থামবে কে জানে।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।ক্ষণিক বাদেই নিচে নেমে এলো নিশাত ।

কিছুই ভালো লাগছে না আজ নিশাতের! ক্লাসের একগাদা কাজ! মাথাটা ঝিমঝিম করছে ভীষণ! এক কাপ কফি পেলে মন্দ হতো না।
---আম্মু,,, ও আম্মু,,,
.
কোন সারা শব্দ পেল না নিশাত। হয়তো ওয়াশ রুমে গেছে। যাহোক, নিশাত আর ডাক দিলনা। ক্লাসের একগাদা কাজ নিয়ে টেবিলে বসে পড়লো।

এতো লেখা আর প্যাক্টিস করতে একটুও ভালো লাগেনা। রুলটা নিয়ে কিছু কাগজ তৈরি করলো। এর মধ্যে মাজেদা বেগম রুমে এলো। রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলো,
---কি রে নিশাত আমাকে ডেকেছিস?
.
নিশাত মন ভার করে মায়ের দিকে তাকালো। কিছু না বলে আবার লিখতে শুরু করলো। মাজেদা বেগম বুঝতে পারলেন মেয়ের মন খারাপ।
---এক কাপ কফি বানিয়ে এনে দেব।
---উমমম দিলে ভালো হয় আম্মু,,। (লেখতে লেখতে)
---আচ্ছা আমি চটপটে ২ কাপ কফি করে এনে দিচ্ছি।
.
কথাটা বলে মাজেদা বেগম চলে গেলো কফি বানানোর জন্য। এদিকে নিশাত টেবিলে বসে একগাদা কাগজ নিয়ে বসে লেখালেখি করছে বিষ্মতা মনে।
.
একটু পর মাজেদা বেগম চলে এলেন গরম গরম দুকাপ কফির নিয়ে।
নিশাতকে এক কাপ দিয়ে নিজে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে এসে বসে পড়লেন মেয়ের পাশে।
---কি রে কফি খা,,। গরম গরম খেলে মজা পাবি। ঠান্ডা হলে আর পাবিনা সে স্বাদ ও মজা।
---জানো আম্মু। কাল ক্লাসে কত কাজ দিছে। (মুখটা ভার করে)
---ভার্সিটিতে না গেলে এরকম কাজতো ভিড় ভাগবে তাই না। এখন তো ঠিকমত ভার্সিটিতে যেতে চাস না। কেনো,? কিছু হয়েছে?
.
মায়ের কথাটা শুনে নিশাত তাকালো মায়ের দিকে। এমন প্রশ্ন কেনো করছে? আর প্রশ্ন করা স্বাভাবিক। ঠিকমত ভার্সিটিতে না গেলে এরকম তো হবে। মা তো ঠিক বলেছে।
---কি রে। কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস,,। কিছু হয়েছে কি বল? যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে আমাকে বলে ফেল। দেখবি মনটা ফ্রেস থাকবে আর অনেক ভালো লাগবে।
---একটা কথা বলবো আম্মু রাগ করবেনা তো।
.
মেয়ের এরকম প্রশ্ন শুনে যতটা অবাক হয়েছে। তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে নিশাতের তাকানো আর কথা বলার ভাঙ্গবংগি দেখে।
---আরে রাগ করবো কেনো বল। আর কেনো রাগ করবো আমি। শোন, আমি তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড। নির্ভয়ে আমাকে বল।
---আসলে আম্মু,,, আমি একজনকে খুব পছন্দ করি। আর অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।
.
মাজেদা বেগম অবাক হয়ে যায় কথাটা শুনে। গ্রেজুয়েশন কম্পিলিট না করে বিয়ে টিয়ে করবেনা বলার মেয়ের মুখে কি শুনছে।
---কে ছেলেটা? ছেলেটার নাম কি? ছেলেটা কি করে? কোথায় বাড়ি ?
একগাদা প্রশ্ন করে বসে মাজেদা বেগম। এরকম প্রশ্ন দেখে নিশাত অবাক হয়ে যায়!
---আম্মু নাম এখন বলছিনা। তুমি ছেলেকে চেনো। বাড়ি এই শহরে। আর ছেলে কিছু করেনা। বর্তামানে বেকার। জানি না সে কি করবে।
---মানে,,? চাকরি করবেনা?
---জানি না। আর ছেলেটা আমাকে ভালোবাসেনা।
---তাহলে,,।
---আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।
---এসব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে জেরে ফেল। গ্রেজুয়েশন কম্পিলিট কর। তোর পছন্দমত ছেলের সাথে বিয়ে দেব।
---আমি শুধু ওকে চাই আম্মু। অন্য কাউকে না।
---আচ্ছা এখন হাতের কাজটা শেষ করে ঘুমা।
---হুমম।
---আর এক কাপ কফি বানিয়ে দিয়ে যাব।
---না আম্মু লাগবেনা। একটুপর শুয়ে পড়বো। বাকি কাজ সকালে শেষ করবো।
---ঠিক আছে। আমি গেলাম।
.
মাজেদা বেগম কফির মগ নিয়ে চলে গেলো। সে জানে মেয়েকে কিছু বললে পড়াশোনা ক্ষতি হবে। তার চাইতে যখন মনমানসিকতা ভালো থাকে তখন কথাটা বলবো।

নিশাত কিছুক্ষণ লেখে শুয়ে পড়ে। সে খুব চিন্তিত! আব্বু যদি না মেনে নেয়। আর ছেলেটা কে? সেটা জানলে তখন আর না করবেনা।
এলোমেলো চিন্তায় ভরপুর মাথা ভর্তি। এপাশ ওপাশ করে ঘুমিয়ে যায়।
.
.
মিষ্টির আজ বিষন্ন মনে হচ্ছে।

--–মন খারাপ?

মিষ্টির কোনো জবাব নেই।

–--কি হলো? কথা বল। উফ কি গরম রে বাপ!! আইসক্রিম খাবে? নিয়ে আসি?
.
মিষ্টির জবাব নেই।
ফারহান চলে যায় আইসক্রিমের দোকানে। আইসক্রিম নিয়ে আবার চলে আসে রুবাইয়ার কাছে। আইসক্রিম নিয়ে হাজির।

–--এই নে। খা। কিরে ধর!! কতক্ষণ ধরে থাকবো? না খেলে বল, আমিই দুইটা সাবাড় করে দিচ্ছি। হাঃ হাঃ হাঃ

–--তুই আমার বাসায় আর আসিস না। আমার সাথে দেখা করার চেষ্টা করিস না। ফোনে কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করিস না।

গম্ভীর ভাব নিয়ে কথা গুলো বললো মিষ্টি ।
ফারহান তেমন পাত্তা দিলো না। এই আর নতুন কিছু না। মিষ্টি মাঝে মাঝেই এমন করে। আবার ঠিক হয়ে যায়।

–--এই নাও গল্পের বই। তোমার জন্য এনেছি। পড়া শেষে দিয়ে দিবে।

–--না। নিবো না। আমি চাই না তুই বইয়ের বাহানা ধরে আমার সাথে কোনো প্রকারের দেখা করার চেষ্টা করিস। আমি যাচ্ছি। একটা রিক্সা ভাড়া করে দে তো।

ফারহান কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিষ্টি রিক্সায় ওঠে, হুড উঠিয়ে চলে গেলো। ফারহান কিছুই বুঝতে পারলো না। বুঝবে কি করে!! বেচারা মিষ্টির কথাগুলোই যে এখনো হজম করতে পারলো না। বাসে বসে বসে ভাবছে এমন আচরণ করার কারন কি? আমি কি কোনো ভুল করেছি? কেনো এমন করলো? বাসায় গিয়ে ফোন দেবো।

কারও কথায় ঘোর কেটে যায় ফারহানের। ওহ্! রিক্সাওয়ালার কথা শুনে,,।
---মামা আইয়া পড়চি,,। এহুন নামেন। নাকি আরও সামনে লইয়া যাইমু।
---না মামা দরকার নেই।
---আমনের কি মর খারাপ মামা।
---না মামা।
---বহুত দিন পর এই হানে আইলাম আমনেরে নিয়া। তা এহুন তো আইসেন না এই হানে।
.
ফারহান মৃধু হেসে দেয় রিক্সাওয়ালার কথা শুনে। বয়স বেশি না রিক্সাওয়ালার। আগে প্রায় আসতো এখানে আমাদের নিয়ে। মিষ্টির পছন্দের রিক্সাওয়ালা ছিল জামাল মিঞা (রিক্সাওয়ালার নাম)।
---মামা হাঁচ্চা কইরা একটা কথা কইবেন?
.
রিক্সাওয়ালার কথা শুনে ফারহান রিক্সাওয়ালার দিকে তাকালো প্রশ্নের চোখে। সেটা বোধহয় জামাল মিঞা বুঝতে পেরেছে। জামাল মিঞা বলে উঠলো,
---এইভাবে তাকাইয়া আচেন ক্যা মামা। মন কি খুব খারাপ। যদি খারাপ হয় তাইলে কিছু কমুনা।
---না। তুমি বল!
---আসলে কথা হইলো,, রিক্সায় উঠে কি যেন মনে মনে ভাবছিলেন। আমি পিছনে অনেক বার তাকাইছি। আপমনে তহুন বুঝতে হারেন নাই। কিচ্চু হইছে আমনের?
---না। মন খুব খারাপ।
---কেনো কি হইচে। হেই আপা বুঝি আর ফেরত আইসে নাইক্যা।
.
জামাল মিঞার কথা শুনে অবাক হয়ে যায় ফারহান। কি করে একথা জানলো।
---আপনে অবাক হইতাচেন আমার কথাটা হোনার পর।
---হুমম।
---আসলে একদিন আপনেরে কাঁদতে দেখতেছিলাম এইহান থেকে বসে। সেদিন কিচু কইনাই আপনারে। পরে আপনের ফেরেন্ড সায়েমকে জিগাইছিলাম। হেতি কইচে।
---ও,,,তোকে কেনো ভালো লাগে জানিস,,,?
---না মামা।
---তুই খুব ভালো। বিশেষ করে তোর কথা আমার শুনতে খুব ভালো লাগে। কিচ্ছু লুকাতে পারিস না।
---হাঁচ্চা কইচেন মামা। তার জন্য মা আমারে বহুত গ্যাল (বকা) দেয়। আমি আপনেঘোরে মতন চালাক হইতে চাই। কিন্তু, বহুত চেষ্টা করচি। পারিনা। পরে যেমন আচি তেমনি থাহুম।
---আচ্ছা আমি যাচ্ছি। তুই ওই দোকান থেকে যা ইচ্ছে খাবি। আমি যাওয়ার সময় বিল দিয়ে দেব।
---আচ্চাঁ মামা। আর কইতাচি একটু আইগা দেই সামনে,,।
---নারে। তুই যা।
.
জামাল মিঞা রিক্সা রেখে চলে গেলো একটা টং এর দোকানে। আমি তাকিয়ে আছি জামাল মিঞার দিকে। ছেলেটা খুব সহজ সরল। কথাগুলি বেষ্ট মিষ্টি।

আমিও হাঁটা দিলাম রুবাইয়ার দিকে। জামাল মিঞাকে সেই প্রথম দিন বলেছিলাম। এইখানে নামিয়ে দিবি। এই খোঁলা আকাশের নিচে বাতাশের সাথে হাঁটতে খুব ভালো লাগে। তাই ৩ বছর ধরে তাই করে যাচ্ছে।

আগে সপ্তাহে ১ বার বা ২ বার আসতাম এখানো। এখন আর প্রায় ১ ধরে বেশি আসা হয় না।
আমি জামাল মিঞার দিকে একবার তাকালাম। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না কোথায় বসে আছে । বেশ দূরে চলে এসেছি। জামাল মিঞা দোকান্দারের সাথে বিভিন্ন হাসি তামাশা করবে।
.
আমি হাঁটতে চলে এলাম রুবাইয়ার কাছে । আমার দিকে একবার তাকালো পরক্ষণে রাগি চেহারা নিয়ে সামনের দিকে নদী দেখতে থাকে। আমি কিছু না বলে পাশে পেপার রাখা ছিল একটা পাথর দিয়ে রাখা ছিল। যাতে পেপারটা বাতাশের সাথে উুঁরে না যায়।
আমি পেপারটার উপর থেকে ছোট পাথরটা একটু দূরে রেখে পেপার ছড়িয়ে বসে পরলাম। যাতে পাশে রাখা পাথরটা দিয়ে ছোটদের মত খেলা যায়।
আমার বসা দেখে দিগুণ রাগে তাকায়। আর রাগ হওয়া স্বাভাবিক। প্রায় ১ ঘন্টা ধরে এখানে বসেছিল। আমি রুবাইয়ার দিকে তাকিয়ে একটু মৃধু হেসে বলে ফেললাম,,
---Sorry,,, I am really many many sorry,,,
.
কথাটা শুনে সাপের মত ফুঁস করে উঠে।
---এই তুই এতোক্ষন কোথায় ছিলি হে,,,,?আমি সেই কখন থেকে তোর জন্য এই খানে দাড়িয়ে আছি । তুই যানিস আমি এখানে তোর জন্য
কতোক্ষন দাড়িয়ে আছি আর তুই এতোক্ষন
পড়ে এখন আসলি । বল এতোক্ষন কোথায় ছিলি বল ?
.
একদমে এতগুলি কথা বলে ফেললো। আমি শুধু হেসে যাচ্ছি। একদম চেন্জ হয় নাই রুবাইয়া।
---এই তুই দাঁত বের করে হাসবিনা বলে দিলাম।
---ওকে, ওকে স্যরি,,,।
---আবার হাসছিস,,,
---তুই আমাকে কিছু বলতে দিলি এসেছি হতে তুই সেই তোর বকবকানি শুরু করে দিলি । আর দাঁড়িয়ে কোথায় বসেই তো ছিলি ।
---কি আমি বকবকাই খালি ? আমি যে তোর জন্য এই রোদের মধ্যে তাও আবার এই প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেক্ষন।
---তুই সব সময় আমার সাথে এই ভাবে মেঝাজ দেখিয়ে কথা বলিস । কেন তুই আমার সাথে একটু মিষ্টি করে কথা বলতে পারিস না ?
---তোর সাথে মিষ্টি করে কথা বলতে আমার বয়ে গেছে । যাহ আজ থেকে তোর সাথে ব্রেক আপ করে দিলাম বন্ধুত্বতের। যা তোর গার্লফ্রেন্ডকে বল। সে মিষ্টি করে বলবে। আমি না।
---আশ্চার্য ! তুই আমার সাথে এই পাবলিস ঝগড়া কেন করতাছিস । আমার আসতে দেরী হয়েছে , কারন আমার একটু কাজ ছিলো তাই ।
---তা দুই দিন আগে যে দেখা করতে বললি। তখন তো কিছুই বললিনা। এখন কিসের কথা। তোর গার্লফ্রেন্ড যদি জানে। যে, একটা মেয়ের সাথে বসে আছিস। তাহলে নির্ঘাত ব্রেকঅাপ।
---আরে আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই এখন।
---কি বলিস এসব। এতো সুন্দর হ্যান্ডস্যাম ছেলে প্রেম করেনা। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এই নদী তুমি আমাকে ভাঁসিয়ে নিয়ে যাও। নাহলে আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা।
---একদম ফাজলামি করবিনা।
---ওকে যা সব বাদ। কি জন্য ডেকেছিস বল।
---আমাকে একটা মেয়ে পছন্দ করে। ভালোবেসে ফেলেছে ।
.
আমার কথাটা শুনে রুবাইয়া কেমন করে তাকালো আমার দিকে।
ফারহান প্রথম থেকে বলতে শুরু করে,,,,
মেঘ জমে গেছে নিল আকাশের বুকে। ঠাণ্ডা বাতাস ভয়ছে । চারদিকে একদম নিরিবিলি। বাতাশের শব্দ বাদে তাদের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

সব কিছু শোনার পর রুবাইয়া বলে উঠলো,
---দোস্ত দেখ এই ভাবে জীবন চলে না।
---কেন কি ভাবে চলে,,?
---দেখ মেয়েটা তার স্বার্থের জন্যে চলে গেছে। সে নিশ্চই সুখেই আছে আর তুই নিজের জীবনটাকে বরবাদ করে দিচ্ছিস। আর মেয়েটা তোকে ভালোবেসে যাচ্ছে। তুই মেয়েটাকে বিয়ে কর।
---আমি কখনও কাউকে বিয়ে করবো না।
---তুই বুঝতেছিস না কেনো বল,,! যে মেয়েটা তোকে ছেড়ে চলে গেছে তার স্মৃতি মনে করে কেনো বিয়ে করবি না। নিজের জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিস না।
---কই। আমি তো নষ্ট করছিনা। আর বিয়ে না করে ফিলিংস অন্য রকম। একেই বলে জীবন। কোন সাংসারিক মায়া নেই কিছু নেই আহ কি শান্তি।
---তোর ধারণা ভুল রে। আচ্ছা, ধর মেয়েটা তোকে খুব খুব ভালোবাসলো। তুই মিষ্টির মত তাকে ছেড়ে চলে গেলি তখন কেমন লাগবে বল। নিজেকে বুঝতে শেখ।
---এই তুই আমাকে ইমশোনালের কথা শোনাবি না।
---দেখ দোস্ত। এটা ইমশোনালের কথা না। একটা মেয়ে পারে একটা জীবন ছিন্নভিন্ন করতে। আবার তেমনি একটা মেয়ে পারে ছিন্নভিন্ন জীবনটাকে সুন্দর পরিপূরণ জীবন গড়িয়ে দিতে।
---এসব কথা বাদ দে রুবাইয়া,,,আমি যেটা বললাম সেটা করবি কিনা। সেটা বল?
---আমি পারবো না রে। এরকম মিথ্যে অভিনয়ে একটা জীবন শেষ করে দিতে। আমিও একটা মেয়ে। আমি পারবো না। আমার হবু স্বামী জানলে কি হবে বুঝতে পারছিস। দোস্ত Place don't mind...
---তাহলে কি আর করা। নতুন কাউকে বলতে হবে। আমি জেনে শুনে কাউকে এরকম বিপদে ফেলতে পারি না।
---শোন দোস্ত,, মেয়েটা যদি তোর সব কিছু জেনে শুনে তোকে বিয়ে করতে রাজি থাকে তাহলে তুই কেনো পারছিস না।
---নিশাত সব জানে। চৈতী সব বলেছে। তারপরে মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে। সে কি জানে না। আমি তাকে সুখি করতে পারবোনা।
---শোন, তুই যেভাবে ভাবছিস। সেভাবে সে হয়তো ভাবছে না। সে তো এটাও ভাবতে পারে।যে, তুই যেরকম মিষ্টিকে যতটা ভালোবাসতে পারিস। ঠিক ততটা তাকেউ পারবি।
---আমি পারবো কিনা জানি না।
---এটা সিম্পল ম্যান। মিষ্টির সব স্মৃতিপট মন থেকে মুঁছে ফেল। নতুন কাউকে নিয়ে আবার স্বপ্ন দেখ। দেখবি মিষ্টির চেয়ে মেয়েটা তোকে হাজার হাজার গুণ বেশি ভালোবাসবে।
---আমি যে মিষ্টিকে কথা দিয়েছি কখনও তাকে ছাড়া জীবনে কাউকে ঝরাবো না।
.
ফারহানের কথা শুনে রুবাইয়া রেগে যায়।
---তোকে এতক্ষণ এই বুঝালাম। You are,,, (প্রচন্ড রেগে দাঁতে দাঁত চেপে)
---কি হলো বলনা। থেমে গেলি কেনো। বল,,।
---দেখ ফারহান আমি যদি আগের রুবাইয়া থাকতাম। দেখতি কি করতাম।
.
ফারহান বুঝতে পারে রুবাইয়া রেগে গেছে। আর রেগে যাওয়াটা স্বাভাবিক। একটা মানুষকে টানা প্রায় ১ ঘন্টা ধরে শুধু বুঝাচ্ছে, শুধু বুঝাচ্ছে। কিন্তু, ঘুরে ফিরে এক কথা বলে যাচ্ছে ফারহান।
---কি করতি,,?
.
ফারহান কথা বলে ছলছল চোখে রুবাইয়ার দিকে তাকায়। চোখের কোণে পানি জমে গেছে। রুবাইয়া বুঝতে পারলো ফারহান আজ খুব কাঁদবে। ফারহান রুবাইয়ার চুপ থাকা দেখে আবার বলে উঠলো,
---কি করতি রে বল,,,।
---কি করতাম জানিস,,। তোকে জোর করে বিয়ে করতাম। দেখাইয়া দিতাম মিষ্টি নামের মেয়ে বাদে হাজার হাজার মেয়েরা তার থেকে দিগুণ ভালোবাসতে পারে।
---তাই,,,
---হ্যা তাই। দেখতি কত ভালোবাসতে পারে একটা মেয়ে। শুধু ওই সব মিষ্টি নামের মেয়েরা বাদে এরকম হাজার মেয়েরাও পারে ভালোবাসতে।
.
ফারহান অন্য ফিরে চোখের পানি মুঁছে ফেললো। সেটা রুবাইয়া দেখে ফেলে। ফারহান মনে করেছে রুবাইয়া নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আগের মত। কিন্তু, ফারহান রুবাইয়ার দিকে তাকাতে একটু কষ্ট পায়। তার দিকে তাকিয়ে আছে রুবাইয়ার চোখে পানি জমে গেছে।

হ্যা রুবাইয়া আমি জানি তোরাও পারিস। কিন্তু, নিজেকে নিয়ে যখন ভাবি তখন মিষ্টি নামে সেই মেয়েটা তখন চোখের সামনে ভাসতে থাকে। স্বপ্নঘরে যখন নতুন করে স্বপ্নবুনতে চেষ্টা করি। পারি না রে রুবাইয়া।
এটাও জানি তুই আমাকে এক সময় খুব ভালোবাসতি। কিন্তু, আমি ভুল মানুষের প্রেমে আজ জীবনের মোর চলে গেছে অন্ধকার গলির দিকে।
---কি রে বাসায় যাবি না,,,
.
রুবাইয়া ফারহানের কথা শুনে চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু মুঁছে ফেললো। তারপর আস্তে করে বলে উঠলো,
---চল এখান থেকে উঠি,,,,
---হুমম।
---একটা কথা রাখবি,,।
.
ফারহান রুবাইয়ার দিকে তাকায়। ফারহানও জানে কি বলবে রুবাইয়া। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কেউ আমার ভেতর ছুরি দিয়ে ভেতরের কাল্লাহ্ জিব্বাহ্ কেটে দিয়েছে। যার ফলে কোন কথা বের হচ্ছে না।
ফারহানের তাকানো দেখে রুবাইয়া বলে উঠলো,
---মেয়েটাকে ঠকাস না রে। সে সব জেনেশুনে তোর লাইফে আসতে চাইছে । তুই বাধা দিস না। বিয়ের আগে প্রেম না করে একদম বিয়ে করে ফেল। দেখবি তোর সব ভুল ধারণা প্রমাণ হবে।
.
ফারহান শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। এরকম একজন বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। নিজের স্বার্থের জন্য কিছু করছেনা। আমার ভালোর জন্য সব করতে চাচ্ছে।
ভালোলাগা মানুষকে এরকম স্যলিশন কে দিবে। সবাই তো নিজের স্বার্থের জন্য সব করে।
রুবাইয়া আবার বললো,
---দেখ দোস্ত, একটা মেয়ের ভালোবাসা পেলে তুই সব বুঝতে পারবি,,। একটা মেয়ে কতটা ভালোবাসতে পারে। তখন আমার কথা মনে পরবে।
---হুম।
.
ফারহান মাথা দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে সিকার করলো।
---সব মুঁছে ফেল। পরবর্তী জীবন সুন্দর করে সাঁজা। একটা রিকুয়েস্ট রাখিস শুধু,,, এভাবে নষ্ট করিস না জীবনটা। প্লিজ,,,,
.
ফারহান কিছুই বললো না। পাথরের মত জর বস্তুর মত বসে আছে। ফারহান জানে রুবাইয়ার কথাটা ছোট হলে সারমর্ম অনেক অনেক বড়।।
---রুবা চল এখন উঠি। আন্টি অনেক টেনশনে আছে। না বলে বের হইছিস মনে হয়।
---রুবার কথা কি রাখা যায় না রহান।
---দোস্ত এই নামটাও মনে রেখেছিস।
---কেনো, তুই যদি রুবা নামটা মনে রাখতে পারিস। আমি কেনো পারবোনা।
---আন্টি টেনশনে আছে। তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যাবি কিন্তু,,,
---হুমম যাব তো,,, প্রমিস করতে পারলিনা।
---আমি ভেবে জানাবো। আর শোন, তোর বরকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবি কিন্তু,,,।
---হুম,,
.
ফারহান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। রুবাইয়া উঠে দাঁড়ায়। দুজনে উঠে বাসার দিকে রওনা দিয়েছে। কেউ কোন কথা বললো না।

রিক্সাওয়ালার কাছে গিয়ে রিক্সাতে উঠে পড়লো রুবাইয়া। ফারহান জামাল মিঞাকে ডাকতে টং এর দোকানে চলে গেলো।
দোকান্দারকে জামালের খাবারে বিল দিয়ে চলে আসে ফারহান ও জামাল মিঞা। ফারহানের এরকম মন মরা দেখে জামাল মিঞা এক বার জিজ্ঞেস করেছিল,, মামা কি হইচে আপনের। মুখটা শুকনা শুকনা লাগছে। জামালের প্রতিউত্তরে ফারহান, মিথ্যে হাসি দিয়ে বলে,," কিছুই হয়নি রে,, ।
জামাল মিঞা বুঝতে পেরে আর কিছু জিজ্ঞেস করে নাই।
রুবাইয়াকে বাসায় নামিয়ে ফারহান সোঁজা বাসায় এসে রুমে লক করে শুয়ে থাকে।
.
রাত ৭টার সময় টেবিলে গিয়ে পানি খেয়ে আবার রুমে চলে আসে ফারহান।
ফারহানের মন ভয়ানক খারাপ। হঠাত্‍ করে খারাপ হয় নি। প্রতিদিন একটু একটু করে খারাপ হয়েছে। কিন্তু প্রতিদিনের মন খারাপগুলোকে সে মুছে ফেলতে পারে নি। তাই সেই ছোট ছোট মন খারাপগুলো একত্রিত হয়ে এক বিশাল মন খারাপের তৈরি করেছে। আর আজ বেশি মন খারাপ হয়েছে রুবাইয়ার কথাগুলি শুনে । বাসায় এসে অনেক কেঁদেছে ফারহান।

একটু পরে ফারহানকে চা দিয়ে এলো ফারহানের মা মমতা রহমান । ফারহান চোখ মুঁছে স্বাভাবিক হয়ে শুয়ে থাকে কারও আসার শব্দ শুনে। ফারহান চা শেষ করে বলল,
---"আম্মু আজকের চা'টা কিন্তু অসাধারণ বানিয়েছো"।
ছেলের কথাটা শুনে মমতা রহমান বলল,
---"আমি কতকাল চা বানিয়ে খাওয়াবো বল... আমাকে একটু চা বানিয়ে দেওয়ার মতো একজন থাকলে খুব ভালো হতো।
---কেনো আম্মু,,? একটা কাজের বুয়া রেখে দিতে পার। তাহলে আর তো তোমার চা বানিয়ে দেওয়া লাগেনা।
---বুয়া কি রাতেও কাজ করতো বল।
---তা ঠিক বলেছো।
---তোর একটা বউ থাকলে খুব ভালো হতো। প্রতিদিন সকালে, বিকালে এবং কি রাতে এক কাপ করে চা বা কফি বানিয়ে দিত।
---এসব চিন্তাভাবনা বাদ দাও আম্মু।
---তুই একটা বিয়ে কর বাবা।
---আম্মু,,,
---নিশাত মেয়েটা খারাপ না বাবা। একদম রুপ দেশের রাজকন্যার মত দেখতে। লক্ষির মত।
---আম্মু,,,আবার,,,
---ভেবে দেখিস ।
.
কথাটা বলে মমতা রহমান রুম থেকে চলে গেলো।
ফারহান আনমনে ভাবতে থাকে মায়ের কথাটা।
.
.
টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে সাথে হালকা বাতাস। ভার্সিটিত থেকে বাড়ি ফিরছে নিশাত ।
বাসায় আশা মাত্র বৃষ্টি আকাশ ভেংগে পড়তে আরম্ভ করে দিয়েছে।
রুমে এসে বারান্দায় চলে গেলো। বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা পানির ছিঁট এসে চোখে, মুখে, হাতে ও শরীরে পড়ছে। কেমন অনুভুতি সৃষ্টি হচ্ছে।
নিশাত কি যেনো ভেবে বারান্দা থেকে চলে গেলো মায়ের রুমের দিকে।

মায়ের রুমের দরজার ভেতর দাঁড়িয়ে বললো,
---আম্মু,,,
.
মেয়ের কথাটা শুনে চোখাটা খুলে দেখে নিশাত দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে।
---কিছু বলবি মা।
---হুমম।
---বল,,,
---আমি ছাঁদে গেলাম।
---এখন তো বৃষ্টি হচ্ছে।
---সেই জন্য তো যাব। আজ বৃষ্টিতে ভিজবো।
---এই একদম বৃষ্টিতে ভিজবি না। সেদিন ভিজে শরীরে জ্বর বেধে ছিলি। আজ বৃষ্টিতে ভিজতে হবেনা। যা রুমে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখ। ভিজতে হবেনা।
---আমি ছাঁদে চলে গেলাম।
---নিশাত,,,
.
কে শোনে কার কথা। নিশাত কথাটা বলে দৌড়ে চলে যায়।

No comments:

Post a Comment