Wednesday, August 21, 2019

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম (১৭তম পর্ব)

সন্ধ্যার পর আরেক দফা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মমতা রহমান খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা করেছেন। সঙ্গে আছে তার নিজের হাতে বানানো আমের আচার। মিজান সাহেব আম পছন্দ করেন বলে বিয়ের পর থেকেই মমতা রহমান আমের সিজনে প্রায় প্রতিদিনই বাসায় আসার সময় আম নিয়ে আসেন মায়ের বাড়ি থেকে। বছরের এই সময়টায় প্রচুর আম পাওয়া যায়। অনেক বছর আগে এমনই একটি রাতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে খেতে বসেছিল। সবাই অনেক কিছু বলাবলি করেছিল।

কিন্তু আজকে সবাই চুপচাপ। একমনে ইলিশ মাছ আর আচার দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে যাচ্ছে। মমতা রহমান প্রথম মুখ খুললেন, ‘
---আমার মনে হয় সুমনকে একটু বলে দেখতে পারি। ও একটু খোঁজ নিয়ে দেখুক, আসলেই রকি অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে কিনা।’
.
মমতা রহমানেে কথায় মনে হয় সবারই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সুমন ওদের ছোট মামা। পেটে জিলিপির প্যাঁচওয়ালা মানুষ। প্যাঁচ নিয়েই তার কারবার। এ কারণে নিজের সংসারটাও টেকাতে পারেনি। প্যাঁচ সৃষ্টিকারী মানুষরা যখন যেখানে থাকে, সেখানেই প্যাঁচ বাঁধায়; এমনকি নিজের সংসারেও। দেখা গেছে, সংসারই হয় তাদের প্রথম টার্গেট। তাদের মূলমন্ত্রই মনে হয়, ‘প্যাঁচিং বিগিনস অ্যাট হোম’! তবে তারা শুধু প্যাঁচ সৃষ্টিই করতে পারে, প্যাঁচ ছাড়াতে আর পারে না।
চৈতী বলল,
---‘ওনার কথা বোলো না তো, মা। যে কয়টা কথা বলে, সব ফালতু কথা! মামার সঙ্গে কথা বলতেও আমার কেন জানি ভালো লাগে না।’
ফারহান মুখ খুলল, ‘
---আমি বুঝি না, সামান্য একটা জিনিস নিয়ে তোমরা না,,,,।
---ভাইয়া এইটা সামান্য জিনিস বলছিস,,! একটা সংসার গড়তে কত কষ্ট,,? তা তুই বুঝবিনা।
মিজান সাহেব বেশ রেগেই গেলেন।
---এই তোরা কি ঝগড়া করবি নাকি খাওয়া দাওয়া করবি,,। (ধমকের সুরে)

সবাই একদম চুপ মেরে যায়। কারণ, মিজান সাহেব বেশ শান্ত সুস্থ মানুষ। কথার চেয়ে কাজ বেশি করতে পছন্দ করেন। নাহলে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে নামি দামি অফিসার থাকতে তাকে "মিজান সাহেব অফিসাকে " সম্মান পদক দিত না সরকার। তাকে এক নামে চেনে সৎ পুলিশ অফিসার।

তিনি লক্ষ করলেন কেউ আর কোন কথা বলছেন না। যার যখন যা লাগে সেই কথাটা ব্যতিত অতিরিক্ত কথা বলছেনা। এবং কি, মমতা রহমান কোন কথা বলছেন না। তাই তিনি এবার মুখ খুললেন,,
---ফারহান,,।
---জ্বী আব্বু,,।
---তোমার চাকরির ইন্টারভিউ এর খবর কি,,?
---জ্বী ভালো,,।
---কোন কিছু বলেছে,,?
---না। তবে আশা রাখি ইনশা আল্লাহ্! আমি চান্স পেয়ে যাব।
---তোমার কথাটা ঠিক বুঝলাম না ফারহান,,? চান্স পেয়ে যাব ইনশা আল্লাহ্!
---আমার মত অনেক জন ইন্টারভিউ দিয়েছে। মোট ২৫ জন এর উর্ধে হবে। আমার যেরকম রেজাল্ট সেরকম রেজাল্ট ১ জন আছে।
---ও,,,। এই মমতা আর দিয় না আমাকে,,। চৈতীকে আর ফারহানকে দাও,,,।
---না আব্বু আমি আর পারবোনা। (চৈতী)
---আম্মু আমাকে সামান্য আঁচার দাও,,,(ফারহান)
.
মমতা রহমান ফারহানকে আর একটু আঁচার দিল।
মিজান সাহেব আবার বললো,
---তা কতজন নিয়োগ দিয়েছে,,?
---জ্বী আব্বু ৫জন,,।
---তাহলে তো তুমিও টিকবে আশা করি আল্লাহুর রহমতে।
---জানি না।
---বুঝলাম না তোমার কথা,,? তুমি ইন্টারভিউ দিয়েছো বুঝতে পারবেনা।
---আসলে,,, এমডির পরের পদ না পেলে চাকরি করবোনা। আর একটা ছেলে আছে এমডি স্যারের আত্মীয়। তাই কনফিউশন আছি। কিন্তু, কম্পানির চেয়ারম্যান বোধহয় তাকে সিলেক্ট করবেনা। কারণ, আপনাকে নাকি উনি চেনে।
---কি নাম ওনার,,?
---কি যেন নাম মনে পড়ছেনা,,ওহ্ মোঃ ইনতিসার হোসেন তুহিন।
---তুহিন,,।
---আপনি কি ওনাকে চেনেন,,?
---হুমম। এক সময় বন্ধু ছিল। কিন্তু, আমি ঢাবিতে আর তুহিন কুয়েটে চান্স পায়। বেশ কিছুদিন দেখা হয়েছিল। পরে আর দেখা হয় নাই কোনদিন। কিন্তু, তুহিন আমাকে মনে রেখেছে শুনে খুশি হয়েছি। আর দেশের কাজ করতে নিজের পরিবারকে ভুলে গেয়েছিলাম।
---এখন ভাগ্য ফেভার করবে।
---তোমার যদি চাকরি পছন্দ হয়। তাহলে আমি কথা বলে দেখতে পারি।
---জ্বী বলতে পারেন।
.
মমতা রহমান পাশ থেকে বলে উঠলো,
---ফারহান আরও কি আঁচার দেব।
---না আম্মু। অনেক খেয়েছি। আর পারবোনা।
---ঠিক আছে নিয়ে গেলাম তাহলে,,,।
.
মমতা রহমান আঁচার নিয়ে রেখে দিল। চৈতী খাবার খেয়ে রুমে চলে যায়। ফারহানও খাবার খেয়ে রুমে চলে যায়।
মিজান সাহেবের কথার মাঝে কেউ কথা বলতে সাহস পাই না। একমাত্র মমতা রহমান ছাড়া।
পৃথিবীর সবাই বউকে একটু বেশি ভালোবাসে,,,!
.
ফারহান রুমে এসে ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুয়ে পড়ে।

এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু ঘুম তো সহজে আসেনা। আর ঘুম চোখে না আসলে শুধু নিশাতের সেই পাগলামির কথা মনে পড়ে যাই।
.
.
এভাবে কেঁটে যায় দুদিন,,,
ফারহানের মোবাইল বেজে যাচ্ছে।

--–হ্যালো।
---হ্যালো,,।
---বল।
–--তুই বিকেলে আসতে পারবি?

ওপাশ থেকে রুবাইয়া বললো।

--–অবশ্যই পারবো। বান্দা এনিটাইম হাজির। কখন আসতে হবে জনাব?

–--বিকেল ৫ টার মধ্যে।

–--ওকে। আইএম কামিং মাই ডিয়ার।
---ফাজলামি বাদ দে তো,,।
---আরে দোস্ত সত্যি আসবো,,।
---বিকেল পাঁচটা…. আমাদের সেই পুরানো আড্ডার ওখানে,,।
---ওকে,,,।
---ও হ্যা ভুলে গিয়েছিলাম। কেমন আছিস,,,?
---আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো,,। তুই?
---আলহামদুলিল্লাহ্ আমিও ভালো,,। আংকেল আন্টি কেমন আছেরে?
---আলহামদুলিল্লাহ্ সবাই ভালো,,,। তোদের বাসার সবাই কেমন আছে?
---আল্লহুর রহমতে ভালো,,,।
---কি করস এখন,,?
---একটু বের হবো,।
---কোথায়?
---পাত্রি দেখতে,,!
---তাই নাকি রে,,,। তা কোথায়? আর কোন ক্লাসে পড়ে,,?
---আরে তুই সিরিয়াসলি নিচ্ছিস নাকি,,,। হাহাহাহা,,।
---তুই একটু পাল্টাবিনা রে,,,।
---মাঝে মাঝে আগের মত হয়ে যাই,,,। কিন্তু, এখন পুরো চেন্জ।
---তাই নাকি,,,।
---হ্যাঁ,, তুই আমাকে দেখলে আর কিছু টাইম কাটালে বুঝবি,,,।
---তাহলে বিকালে দেখা হচ্ছে। কেমন চেন্জ হইছিস,,,।
.
এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলতে থাকে ফারহান আর রুবাইয়া। অনেক দিন পর কথা বলছে দুজন। কত ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল, এখনও আছে। কিন্তু, মাঝ পথে থেমে যাওয়ার মত ছিল। পরে এক সময় বলবো সেসব কথা। এখন আমাকে বের হতে হবে।
.
.
সারাদিন ঝাঁ-ঝাঁ রোদ ছিল। অথচ সন্ধ্যা মেলাবার আগেই মেঘ জমে আকাশ কালো হয়ে গেল। আমজাত সাহেব মাজেদা বেগম ও নিশাতকে নিয়ে রাস্তায় নামতেই ফোঁটা-ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল। আমজাত সাহেব বললেন,
---বৃষ্টি হলে বাঁচা যায়, কি বল ?

মাজেদা বেগম বললো,
---বৃষ্টি হলে ভালো হয়। কিন্তু, বাসায় পৌঁছানোর পর হলে বেশ ভালো হতো।
পাশ থেকে নিশাত বলে উঠলো,
---আব্বু আম্মু কিন্তু ঠিক বলেছে। এখন বৃষ্টি নামলে কোথায় দাঁড়াবো।
---তা ঠিক বলেছিস মা।
---জ্বী আব্বু,,।
.
পাশ থেকে নিশাতের মা হুট করে বলে উঠলো,
---এই তোমার তো আবার বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লে জ্বর এসে যাবে রাতে। এই ছাতাটা তুমি নাও।
---আরে সমস্যা নেই। আর ছাতা পেলে কোথায়?
---আর বল না বড় আপা দিয়ে দিল।
---নিশাত আর তুমি মাথায় নাও। আমি একটু ভিজি আর বৃষ্টির ফোঁটা মাথায় পড়ুক। কতদিন হলো সেই বৃষ্টির ফোঁটা মাথায় পড়ার অনুভুতি করি না।
.
মাজেদা বেগম চোখটা বড় বড় করে তাকালো আমাজাত সাহেবের দিকে। আমজাত সাহেব কিছু বললো না। ছাতা নিয়ে মাথায় ধরে হেঁটে যাচ্ছে । নিশাত স্পষ্টদৃষ্টিতে সেটা দেখছে। মনে মনে ভাবছে, এরকম ভালোবাসা কি আমার কপালে জুটবে,,? কে জানে,,! আল্লাহ তায়ালা ভালো জানে।

---নিশাত গাড়িতে ওঠো,,,
বাবার কথায় ভাবনার ছেঁদ পরলো।
---জ্বী আব্বু উঠতেছি।
.
কথাটা বলে নিশাত একটা টেক্সিতে উঠে পরে । বাবা সামনে বসে ডাইভারের কাছে। মাথায় শুধু একি ভাবনা,,,।
.
.
প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট পর বাসার পৌঁছে যায়।

বাসায় এসে নিশাত রুমে চলে যায়। ফোনটা চার্জে দিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় চলে আসে ।

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে নিশাতের মনোজগৎ ভিন্ন আমেজের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়। আগের অনেক কথা মনে পড়ে যায়। না, ওর কোনো দুঃখের স্মৃতি নেই। বাবা-মায়ের খুব আদরের মেয়ে সে। কষ্ট নামক জিনিস সেটা বুঝতে দেই নাই কেউ। তবে একজন মানুষ ওর জীবনের আনন্দকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সে আর কেউ নয়-ফারহান। এই বাড়িওয়ালার ছেলে। ফারহানকে হারানোর ভয় নিশাতের ওপরও ভর করেছে! যদি আম্মুকে বলে তাহলে ফারহানের বাবার সাথে কথা বলবে। ভয়ের কোনো কারণ নেই; তবুও ভয়! কাউকে চূড়ান্তভাবে ভালোবাসলে কোথা থেকে যেন হারানোর ভয়ও এসে জুড়ে বসে মনের মাঝে! এই মুহূর্তে ফারহানের সঙ্গে কথা বলতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু সে তার রুমে। ফারহানের বাসায় যাওয়া এখন ঠিক হবে না। ফারহানের নাম্বারটাও নেই! কথা বলা সম্ভব না। নিশাত বাবার কাছে থেকে ভার্সিটিতে যাওয়ার ভাড়া থেকে কিছু টাকা জমিয়ে ফারহানের জন্য একটি হাতঘড়ি আর একটি শার্ট কিনেছে। চৈতীর কাছে শুনেছে আর কয়েকদিন পরে ফারহানের জন্মদিন। এবার নিশাত ফারহানকে সারপ্রাইজ দেবে!
.
.
.
চলবে,,,,

No comments:

Post a Comment