Wednesday, August 21, 2019

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম (১৬তম পর্ব)

সকাল সকাল ফোনের রিংটোনে ফারহানের ঘুম ভেংগে গেল। পাইরেটস অব দ্যা ক্যারিবিয়ান মুভির রিংটোন। রিংটোন টা ফারহানের খুব পছন্দের হলেও এই মুহুর্তে অসহ্য লাগছে। বালিশের আশেপাশে হাতিয়ে ফোনটা খুঁজে বের করে চোখের সামনে ধরল। সায়েম ফোন দিয়েছে। কোন রকমে রিসিভ করে ঘুম জড়িত কন্ঠে বলল,
- হ্যালো,,,,
- কি রে ভার্সিটিতে আসিবি না?
- না।
- কেন? কিছু হয়েছে?
---না,,।
---তাহলে,,? কেনো আসবিনা?
- কারণ, ভার্সিটির চেয়েও ঘুমটা আমার কাছে বেশি ইম্পোর্টেন্ট। আর যখন বের হবো তখন তোকে ফোন করবো,,।
- ঠিক আছে। ঘুমা।
এই বলে ফোনটা কেটে দিল সায়েম। ফারহান আরো কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করতে লাগল। কিন্তু, কিছুতেই চোখে ঘুমের আবাস নেই।
বিছানা থেকে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেল ফারহান।
.
ব্রেকফাস্ট করে এসে একটু রেশ নিলাম।
আজকে আর ভার্সিটিতে যেতে মন চাচ্ছে না। কালকে গেলে চলবে। তাই অলসতা কাজ করছে।
শুয়ে থাকা, বই পড়া আর খাওয়া দাওয়া করে তিনটা চলে গেলো। ঘুমানোর আগে বন্ধুদের ফোন দিলাম.......
সবাইকে ফোন দিয়ে কালকে ভার্সিটিতে আসতে বললাম,,,
.
পরদিন ভার্সিটিতে এসে কাজটা করে ফর্মটা নিয়ে বসে পরলাম সেই পুরোনো ফ্রেন্ডসদের সাথে । মাঠের মধ্যে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম সবাই মিলে। এমন সময় দেখলাম নিশাত নামের মেয়েটা আমাকে ডাকছে ।
ফ্রেন্ডসদের ঈঙ্গিতপূর্ণ চোখের চাহনি উপেক্ষা করে পিছন ফিরে তাকালাম। দেখি নিশাত আমাকেই ডাকছে। আমি ফ্রেন্ডস বললাম,
---এক মিনিট। যাব আর আসবো।
---ঠিক আছে যা,,,

আমি চলে গেলাম ওর কাছে ।
কাছে যাওয়াতে বলে উঠলো,
---যাবেন না ?
---কোথায় ?
---কোথায় আবার ? বাসায় ?
---ও,,হুম যাব তো ।
---চলেন একসাথে যাই ।

আমার মোটেই ইচ্ছা নাই একসাথে যাওয়ার । তাই মিথ্যে বললাম,
---আমার যেতে একটু দেরী হবে । তুমি চলে যাও।
---ও...
.
নিশাতের দিকে তাকালাম। দেখি চিন্তা করছে । মুখটা ফেঁকাসে হয়ে গেছে। কত আশা নিয়ে বলেছিল। চোখমুখ অন্ধকার হয়ে গেছে । ভেবেছিল একসাথে যাবে । কিন্ত, আমার কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেছে হয়ত । আমি নিজের চোখের সামনে সফলতা দেখতে পেয়ে মনে মনে খুশি । যাক একসাথে যেতে হবে না। নিশাত কিছুতেই আমার পিঁছু ছাড়ছেনা। বাঁচা গেছে । কিন্তু হঠাৎ মেয়েটার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠাতে শংকিত হয়ে পড়লাম । নিশাত পরক্ষণে বলে উঠলো,
---আচ্ছা আমি ওই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি । আপনার যাওয়ার সময় হলে বলবেন । আমি ওই পাশটায় আছি । ঠিক আছে ?
.
নিশাতের কথাটা শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেলাম। যতচেষ্টা করছি ততো আমার কাছে আসার চেষ্টা করছে। আমি মনমরা অবস্থায় বললাম,
---জ্বী, আচ্ছা ।
.
নিশাত চলে গেলো একটু ফাঁকে। একটু দূরে দাঁড়ানো আরেকটা মেয়ের সাথে কথা বলা শুরু করল । আমি আবার বন্ধুদের কাছে ফিরে গেলাম । সবাই জানতে চাইছে মেয়েটা কে ? আমার সাথে কি ওর ? আমার তখন কিছু বলার মুড নাই । মেজাজটা খারাপ হয়ে গেছে, নিজের উপর । জানি না কেন হয়েছে ।
কিছুক্ষণ কথা বললাম বন্ধুদের সাথে। মাঝে মাঝে নিশাতের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছি। সেও আমার দিকে তাকাচ্ছে বোধহয়।
বেশীক্ষণ দাঁড়ালাম না আর । লাভ নেই কোন । আগে যাই বা পরে, মেয়েটার সাথেই যেতে হবে । বাসায় যেতে হবে । তাই বন্ধুদের বললাম,
---দোস্ত আজ উঠি। অনেকদিন পর মনটা ভালো হয়ে গেল। খুব ভালো লাগছে। একসাথে কথাবার্তা, দুষ্টুমি সব মিলে অতীতে ফিরি গিয়েছিলাম আমি। (ফারহান)
---হ্যা রে ফারহান। আমিও খুব খুশি ও আনন্দ বোধ করছি। তুই যদি ফোন না দিতি তাহলে আজ এরকম আনন্দ মুহুর্ত মিস করতাম। (সিয়াম)
---ঠিক বলেছিস সিয়াম...। (সবাই মিলে বলে উঠলো)
---আরে সব আল্লাহুর ইচ্ছে। (ফারহান)
---আর যাই বলিস না কেনো সিয়াম। সবাই চেন্জ হয়ে গেছে। (ফাহিম)
---বেটা বেশি চেন্জ হইছিস তুই। তুই তো আগে খুব কথা বলতিস। আর এখন সব চেন্জ। সাইলেন্ট মুড। (তরিকুল)
---শুধু আমি না। সবাই। (ফাহিম (
---বাদ দে এসব কথা। (ফারহান)
---হুমম। (সবাই মিলে)
---ওই রুবাইয়ার খবর কি? (ফারহান)
---জানি না রে। ওর সাথে বেশি কথা হয় না। মাঝে মধ্যে হয়। (তরিকুল)
---কেনো? (ফাহিম)
---ওকে মিস করতাছি। ও থাকলে আজ আড্ডাটা বেশি মজার হত। (ফারহান)
---হুমম,,! শুধু ও না। মিষ্টি,,, (কথাটা বলে সিয়াম জিব্বাহ্ কামড় দেয়)
---সিয়াম আবারও,,,(ফাহিম)
.
ফারহান ফাহিমকে থামিয়ে বলে উঠলো,
---আরে সমস্যা নাই। আমি আর এসব নিয়ে মন খারাপ করি না। সব কপালের লিখন। (ফারহান)
---মন খারাপ করিস না দোস্ত। আমি ইচ্ছে করে,,,(সিয়াম)
---আরে,, আমি কিচ্ছু মনি করি নাই। (ফারহান)
.
সায়েম চলে এলো।
---কি রে তোর কাজ সল্ভ হয়ছে,,? (তরিকুল)
---হুমম। আর বলিস না দোস্ত। পুরাই ফিদা। তোদের সাথে আড্ডা দিতে আসলাম। আর আমি চলে গেলাম একটা ছোটবোনের কাজে।(সায়েম)
---তুই শালা মানুষ হবি না। (ফাহিম)
---আরে আমি কি ইচ্ছা করে গিয়েছি। ওরাই তো ডেকে নিয়ে গেলো । (সায়েম)
---তুই শালা কোনদিনও ভালো হবি না। (তরিকুল)
---হাহাহাহা,,
.
সবাই মিলে হেসে উঠলাম।
---আচ্ছা দোস্ত আজ তাহলে উঠি। তোদের সবাইকে আমার বাসায় দাওয়াত রইলো। চলে আসিস কিন্তু। (ফারহান)
---আন্টি কি মজাদার পোলাও-কোরমা রান্না করে খাওয়াবে আবারও । (তরিকুল)
---হুমম। আম্মু, তোদেরকে মিস করে খুব। তোরা গেলে খুব খুশি হবে রে। (ফারহান)
---ঠিক আছে। সামনের সপ্তাহে যাব কিন্তু। (সায়েম)
---ওকে ডান। আবার মিস করা যাবে না কিন্তু। (ফারহান)
---আরে সুস্বাদু রান্না কি মিস করা যাবে। (ফাহিম)
---রুবাইয়ার নাম্বারটা দে তো। আমার কাছে ছিল। বাট, ফোন ও সিম চেন্জ করাতে ওর নাম্বার মনে নাই। সবার সাথে যোগাযোগ করতে পারি না। (ফারহান)
---নাম্বার তোল,,,(সায়েম)
---বল,,,(ফারহান)
---০১৯********
---ধন্যবাদ,,,
---দুর বেটা ধন্যবাদ দিতে হইবো না। তোর নাম্বারটা রুবাইয়া চাইছিল। বাট, আমি আর দেই নাই। কেনো দেই নাই সেটা তুই ভালো করে জানিস। (সায়েম)
---জানি,,। (ফারহান)
---ও হ্যা,,, সিয়াম তোর জবের খবর কি,,,?(তরিকুল)
---ইন্টারভিউ দিয়েছি। ভাগ্য দেখি কি করে। (সিয়াম)
---দোস্ত, আমি যাই তাহলে। (ফারহান)
---আচ্ছা যা,, আর বাসায় গিয়ে ফোন দিস। (ফাহিম)
---ওকে,,,। আল্লাহ হাফেজ,,,।
---আল্লাহ হাফেজ,,।
.
বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে গেলাম। ওরা আড্ডা দিবে কিছুক্ষণ। তারপর চলে যাবে যার যার বাসায়। বাসার দিকে চলে যাচ্ছি।
তখন মনে হলে কেউ দৌড়ে আসছে আমার পিঁছু পিঁছু। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। পিঁছন ফিরে তাকালাম। দেখি নিশাত। মেয়েটার ওপর মেজাজটা গরম হয়ে যাচ্ছে। ছোটবোনের বান্ধুবীরা তাকিয়ে ছিল তখন। আজ চৈতী আসে নাই। তাই সেরকম কিছু হবেনা। কিন্তু, চৈতীকে জিজ্ঞেস করবে তারা। তখন চৈতী,, । উফফউফফপপপ,,,!
নিশাত দৌড়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো,
---এই,,আ,,আপনাকে বললাম আমাকে ডাক দিবেন বাসায় যাওয়ার সময়। কিন্তু, ডাক দিলেন না তো।
---আমার মনে ছিলনা।
---মনে ছিলনা,, নাকি ইচ্ছে করে। Bye the way,, চলুন,,
---কোথায়,,?
---কোথায় আবার,,! বাসায়,,। নাকি গার্লফ্রেন্ডের বাসায় যাবেন। (মৃধু হেসে)
.
কথাটা শুনে রাগ উঠে গেলো। কিচ্ছু বললাম না।
---চলুন,,
.
কথা বলতে বলতে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে মেইন রোডে এলাম। ভার্সিটির সাথে মেইন রাস্তা।
ভার্সিটি থেকে বের হয়েই আমাকে সে হুকুমের সুরে বলল, একটা রিক্সা ঠিক করেন ।
মেজাজ এমনিতেও খারাপ । তার উপর এইরকম কথা শুনে সেটা আরো বাড়লো । সরাসরি বলে দিলাম,
---পারবোনা । তুমি কর ।

আমার যে মেজাজ খারাপ এটা নিশাত মনে হয় খেয়ালই করেনি । তখন বলে উঠলো,
---বলেন কি ? আপনি একটা মেয়েকে এভাবে রিক্সা ঠিক করতে বলতেছেন ?
---কেন ? মেয়েরা রিক্সা ঠিক করলে কোন সমস্যা আছে ?
---নাহ । কিন্তু যখন সাথে কোন ছেলে থাকে তখন তো করে না । সেটা জানেন না বুঝি!
.
আমার তর্ক করতে ইচ্ছা করছে না । এই মেয়ের সাথে তর্ক করে ফায়দা নাই । ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেই যেটা বলবে সেটাই করবে । মনে মনে বলে উঠলো ফারহান, " সব মেয়েই কি এমন ? শিওর না ।

রিক্সা ঠিক করলাম একটা । রিক্সাওয়ালার বয়স বেশি না । রিক্সায় উঠেই আমি বললাম,
---মামা হুডটা তুলে দেন তো ।
,
রিক্সাওয়ালা মামা বললো,
---আইচ্চা মামা দিতাছি,,,।

তখন নিশাত বাধা দিয়ে বলে উঠলো,
---রৌদ নাই তো । হুড তোলার কি দরকার ? মামা হুড তুলতে হবে না। চলুন,,,
---ঠিক আচে মামা,,। (রিক্সাওয়ালা)
.
আমি বিবর্তবাদ করছি। সেটা বোধহয় নিশাত বুঝতে পেরেছে। শুধু আজকে রিক্সায় উঠি নাই। এর আগে একদিন উঠে ছিলাম। তখন পরিবেশটা রাতের শহরের পরিণতি ছিল। তখন সেরকম বোধ হয় নাই। আর তখন ছিল আম্মুর জন্য মেডিসিন আনার জন্য। মাথায় তখন এসব চিন্তাভাবনা ছিল না। আর এখন পুরো দিন। চতুর্দিকে জনসংখ্যাবৃদ্ধি। এই না যে আমি কোন দিন কারও সাথে রিক্সাতে ঘুরেবেড়াই নাই।
---তোমার কোন সমস্যা,,,?
---না মানে..
---আমরা কি প্রেম করতেছি নাকি । এত ভয়ের কি আছে ? থাকুক এরকম । কোন সমস্যা নাই। সোজা হয়ে বসুন।

আমার এখন অধিক শোকে পাথরের মত অবস্থা । নিজেকে একটা পুতুল মনে হইতেছে । যাকে নিয়ে ইচ্ছামত যা খুশি করা যায় । ইচ্ছা হলে হাত একটা চাপ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা যায় । আবার চাইলেই লাগিয়ে দেয়া যায় । বড়ই শোচনীয় অবস্থা । কিচ্ছু করার নেই। সব কপালের লিখন। রিক্সাওয়ালা মামা রিক্সা চালাচ্ছে। আমরা দুজনে বসে আছি। মাঝে মাঝে নিশাত আমার দিকে তাকাচ্ছে আর মনে মনে হাসছে।
.
.
.
চলবে,,,,!!!

No comments:

Post a Comment