Wednesday, August 21, 2019

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম (১৫তম পর্ব)

ভোরের সূর্যের আলো ঝলমলিয়ে রৌদ্দুর জানালা দিয়ে ছেঁদ করে ঘুম ভাঙিয়ে দিল।
ঘুমানোর আগে জানালাটা বন্ধ করা হয় নি। ঘুম ভেঙে প্রথমে খারাপ লাগলেও এখন আর খারাপ লাগছে না। জানালা দিয়ে বাতাস আসছে রুমে। ঘরে কেমন যেন ১টা আরামদায়ক শীতলতা। পাতলা চাঁদর গায়ে দিয়ে শুয়েছিলাম। ইচ্ছা করছে কাঁথাটা জড়াতে আবার আলসেমিও লাগছে। এমন সময় বালিশ টা কাঁপতে শুরু করল। এই মোবাইল নামক যন্ত্রটা এখন আর কাউকে একাকী থাকতে দেয় না।
আলসেমি করতে করতেই ফোনটা কেটে গেলো। খুব চেনা ১টা নাম স্ক্রিনে নাম্বারটা ভেসে আছে। ফোনটা রেখে
খোলা প্রান্তরে ভোরের সূর্যটা দেখতে অন্যরকম লাগে।
ভোরের সূর্যটা তার নিজেস্ব আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীতে। রাত নামক শব্দটা দিন নামে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
সাদা একটা পর্দা যেন আকাশ থেকে নেমে এসেছে। বাতাস পেয়ে পর্দাটা কাঁপতে থাকে, একেবেঁকে যায়। বড় অদ্ভুত লাগে। শুয়ে থেকে এই মুহুর্ত দেখা যায় না।

আমি বিছানা ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। পাশের বাসার কদম ফুল গাছটা আমাদের বারান্দা থেকে হাত বাড়ালে ছোঁয়া যায়। বৃষ্টি ভেজা ফুল গুলো কে ছুঁয়ে দিতে আমার সব সময়ই ভালো লাগে। তবে আজ কি একটু বেশিই ভালো লাগছে !!!! নাহ এতোসব ভাববার সময় নেই। একটু পর একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে বের হতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি করে ওয়াশ রুমে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে তৈরি হয়ে নিলাম।

ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করার জন্য খেতে এলাম ।
---গুড মর্নিং আম্মু,,, গুড মর্নিং আব্বু,,,গুড মর্নিং মাই ডিয়ার স্মল ডাইনি,,,
কথাটা বলতে বলতে ফারহান চেয়ারে বসে গেলো।
---গুড মর্নিং,,,(মা)
---গুড মর্নিং,,,(বাবা)
---গুড মর্নিং,,, ( চৈতী চোখটা বড় বড় করে)
---কি খাবি,,,? জ্যামরুটি ডিম ভাজি দিয়ে।
---হুমম দাও,,,
---আম্মু পেঁটুকরে ডিম ভাজি দিওনা। (আস্তে করে চৈতী বললো)
.
ফারহান ভালো ভাবে শুনতে পাইনি তবুও জানে তার ছোটবোন কি বলেছে।
---আম্মু আরও দুইটা ডিম ভাজি দাও,,,।
---আরও মানে,,! তুইতো একটার বেশি খাস না। আজকে হঠাৎ,,,
---এহম, এহম উহুহু,,,(ফারহানের গলায় আটকে যায়)
---এই নি পানি খা,,,। আমি ভেজে নিয়ে আসছি,,,
.
ফারহান ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিল।
---আমি পেঁটুক তাই আজ থেকে পেঁটুকের মত সব বেশি বেশি খাব।
.
ফারহানের আব্বা কথাটা শুনে হেসে দিল। সে এই ঘটনা লক্ষ করেছে তাহলে।
---নিয়মের বাহিরে বেশি খেলে পেট খারাপ হবে ফারহান,,।
---আব্বু তুমি জানো ও কি বলেছে।
---হুমম।
---তাহ,,,,
---শোন, মনে রাখিস, যে জিনিস বেশি সুস্বাদু,,। সে জিনিস বেশি ক্ষতি কর। পোলা খুব সুস্বাদু,, যদি প্রতিদিনকার চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলিস তখন সেটা পেট খারাপ করে দিবে । কারণ, সব কিছু নিয়মের বাহিরে খেলে সেটা বদহজম হয়। বিশেষ করে তেলযুক্ত খাবার। আর যেটা বলছিস সেটাও একটা তেল দিয়ে ভেজেছে। এমনিতে ডিম খুব অপকারী। কিন্তু, বেশি খেলে পেট খারাপ। আমি জানি তুই খাবি না। চৈতীকে দেখানোর জন্য বলছিস।
---ঠিক বলেছো আব্বু।
---আচ্ছা বাদ দাও কথাটা,,, তোমার আম্মু বললো, তুমি বলে চাকরি করবে?
---জ্বী আব্বু।
---কি চাকরি করবে সেটা ডিসাইড করেছো,,?
---আমার ডিফেন্সের চাকরি করতে ভালো লাগেনা,,,।
---তাহলে কি করবে,,? বিজনেস করবে,,?
---দেখি,,,। আর আজকে একটা ইন্টারভিউ দেব। দোয়া করবেন।
---প্রাইভেট,,,? নাকি সরকারি অফিসে,,?
---প্রাইভেটে,,,।
---প্রাইভেটে যদি কর। তাহলে আমার এক বন্ধুর অফিসে জয়েন করতে পার। অনেক বড় কম্পানি। তুমি যদি চাকরি কর তাহলে তার সাথে কথা বলে দেখবো।
---জ্বী,,।
---তাহলে আজকের ইন্টারভিউ দাও।
---জ্বী,,।
---আবার ভেবনা ইন্টারভিউ দিতে যাব না। ইন্টারভিউ দিলে জ্ঞান বারে। আর অনেক কিছু বুঝতে ও জানতে পারবে।
---জ্বী,,।
---এই নি ডিম ভাজি,,
---সত্যি, সত্যি ভেজে নিয়ে আসছো,,?
---হ্যা। তুই তো বললি,,।
---আরে এমনি বলেছি।
---এমনি বলিস আর যাই বলিস। আজ এই দুইটা খেয়ে নি।
---আমি পারবোনা।
---আরে দুর। পারবি আমি জানি।
---তুমি একটা নাও। আর একটা আমি খাচ্ছি।
---ঠিক আছে।
---তুমি না,,,,(ফারহানের বাবা)
---আমি না কি হ্যা,,। তুমি চুপ করে খাও। তুমি তো ২টা খেতে আগে। সাথে আবার ফলমূল খেতে।
---সেটা এক সময় খেতাম। এখনতো না।
---ওরা আজকে খাবে। যখন তোমার মত বয়স্ক হবে তখন খাওয়া কমিয়ে দিবে। ব্যস।
---তুমি জান না। অতিরিক্ত একবারে বেশি খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো না।
---আম্মু,,,, আব্বু এখন ঝগড়া করবে।
---তুই খা তো বাবা। তোর ইচ্ছামত যত পারিস খা। কারও কথায় কান দিবি না।
.
.
এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা। না খেয়ে পড়ছে। না খেয়ে পড়লে কি পড়ার ভেতর মনযোগ আসবে। একা একা কথা বলে যাচ্ছে মাজেদা বেগম।
দুইবার ডেকে যায় সকালের খাবারের জন্য। কিন্তু, নিশাত বলে আর একটু পরে খাব, খাব করে আর খেতে আসছেনা।

মাজেদা বেগম ভাতের প্লেট নিয়ে রুমের ভেতর ডুকে পরে। টেবিলের উপর প্লেট রেখে পানির জন্য চলে যায়। পানি লবন নিয়ে রুমে আসে।
---আম্মু এভাবে কথা বললে পড়ার ডিস্টার্ব হয়।
---না খেয়ে পড়া লাগবে নাকি। কাল কতবার বললাম যাস না এই রাতে। না,, কে শোনে কার কথা। কন্ঠসর তো আনক্লিয়ার হয়ে গেছে। টনসিল ফুলে গেছে বোধহয়।
---আম্মু আমার পড়া শেষ হয়নি। আমি খাব না। আজকে আমার পরীক্ষা হবে। আগে জানলে কি বৃষ্টিতে ভিজতাম,,।
---ভিজতাম মানে,,? তুই কি ইচ্ছে করে ভিজেছিস,,?
---ক,,,কই নাতো। বৃষ্টিতো ছাড়বেনা ভেবে রওনা দিয়েছিলাম। তাই আর কি।
---হুমম। আমি খাওয়ায়ে দিচ্ছি,,।
---আম্মু,,,।
---চুপ,,, গলার সর ক্লিয়ার করার জন্য চা বানিয়ে আনছি। ভাত খেয়ে নি আগে।
.
মাজেদা বেগম নিশাতকে ভাত খা'য়ে দিচ্ছে। আর নিশাত চুপ করে খাচ্ছে । কাল বৃষ্টিতে ভিজে রাতে টুম্পার কাছ থেকে নোট নিয়ে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে ডাক দিতে গিয়ে বুঝতে পারে গলা ডেবে গেছে (কন্ঠসর স্পষ্টতা হচ্ছে না)। বুঝতে পারে বৃষ্টিতে ভেজার ফল। তাই নিজে এক কাপ চা বানিয়ে খেতে একটু ক্লিয়ার হয়েছে।

মাজেদা বেগম মেয়েকে ভাত খাওয়ায়ে গরম গরম এত কাপ চা করে দিয়ে যায়। নিশাত চা খেয়ে আবার পড়তে বসে।

১২ টার পর বাসা থেকে বের হয় টেষ্ট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। সেরকম কোন জটিলতা পরীক্ষা না। জাষ্ট টিচার টেষ্ট এক্সাম নিচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের বুঝানোর জন্য।
.
.
ফারহান দুপুরে বাসায় চলে আসে ইন্টারভিউ দিয়ে। খাবার খেয়ে বিছানায় চলে আসে। আজ খুব ক্লান্ত। অনেক হেঁটেছে। গাড়ির চাকা পাম যাওয়াতে কত হেঁটে যেতে হয়েছে তার ঠিক নেই। মধ্যরাস্তায় গাড়ি নষ্ট হলে তখন গাড়ির কোন দেখা মেলে না।
একবার ভেবেছিল ইন্টারভিউ দিবে না। আবার কি মনে করে হেঁটে হেঁটে চলে যায়।

মমতা রহমান ছেলের রুমে এসে দেখে ফারহান শুয়ে পড়েছে। বোধহয় খুব ক্লান্ত। তাই এসে খেয়ে ঘুুমিয়ে পড়েছে।
মমতা রহমান গিয়ে ছেলের পাশে বসে মাথায় রাখলো। ফারহান ডাক দিকে ঘুরে দেখে আম্মু।
---কি রে ইন্টারভিউ কেমন দিলি,,,? একটু তো বললি না।
---আলহামদুলিল্লাহ্! ভালো দিয়েছি।
---আলহামদুলিল্লাহ্। যাক আল্লাহুর রহমতে ভালো দিয়েছিস। আমি দোয়া করেছিলাম তুই যেন টিকে যাস।
---জানি না সিলেক্টেড হবো কিনা। কিন্তু, আশা আছে সিলেক্ট হবো আম্মু। কারণ, আমার রেজাল্ট দেখে একটু প্রশংসা করেছে ওই কম্পানির চেয়ারম্যান।
---যাক কথাটা শুনে খুশি হোলাম। আল্লাহুর কাছে লাক্ষকটি শুকুরিয়া,,, আচ্ছা তুই বোধহয় খুব ক্লান্ত। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। তুই ঘুমা। একটা ঘুম দিলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।

ফারহান মাথাটা মায়ের কোলে রাখলো। মমতা রহমান ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ফারহান একটু পর ঘুুমিয়ে পরে। আজ বেশি ক্লান্ত। না হলে এতো তাড়াতাড়ি কখনও ঘুম আসেনা ফারহানের।
.
.
---হ্যালো।
--- হাঁ শুনছি বল।
--- এতক্ষণ লাগল আমার ফোন ধরতে! তুমি জান না আমি তোমাকে কত মিস করি। তুমি দেরি করে ফোন ধরলে আমার ভালো লাগে না।

---আররে বাবা শাওয়ারে ছিলাম তো। এমন বাচ্চাদের মত কর কেন!
--- আমি তো বাচ্চাই। এই বাচ্চাটাকে একটু আদর করে দাও না। একটা পাপ্পি দাও না প্লিজ।
.
নিশাত একটু লজ্জা পেয়ে যায় কথাটা শুনে।
---আমি এখন ফোন রাখছি।
--- এই না না। রেখ না প্লিজ। আর একটু কথা বলি!
--- আচ্ছা বল।
--- আচ্ছা তুমি এত সুন্দর কেন? শাওয়ারের পর তোমাকে নিশ্চয় আরও অনেক সুন্দর লাগছে। বিশেষ করে তোমরা যখন মাথায় তওয়ালে পেছিয়ে রাখ। আর কানের সামনে ভেজা চুল ভেয়ে পানি গড়িয়ে পরে।

--- তা তো ভাল লাগবেই! তোমরা ছেলেরা না সব ওই একটা বিষয় ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পার না!
---এই তুমি রাগ করছো কেনো,,?
---বল তো তুমি এরকম কাকে,কাকে দেখেছো,,?
---শুধু তোমাকে,,,।
---হোয়াট,,,! আমাকে,,?
---হুমম।
---হুমম কি?
---না মানে,, তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম। তখন সকালে গোসল করে এসে আমাকে ডেকেছিলে। আর আমি হা করে তোমাকে দেখতে ছিলাম।
---ইস আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে,,,
.
কারও ধাক্কায় চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
---কিরে নিশাত কি হয়েছে।
---দিলা তো স্বপ্নের বারোটা বাজিয়ে।
---কিসের স্বপ্ন। আর এই রাত ৮ টার সময় কেউ স্বপ্ন দেখে।
---আম্মু স্বপ্ন দেখতে সময়-টময় লাগেনা। ঘুম এলে অটোমেটিক ভাবে কল্পনা জগৎ শুরু হয়ে যায়।
---তা ঠিক বলেছিস। তা কি স্বপ্ন দেখলেন ম্যাডাম,,?
---বলা যাবে আম্মু সিক্রেট ব্যাপার,,,।
---তাই নাকি,,।
---হুম।
---বুঝতে পেরেছি কি স্বপ্ন দেখেছেন।
---কি স্বপ্ন দেখেছি বল,,,?
---সেটা বলা যাবেনা একান্ত সিক্রেট ব্যাপার।
---আম্মুওওওও,,,
---হাহাহাহা,,,, যা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। তোর আব্বু বসে আছে।
---ওক্কে মাই ডিয়ার মম,,,,
.
.
.
চলবে,,,

No comments:

Post a Comment