Wednesday, August 21, 2019

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম ( ১৯ তম পর্ব)

নিশাত চোখ বন্ধ করে আছে। যেন সত্যি-সত্যি ঘুমুচ্ছে। সে কাউকে জানতে দিতে চায় না যে সে সারারাত ঘুমুয় নি। সারারাত জেগে কাটিয়েছে প্রায়। বাড়িওয়ালার ছেলেটির সঙ্গে তার যেদিন ভালোলাগা শুরু হলো, সেদিন রাতে থেকে মাঝে মাঝে এই অবস্থা। সারারাত সে জেগে, এক ফোঁটা ঘুম নেই। হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় নানির বাড়ির কথা। নিশাতের নানির বাড়ি গ্রামে।

অবশ্য ঐ রাতে সে একা না বাড়ির সবাই জেগে ছিল। সবাই নানা রকম ঠাট্টা-তামাশা করছিল। এর মধ্যে তার এক দূর সম্পর্কের ফুপাতো ভাই সাদা কাপড় পরে ভূত সেজে তাদের ভয় দেখাল। কত না কাণ্ড হল সেই রাতে। আহা ঐ বেচারা ফুপাতো ভাইটা বেঁচে নেই। পরের বছরই তিন দিনের জ্বরে মারা গেল। ও বেঁচে থাকলে আজও এসে কত হৈচৈ করত। ভালোভালো মানুষগুলো, যাদের হৃদয় আনন্দে পরিপূর্ণ, যারা সব সময় পৃথিবীর সবাইকে আনন্দ দিতে চায় তাদেরকে এত সকাল-সকাল পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয় কেন? ভাবতে-ভাবতে নিশাতের চোখ ভিজে উঠতে শুরু করল।
নিজেকে অনেক প্রশ্ন করে তবুও কোনোদিন নিজের থেকে উত্তর পাই নি। হয়তো কোনোদিন পাবেও না।

সূর্য এখনো ওঠে নি, কিন্তু গ্রাম জেগে উঠেছে! শহরের সাথে গ্রামের সবচেয়ে বড়ো পার্থক্য হচ্ছে, শহরের মানুষরা কখনো সূর্যোদয় দেখে না। তারা তখন ঘুমের রাজ্যে থাকে। সারারাত্রি জেগে ভোরের দিকে ঘুম দেয় ।
নিশাতের হঠাৎ মনে হল, সূর্যোদয় দেখাটা অত্যন্ত জরুরি। এই দৃশ্যটি মানুষকে ভাবতে শেখায়। মন বড়ো করে। নিশাতের পরীক্ষণেই মনে হল, মন বড়ো করে, ধারণাটা ঠিক না। গ্রামে অত্যন্ত ছোট মনের মানুষদের তিনি দেখেছেন। মন বড়ো-ছোট ব্যাপারটির সঙ্গে প্রকৃতির কোনো সম্পর্ক বোধহয় নেই।

নিশাত বিছানা ছেড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। সূর্যমামা এখনো আকাশের বুকের ভেতর থেকে বের হয় নি। বাতাশের কেমন যেনো মুগ্ধ করার মত ঘ্রাণ পাচ্ছে। হয়তো এই সকাল বেলার প্রকৃতির আবাশ।
কারও কথায় নিশাত পিছনে ফিরে তাকায়। দেখে তার মা মাজেদা বেগম দাঁড়িয়ে আছে কফির মগ নিয়ে। নিশাত আশ্চর্য হয়ে যায়। মায়েরা এরকম কেনো? ছেলেমেয়ে কখন ঘুম থেকে উঠে, না উঠে বুঝতে পারে,,? আবারও রাতে ঘুমায় কিনা সেটাও?
নিশাত কোনো উত্তর খুঁজে পায় না। মনে মনে ধারণা করে। হয়তো, আল্লাহ্ তায়ালা! মায়েদের এই ক্ষমতা দিয়ে দিছে।
মাজেদা বেগমের কথায় বাস্তবে ফিরে আসে নিশাত,
---কিরে মা। কি ভাবছিস আমার দিকে তাকিয়ে।
.
মাজেদা বেগম কফির মগ নিশাতের হাতে দিতে দিতে কথাটা বলে। নিশাত কফির মগ নিয়ে আবার সূর্যমামার দিকে তাকায়। ততক্ষণে সূর্যমামা তার লালটুকটুকে মাথা বের করছে আধটু।
নিশাত কফিতে চুমুক দিয়ে কফির ঘ্রাণ শুকে চোখ বুঝে। তারপরে কমল কন্ঠে বলে উঠে,
---আম্মু,, তোমরা কেমন করে বুঝতে পারো,,,?
.
মেয়ের কথাটা স্পষ্ট বুঝতে না পেরে মাজেদা বেগম বলে উঠলো,
---বুঝলাম না তোর কথা মা। একটু ক্লিয়ার করে বল,,!
---তুমি কেমন করে বুঝলে আমি ঘুুমিয়ে নেই। জেগে আছি।
---মায়েরা বুঝতে পারে। ছেলেমেয়েরা কি করছে এখন। তারা ভালো করে জানে। তার ছেলেমেয়ে কেমন স্বভাবগত। কখন ঘুম থেকে উঠে।
---তোমার কথা আগা গোড়া কিছুই বুঝতে পারলাম না আম্মু।
---মানে, সব মায়েরা তার ছেলেমেয়ের প্রায় সব খবর বুঝতে পারে। হয়তো, আল্লাহ্ তায়ালা! এই বিশেষ গুনটা দিয়ে দিছে নারীজাতিদের।
---কেমন করে যে বুঝতে পারে সেটাই বুঝতে পারি না।
---শোন, প্রত্যহ মায়েদের ছেলেমেয়েদের নারির সাথে মায়ের নারি সংযোগ থাকে। তখন থেকে মায়েরা বুঝতে পারে। হয়তো, সেই থেকে আল্লাহ্ তায়ালা গুণটা দিয়ে দিছে।
---কিন্তু, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নারি কেটে দেওয়া হয়।
---নারি কেটে দিলে কি নারি আলাদা হয়ে যায়?
.
নিশাত মনে মনে বলে উঠলো, আসলে ঠিক তো। নারি তো আলাদা হয় না। মায়ের সারাটা থেকে যায় তার ভেতরে। হয়তো এর কারণে, বুঝতে পারে।
---কিরে কফি তো ঠান্ডা হচ্ছে।
---জ্বী আম্মু।
---তুই কফি খা আর সূর্যোদয় দেখ। আর কফি শেষ হলে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসিস। আমি রান্নাঘরে গেলাম।
.
কথাটা বলে মাজেদা বেগম চলে গেলো। সে জানে তার মেয়ের কফিটা খেতে অনেক্ষণ লাগবে। তাই সূর্যোদয় দেখতে বললো।
নিশাত মায়ের কথা সায় দিয়ে বারান্দায় ঘেসে দাঁড়ায়। ততক্ষণে সূর্যমামা তার বিশাল লালটুকটুকে অর্ধশরীর বের করেছে।
প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে চাচ্ছে নিশাত। আগে তো এরকম ছিল না। হঠাৎ রাতারাতি চেন্জ হয়ে যাচ্ছে। টুম্পা বলেছে কথাটা।
.
.
বিকেল বেলা ফারহান বারান্দায় বসে আছে ইজি চেয়ারে। হাতে একটা উপন্যাসের বই হবে। পাশে থাকা টেবিলের উপর ফোন ভেজে চলছে সে দিকে খেয়াল নেই ফারহানের। হঠাৎ করে ফোনের রিংটোন কানের ভেতর দিয়ে মস্তিষ্কে গিয়ে জানান দেয় কেউ ফোন দিচ্ছে।

বইটা একহাতে নিয়ে ফোনটা হাতে নেয়। ততক্ষণে ফোনটা বেজে কেটে যায়। স্ক্রিনে আনসেভ নাম্বার ৪ বার মিসকল লেখা ভেসে উঠেছে।
কার নাম্বার সেটা মনে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু, বন্ধুদের না। ভাবতে ভাবতে পরক্ষণে আবার সেই নাম্বার থেকে কল আসে। ফারহান রিসিভ করে,
---হ্যালো,,।
---হ্যালো,,,।
.
ফারহান উপর পাশে থাকা কন্ঠটা চিনতে পেরেছে। একদিন ফোন দিয়েছিল। আমার ফোন দিয়ে চৈতী ফোন করেছিল নিশাতের আম্মার ফোনে। যাহোক, উপর পাশের কথাটা শুনে ফারহান অবাক হয়ে য়ায়,,,
---আমার সাথে একটু দেখা করবে ফারহান,,,?
---কেন?
---কিছু কথা ছিল তোমার সাথে।
---হুম। কবে,,?
---আজকে বিকালে,,,!
---কোথায়?
---তোমার সাথে একদিন গিয়ে ছিলাম।
---ও,,,
---আচ্ছা এখন রাখি,,
.
তুত,, তুত করে ফোন কেটে যায়।
ফারহান ভাবতে থাকে, হঠাৎ করে দেখা করতে বলছে। আর আমি কেমন করে শিকার হয়ে গেলাম। আমি কি,,,না সেটা হতে পারে না।
.
যাবেনা ভেবেও নিজেকে বেঁধে রাখতে পারেনা ফারহান । নিশাতকে দেখে মনে হয় সেই আগের মিষ্টিকে দেখছে সে। বিষণ্ণ চোখ। দেখলেই যাকে ভালবাসতে ইচ্ছা করে। মনে মনে তার প্রিয় কিছু লাইন বলে ফারহান ।
“হয়ত তুমি কাছেই আছ, তবু তোমায় ছুঁতে কি পাই, তোমার বুকে ব্যথা ছিল কেমন করে কথা দিয়ে সেই ব্যথাতে আঙুল বুলাই”
হয়ত তুমি অনেক দূরে, তোমায় কাছে পাই,,, "
এ কেমন কাছে পাওয়া,,,
না পাওয়ার থেকে বেশি ব্যথা,,,""
তুমি কি নীল শব্দের মাঝে কেন্দ্রস্থল,,,!

অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে দুইজন। কেউ কথা বলছেনা। হয়তো মনে হচ্ছে হাজার অভিমান পাহাড় বুনে গেছে।
---কেমন আছো ?”
---ভাল...
---মিথ্যা বলছ কেন?
---সব যখন জানই তো জিজ্ঞেস করছ কেন?
---তোমাকে আমি সুখী দেখতে চাই ফারহান ।
---মানুষের সব চাওয়া পূরণ হয়না” কিন্তু তুমি চাইলেই তা হয়।
.
ফারহান নিশাতের চোখের দিকে তাকায়। শক্ত কন্ঠে বলে,
---কিভাবে?
---মাঝখানের কয়েকটা বছর মুছে ফেলো,আমি তোমাকে ভাল রাখতে চাই।
---কেন?
---অনেক কষ্ট পেয়েছ তুমি, তোমার মত ভাল একটা ছেলের এত কষ্ট প্রাপ্য না। যতটা তুমি কষ্ট পাচ্ছো।
---করুণা করতে চাচ্ছ? করুনা চাইনা বলে আগে সরে এসেছি, এত বছর পর আবার নতুন করে করুণার ডালি নিয়ে এসেছ তুমি?
---করুণা নয় ফারহান , বিশ্বাস কর। আমি যা বলছি সব সত্যি বলছি। বিশ্বাস কর।
---তবে কি? আমি ভাল ছিলাম না জেনে এখন করুণা করে ভাল রাখতে চাইছ আমাকে।
---কি বললে বিশ্বাস করবে বল? আমি জানি সেটা। তুমি বল কি বল কি করলে তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে,,?
---প্লিজ নিশাত, আমি আমার অনুভূতি গুলো নিয়েই বেঁচে ছিলাম,আছি। করুণার নিচে চাপা দিয়ে আমার অনুভূতির শুদ্ধতা নষ্ট করে দিওনা।
---আমাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখ। জাষ্ট একটি বার।
---না নিশাত। আমি কখনই মিষ্টির জায়গা তোমাকে দিতে পারবনা মন থেকে। তুমি ই তো জানো, কাছের মানুষের অবহেলা সহ্য করা যায়না। আমাদের মাঝখানে মিষ্টি নামের কেউ অদৃশ্য দেয়াল হয়ে থাকবে। আমি পারবনা তোমার করুণা,তোমার অবহেলা নিয়ে বাঁচতে। এর চাইতে তুমি অন্যকাউকে নিয়ে সুখে সংসার কর। অযথা সময় গুলা নষ্ট না করে পড়াশোনা কর । ভালো থেকো।
.
নিশাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাঁটতে থাকে ফারহান। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। ফারহান হেঁটে চলেছে। প্রাপ্তির শেষ শেষ সীমানায় এসে কেন অপ্রাপ্তিকে বরণ করে নিল জানা নেই তার। চাইলেই পারত মিষ্টির অবর্তমানে নিশাতের হাত টেনে নিয়ে পথ অতিক্রম করতে। কিন্তু অবহেলা, করুণা মিশ্রিত জীবন থেকে তার অনুভূতি গুলোই তার কাছে দামি।
"বড় অবেলায় এসেছো তুমি কিছুটা পথ অতিক্রম করতে,,""
বড় নিষ্ঠুর আমি প্রকৃতির মায়াজালে,, ""
“বড় অসময়ে এসে তুমি স্মৃতি চিহ্ন রেখে যাও,""
বড় অসময়ে এসে বসে থাক অচেতন ভুবনে,
অসময়ে এসেছ বলে অসময় হয়েছে সময়
বেদনায় এসেছ বলে বেদনাই তীর্থ আমার”.........
ফারহান সন্ধ্যা থেকেই চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে আছেন। রাতেরবেলা বৃষ্টিতে ভেজা ঠিক হয় নি। জ্বর এসে গেছে। গলা ব্যথা করছে। ঢোক গিলতে পারছেন না। বয়সের লক্ষণ। শরীর বলছে-এখন আর আমাকে দিয়ে যা-ইচ্ছা-তা করিয়ে নিতে পারবে না। আমার দিন ফুরিয়ে আসছে।

মমতা রহমান রুমে ঢুকেই বলল
--–ফারহান তোর মন খারাপ,,?
ফারহান বলল,
---জানি না।
---জ্বর এসেছে,,?
---না। কিছু বলবে আম্মু,,?
---হ্যাঁ,,।
---বল,,
---ওষুধ শেষ হয়েগেছে।
---একদম শেষ।
---না,,। কালকের ড্রোস আছে।
---তাহলে কাল এনে দিব। তুমি জানালা বন্ধ করে দাও তো মা, ঠাণ্ডা লাগছে।
---এই গরমে ঠাণ্ডা লাগছে? জ্বর নাকি? দেখি।

মমতা রহমান, ফারহানের কপালে ছুঁয়ে দেখতে গেলেন। ফারহান একটু সরে গিয়ে বলল,
---গায়ে হাত দিও না মা।
.
মমতা রহমান বিস্মিত হয়ে বললেন,
---গায়ে হাত দিলে কি?
---কিছু না। আমার ভাল লাগে না।
---মা গায়ে হাত দিলে ভাল লাগে না, এটা কি ধরনের কথা? বলছিস কি এসব?
---তোমার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। জানালাটা বন্ধ করে চলে যাও।
.
মমতা রহমান জানালা বন্ধ করে চলে গেলেন। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বালিশের পাশে ফোনটার ভাইব্রেশনের শব্দে কেঁপে উঠে। ফোনটা হাতে নেয় ফারহান । স্ক্রিনে ভেসে উঠে সেই নাম্বার। ফারহান রিসিভ করে,
---হ্যালো,,,
---আপনি কি একটু ছাঁদে আসবেন,,?
---তুমি কি ছাঁদে? আর এই সময়ে ছাঁদে কেনো,,?
---আপনি আসবেন কিনা বলেন? (অভিমানি সুরে)
---ওকে আসতেছি,,,! তুমি দুই মিনিট দাঁড়াও,,,।
.
ফোন কেটে দেয় নিশাত। ফারহান অবাক হয়ে যায়। নিশাতের কথা মত শিকার হয়ে গেলো।
একটুখানি বসে রইলেন। অস্থিরতা বোধ হচ্ছে। এমন হচ্ছে কেনো?
ছাঁদের দিকে পা বাড়ালেন ফারহান। আর ভাবছে, আমি কি তার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে গেছি? নাকি অন্য কিছু?
.
.
অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি । অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হল , ফারহান আসলো ।
ফারহান এসে নিশাতের কাছে দাঁড়িয়েছে। মুখটা কেমন যেনো মলিন হয়ে আছে। ছেলেটা সত্যি খুব ভালোবাসে মিষ্টিকে। তাই নিশাত আগ বাড়িয়ে কথা বললো,
---ভাল আছো , ফারহান ?
---হ্যাঁ , তুমি ?
---মিথ্যা বলছো কেন ? আমি জানি তুমি ভাল নেই ।
---আরেহ না, তোমার ভুল ধারণা। আমি ভাল আছি তো ।
---আমি সব জানি । মিষ্টি তোমার সাথে এরকম করবে তা আমি কখনো স্বপ্নে ও কল্পনা করি নি ! সে তো জানতো তুমি কেমন,,। তবুও সে অবিশ্বাস করলো।
---তাহলে তো দেখছি সব জেনেই গেছো ।
---চৈতী যদি না বলতো তাহলে কখনোই জানতাম না ! আর সেদিন শুধু ওইটুকু শুনেছিলাম। তারপরে চৈতীর কাছে থেকে একটু একটু করে সব শুনেছি।
---ও,, তাহলে ভালো করেছো। কিন্তু, তুমি আমাকে ভুলে যাও নিশাত। তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাও প্লিজ,,,
---আমি দূরে সরে যেতে চাইনা ফারহান । তোমার পাশেই থাকতে চাই । আরো বেশি কিছু হয়ে তোমার পাশে থাকতে চাই !
---মানে ?
---আমি তোমাকে ভালবাসি , ফারহান ! কেনো বোঝনা ফারহান,,!
---করুণা দেখাচ্ছো ?
---যদি করুণা দেখাতে হত তাহলে এতদিন ধরে ভালবেসে আসতাম না ।
---কি ?
---আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালবাসি । সেইদিনের এর শুরু থেকেই । কিন্তু তা আর বলার সুযোগ পাই নি । এখন সুযোগ পেয়েও আমি তোমাকে হারাতে চাই না । প্লিজ , ফারহান ! একবার তোমাকে ভালোবাসার সুজুক করে দাও। শুধু একটা বার। দেখবে তোমার মিষ্টির প্রতি যতটা অভিমান ছিল, সব অভিমান আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে পাল্টিয়ে দেব। তোমাকে এটাও প্রমাণ করে দেব। পৃথিবীর সব মেয়ে এক না ফারহান। হয়তো মিষ্টির মত মেয়েদের ভিড়ে আজও অনেক মেয়ে আছে যারা শুধু একটু ভালোবাসা পেতে চাই। আর কিছুই চাই না ফারহান।
---আমার ভয় করে যদি আবার কষ্ট পেতে হয় ? তাহলে আমি আর বাঁচবোনা। একদম শেষ হয়ে যাব। যেমনটা একটা মোমবাতি তার ভেতরে থাকা সুঁতো মত পুড়ে শেষ হয়ে মিশে যাব।
---আমাকে বিশ্বাস করতে পার , কোনদিন কষ্ট পাবে না । আ,,,আমি কো,,কো,, কোনদিন অভিযোগ করবোনা। শুধু বিশ্বাসটা রয়ে যাবে তোমার প্রতি। হাতে হাত রাখবে ফারহান ?
.
কথাটা বলে নিশাত কেঁদে দিল। মেয়েটা অনেক ভালোবাসে বোধহয়। কিন্তু কোথায় থেকে সেই সাহস হয় না হাতের উপর হাতটা ধরে রাখতে।
---আমাকে ভাবতে হবে নিশাত। আমি দ্বিতীয় করে কষ্ট পেতে চাই না। যদি কখনও আবার কষ্ট পাই। আমি তাহলে ম,,,
.
কথাটা বলতে পারলোনা ফারহান। তার আগে নিশাত হাতটা ফারহানের ঠোঁটের উপরে রাখে। কেমন জানি অনুভুতি শিহরণ হয় ফারহানের ।
এ কেমন অনুভুতি?
---এই ছেলে তুমি আর কখনও মরার কথা বলবেনা।
---যদি কখনও,,,
---চুপ,,, একদম চুপ।
---আমার কোন অভিযোগ নেই। তোমাকে আমি টাইম দিলাম। যতদিন খুশি ভেবে নিতে পার। আমি অপেক্ষায় থাকলাম। কিন্তু,,,,
.
কিন্তু কথাটা বলে নিশাত থেমে যায়। ফারহান কিছু বলতে বলছেনা। মুখে কেমন জানি কথা আটকে আসে। আগেও এরকম হয়েছে। এখনও তার ব্যক্তিম নয়। তবুও অনেক কষ্টে বলে উঠলো,
---কিন্তু কি,,,?
.
নিশাত ফারহানের দিকে তাকায়। ফারহান শুনতে আগ্রহি।
---আমার বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত।
---কবে তোমার বিয়ে,,,?
---বাসায় আব্বু বিয়ের আলোচনা করতে শুনেছি। খুব শীঘ্রই হবে হয়তো,,।
---ও তাহলে তো ভালো। তুমি বিয়ে করে নাও। অনেক সুখি হবে। বিয়ের পর বরকে ভালোবাসবে। আর বিয়ের আগে প্রেম-ভালোবাসা ইসলাম ধর্মে নেই। এর চাইতে বরের সাথে বিয়ের পর চুটিয়ে প্রেম করবে।
---তাহলে তুমি কেনো করেছিলে,,,?
---আমি জানি না। তবে এর জন্যই হয়তো, মহান আল্লাহ্ তায়ালা! আমার সাথে মিষ্টির বিয়ে লিখে রাখে নি।
---আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবোনা। যদি জোর করে তাহলে আমি,,,,
---না না,, আত্মহত্যা মহা পাপ। এটা কখনও করনা।
---আমি গেলাম। তুমিও ছাঁদ থেকে চলে যাও,,,।
.
কথাটা বলে নিশাত ফারহানকে পাশ কেটে চলে গেলো। ফারহান পিঁছন ঘুরে তাকিয়ে রইলো নিশাতের যাওয়ার দিকে।
নিশাত ছাঁদ থেকে নেমে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে। ফারহান এখনও তাকিয়ে সিঁড়িপথের দিকে।
একটুপর ফারহান নেমে যায় ছাঁদ থেকে।
.
চলবে,,,

No comments:

Post a Comment