Wednesday, August 21, 2019

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম (২০ তম পর্ব)

মেয়েটা আশেপাশে থাকলেই একধরনের সুবাস পাওয়া যায়।চন্দ্রগ্রস্থ রাতে হাসনাহেনার তীব্র নেশা ধরানো সুবাস।এটা সত্যি নাকি মিথ্যা জানেনা ফারহান।আজ হঠাৎই ঘোরের মাঝে ধাক্কা খেয়ে উঠে মেয়েটির কথা শুনে,
---কেমন আছেন?
---আলহামদুলিল্লাহ্,, মোটামুটি,,,! তুমি,,,?
---আলহামদুলিল্লাহ্,, অনেক ভালো,,,।
---গুড,,,
---মুড অফ ?
---জ্বী,,,
---জানতে পারি ?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফারহান বলল,
---ইন্টারভিউ ছিল ? কিন্তু, যাই নাই।
নিশাত বুঝতে পারল ফারহানের মন খারাপের কথাটা এভোয়েড করল।
---যাননি ?
---যেতে ইচ্ছা করেনি
---কোন কম্পানি? সরকারি নাকি প্রাইভেটে কম্পানি?
---প্রাইভেট কম্পানি। বাবার এক ফ্রেন্ডের। নাম মনে নেই সঠিক,,,।
---গুড।
---বুঝলাম না,,,?
---কিছুই না,,,।
---ও,,,
---কফি খাবেন ?

ফারহান ঠোঁটটা একটু বাড়িয়ে খুব শুষ্ক একটা হাসি দিয়ে বলল,
---পরবর্তী খাব,,,,,।
---বাকি তো ফাকিও হতে পারে তাই না,,।
---তাহলে আদায় করে নিব কোনো একদিন।
---ঠিক আছে (একটু হেসে)
.
আরো কিছুক্ষণ নির্বাক পুতুলের মত
দাড়িয়ে থাকল ফারহান ও নিশাত। টুকটাক কিছুক্ষণ কথা হলো। ফারহানের হাতের
ঘড়িটা সামনে এনে বলল,
---স্যরি আজ আসি ।একটু বাইরে যাব।পরে কথা হবে।
---ঠিক আছে যান।আমিও একটু বের হবো ।
---কোথায়?
---কোথায় আবার,, একটু শপিং এ যাব আব্বুর সাথে ।
---Take Care,,,
---Me too,,,
.
ফারহান চলে যায়। নিশাত অবাক হয়ে যায়!
নিশাতের সেদিনের কথাটা মনে পরে যায়। মনে মনে বলে উঠে,, "তাহলে কি ফারহান ভেবেছে? নাকি অন্যকিছু? কিছুই বুঝতে পারলোনা। ফারহানের কখন কি রুপ প্রকাশ পায় বোঝা বড় ধায়।
মাজেদা বেগম বারান্দায় এসে ডাক দিলেন,
---এই নিশাত,,,
.
নিশাত মাথাটা উুঁচু করে উপরের বারান্দার দিকে তাকায় মাজেদা বেগমের দিকে।
---কিছু বলবা আম্মু,,,
---হ্যাঁ,,তোর আব্বু ডাকছে। চলে আয় রুমে,,,
---আচ্ছা আসতেছি,,,
---তাড়াতাড়ি আয় তাহলে,,,
---জ্বী,,

নিশাত বসা থেকে উঠে হাঁটা শুরু দিল রুমের দিকে।
.
.
পরদিন সকালে_____________
---মা তুমি কি কখনো আমাকে বড় হতে দিবে না?এত বড় হয়েছি তবু রোজ ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় খাওয়ায়ে দাও পিচ্চদের মত। বন্ধুরা হাসাহাসি করে ।
---মায়ের কাছে সন্তান বড় হয়না বুঝলি,,,
---হুম খুব হয়েছে এখন যেতে দাও,,,,আর খাব না।
---সাবধানে যাস ।
.
নিশাতের রাস্তায় গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছে।নীল ওড়না আর খোলা চুল যেন বাতাসের সাথে খেলা করছে।খুব সুন্দর লাগছে নিশাতকে ।

ফারহান বাসা থেকে বাইক নিয়ে বের হয়ে দেখে নিশাত দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে এল কাছে।
---গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছেন বুঝি ?
.
নিশাত ফারহানের দিকে তাকালো। কেমন জানি বেশি সুন্দর লাগছে। এভাবে পরিপাটি হয়ে সেঁজে বের হতে পারে। ফারহান দেখতে খুব সুন্দর ও ফর্সা চেহারা। নিশাত কমল কন্ঠে জবাব দেয়,
---হ্যা।
---এখনও একটাও গাড়ি পান নাই,,?
---আপনি কি বোকা,,। গাড়ি পেলে এখানে খামাক্ষা দাঁড়িয়ে থাকবো কেনো,,!
.
ফারহান নিশাতের কথাটায় নিজেকে বোকা বোকা মনে করলো। সে তো জানে কখন গাড়ি আসে।
---না মানে। গাড়ির কোন ঠিকঠিকানা নেই বলছি। আর বিশেষ করে স্কুল, কলেজ,ভার্সিটির টাইমে বেশি দেখা যায়।
---এতক্ষণে কত গাড়ি চলে আসে ।আজ কেন যে একটাও গাড়ি পাচ্ছি না বুঝতে পারছিনা?
---আপত্তি না থাকলে আমার বাইকে যেতে পারেন।
.
নিশাত নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। এটা প্রতিদিন কার মত স্বপ্ন! নাকি সত্যি! নিজেকে একটা চিমটি কাটলো নিশাত। বোধহয় চিমটি একটু জোরে লেগেছে। নিশাত বলে উঠলো,,, উুঁহ,,!
---কি হয়েছে? এমন করছেন কেনো? কোন সমস্যা হয়েছে?
.
নিশাত ফারহানের কথায় মায়ায় পড়ে যাচ্ছে। ছেলেটার রুপ দু,টা! কখন কোন রুপ ধারুন করে বোঝা ধায় মুশকিল। কিন্তু, পথে, রাস্তায়, ভার্সিটিতে এখন পথচারীদের মত আচরণ করে।
---কি হলো,,। কিছু ভাবছেন? আর কোন সমস্যা?
---না।
---তাহলে, আপত্তি না থাকলে আমার বাইকে যেতে পারেন।
.
নিশাত প্রথমে একটু সংকোচ করলেও গাড়ি আসছে না দেখে এত রোদে দাড়িয়ে থাকার চেয়ে ফারহানের সাথে যাওয়াটাবেটার মনে করল নিশাত । এর আগে নিতে চাইতো না ফারহান। কিন্তু, আজ নিজে থেকে বলছে। বুঝতে পারলাম না কিছুই?
.
ফারহান বাইক চালাচ্ছে, নিশাত পিঁছনে বসে আছে। কেমন জানি সংকোচ করছে ফারহানকে ভালোভাবে ধরতে। যদি কিছু মনে করে। যেভাবে আছি সেভাবে থাকি।
---আপনি খুব আদরের মেয়ে তাইনা ?
---হুম তা একটু ।
---কতটুকু সেটা তো আপনি বের হওয়ার সময়ইবুঝতে পারলাম। অবশ্য এত যত্ন করে আমার মাও আমাকে খাইয়ে দেয়।এমনকি ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ও এরকম করে খাওয়ার ভাগ্য ছিলনা । নানুর বাসায় ছিলাম। এনিওয়ে আপনার ভার্সিটি এসে গেছে ।
.
ফারহানের সাথে কথা বলতে বলতে রিনি খেয়ালই করেনি কখন এতটা পথ ফুরিয়ে গেছে ।ফারহানের কথা শুনে হঠাৎ করেই যেন নিশাত কোন এক অজানা জগৎ থেকে ফিরে এল।সাথে সাথে নেমে গেল ।
---আরে আরে আজব মেয়ে তো আপনি ।একটা উপকার করলাম থ্যাংকস তো দিলেনই না উল্টা এমনভাবে চলে যাচ্ছেন যেন বাঘে তাড়া করেছে ।

নিশাত লজ্জা পেয়ে ইতঃস্তত স্বরে থ্যাংকস বলল ।
সুন্দরি মেয়েটাকে এখন খুব বোকা বোকা লাখছে দেখে ফারহান উচ্চস্বরেহেসে বলল,
---আপনার এই বোকা বোকা ফেস দেখার জন্য একটু মজা করলাম।ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।এবার আমি আসি,বাই ।
.
নিশাত বুঝতে পারল না হঠাৎ আজ এমন কেন হল?তবে এটা বুঝতে পারল যে অর্নব আসলে ততটাবেরসিক নয় যতটা সে ভেবেছিল। অল্পদিনে পরিচয়ে মনে হচ্ছে বেশ বহুদিনের চেনা মানুষ ।
এরপর বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে । সবকিছু পাল্টে গেছে এই কদিনে ।
নিশাত নামের মেয়েটাকে বিরক্ত লাগত ফারহানের, সেই মানুষটা নিশাত নামের মেয়েটাকেই এখন অনেক ভালো লাগে । বেশ ভালো বন্ধু এখন আমরা । এখন আমার সাথে অনেক কথা বলে ফারহান । দুজনে বলি অনেক কথা। এত কথা কোথা থেকে যে বের হয় কে জানে । তবে আমার এখন আর শুনতে খারাপ লাগে না ।
.
বেশ কয়েকদিন হল ফারহানের দেখা মেলেনি। বারান্দার গ্রিলের ফাকে।রাস্তায়ও দেখা হয়নি অনেকদিন।যদিও নিশাত ফারহানকে নিয়ে ভাবছে না তবুও কেন জানি চিন্তাও হচ্ছে একটু ।তাই কিছু না ভেবেই নিশাত ফারহানদের গেটের কলিং বেলটা চাপল।দু তিনবার চাপার পর চৈতীর ফুঁপাতো বোন দরজা খুলে দিল ।
---আরে নিশাত আপু যে !ভেতরে আসেন।
---ফারহান নেই ?
---ভাইয়া তো হাসপাতালে ।বাসার সবাই সেখানেগেছে শুধু আমি আর চৈতী আপু আছি বাসায়। একটু পর আমরাও যাব।
---হাসপাতালে কেন ?কি হয়েছে ফারহানের ?
---ভাইইয়ার খুব বড় অসুখ হয়েছে ।ডাক্তার বলেছে ভাইয়া আর বাঁচবে না ।
.
বলেই চৈতীর ফুঁপাতো বোন কেঁদে ফেলল ।
কথাটা শুনে নিশাত স্তব্ধ হয়ে গেল।আর কোন প্রশ্ন না করে নির্বাক পুতুলের মত দাড়িয়ে রইল।
ভেতর থেকে চৈতী এসে ডাকল নিশাত আপু...
নিশাত মুখে কোন কথা না বলে শুধু মাথা নাড়ল ।
চৈতী একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বলল,
---এটা ভাইয়া তোমাকে দিতে বলেছে ।
.
নিশাত খামটা হাতে নিয়ে, খামটা খোলার আগে রিনি একবার ফারহানের বন্ধ দরজাটার দিকে তাকালো ।সাদা খামে লুকানো চিঠিটায় লেখা ছিল.......
প্রিয় নিশাত,,
যদি কখনও পার। আমাকে ক্ষমা করে দিয়,,,।
.
হঠাৎ নিশাত হুঁশ ফিরে পেল! টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কী বাজে স্বপ্ন! যাহোক, দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি মিলেছে। চোখ মেলে নিশাত দেখল, মাজেদা বেগম ( নিশাতের মা) "নিশাত,, "এই নিশাত,,, ’ বলে ডাকছে।

ইদানিং চারপাশে ঘটা কিছু হারিয়ে ফেলার ঘটনাগুলো বোধহয় নিশার অবচেতন মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। চাপা আতঙ্ক নিশাতের চাপাই রাখতে চায়, কিন্তু তার উপায় জানা নেই। নিশাত মাকে এক কাপ মশলা চা বানিয়ে আনতে বললো। পাশ থেকে ফোন নিয়ে একটি ছবির দিকে তাকাল। এই কাজটি এখান প্রায় যতবার দুঃস্বপ্ন দেখেছে ততবারই করেছে!

একটু পর মাজেদা বেগম চা নিয়ে আসলো।
---এই নি চা,,,।
---হুম,,,
.
নিশাত চা হাতে নেয়। চোখের সামনে আবারও ভেসে ওঠে সেই চিঠি। সত্যি কি,,,? না না এটা কি করে হতে পারে। আম্মুকে কি একবার জিজ্ঞেস করবো? নাহ্ থাক,,। আম্মু অন্যকিছু ভাবতে পারে। আবার টেনশনে থাকবে।
---কি রে কি ভাবছিস? কোন সমস্যা,,?
---না আম্মু,,।
---তাহলে এমন দেখাচ্ছে কেনো? কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছিস?
.
নিশাত কোমল চোখে মায়ের দিকে তাকায়। মায়েরা কি সব বুঝতে পারে।
---কি রে কথা বলছিস না কেনো?
---কিছুনা আম্মু।
---আচ্ছা এখন চা খেয়ে পড়,,
---জ্বী আম্মু,,
.
মাজেদা বেগম মিষ্টি হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে চলে যায়। নিশাত চা নিয়ে বিষণ দুঃচিন্তায় মাথা খারাপ করে আছে। চা খাওয়ার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। মুখ ভর্তি দুঃচিন্তার ছাপ। একটু কি আন্টির কাছে যাব,,? না থাক,,,। কাল যাব এক পাক। নিশাত চা'য়ে চুমুক দিয়ে চা রেখে দেয় টেবিলে। আবার বই সামনে নিয়ে পড়তে আরম্ভ করলো।
.
.
রাত দশটার দিকে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো।আমি রিসিভ করে হ্যালো বললাম কিন্তু ঐ পাশ থেকে কোন সাড়াশব্দ নেই।আমি যখন রেখে দেয়ার চিন্তা করছিলাম তখনই শুনলাম দুর্বল গলায় কে যেন হ্যালো বলছে। আমি বেশ রেগে গিয়ে বললাম,
---কথা বলছেন না কেন?
---না মানে আরকি!তুমি কি নিশাত বলছ?
---হ্যাঁ,,,
---তোমার কন্ঠসর এমন শোনাচ্ছে কেনো?
---টনসিল ফুলে গেছে। গলা ডেবে দেখে।
---কিভাবে,,,।?
---কিভাবে আবার,,, মানুষের কেমন করে হয় সেরকম ভাবে,,,
---ও,,,
---আচ্ছা!ভাল আছেন?
---আলহামদুলিল্লাহ্ আছি ভালই। তুমি কেমন আছ?
---আলহামদুলিল্লাহ্ আমিও ভাল আছি।
.
তারপর কিছুক্ষণ কারণ ছাড়াই নীরবতা পালন। এটা আমাদের বেশি হয়। আমি তখন একটু অধৈর্য হয়ে বললাম,
---আর কিছু বলবেন?
---না মানে!
---না মানে কি?
---মানে আসলে কালকে কি তুমি ফ্রি আছ?
.
এইতো এতক্ষণে লাইনে এসেছে।আমি বললাম,
---হ্যাঁ আছি!কেন বলুন তো?
---না মানে!যদি তোমার আপত্তি না থাকে তাহলে কালকে একটু দেখা করতাম।
---ঠিক আছে।কোথায় কখন দেখা করবেন?
---আপনার সেই প্রিয় যায়গায়। কাল বিকাল চারটায়?
---ওকে।আমি চলে আসব।

তারপর ফোন রেখে দিলাম।প্রথমে ভেবেছিলাম যে দরকার নেই দেখা সাক্ষাতের।কিন্তু পরে মনে হল মেয়েটা বোধহয় আমাকে না দেখে পাগল হয়ে গেছে । মেয়েটার প্রতি কেমন জানি দুর্বলতা হয়ে যাচ্ছি দিন দিন।
.
.
.
চলবে,,,

No comments:

Post a Comment