Wednesday, August 21, 2019

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম (২০ তম পর্ব)

মেয়েটা আশেপাশে থাকলেই একধরনের সুবাস পাওয়া যায়।চন্দ্রগ্রস্থ রাতে হাসনাহেনার তীব্র নেশা ধরানো সুবাস।এটা সত্যি নাকি মিথ্যা জানেনা ফারহান।আজ হঠাৎই ঘোরের মাঝে ধাক্কা খেয়ে উঠে মেয়েটির কথা শুনে,
---কেমন আছেন?
---আলহামদুলিল্লাহ্,, মোটামুটি,,,! তুমি,,,?
---আলহামদুলিল্লাহ্,, অনেক ভালো,,,।
---গুড,,,
---মুড অফ ?
---জ্বী,,,
---জানতে পারি ?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফারহান বলল,
---ইন্টারভিউ ছিল ? কিন্তু, যাই নাই।
নিশাত বুঝতে পারল ফারহানের মন খারাপের কথাটা এভোয়েড করল।
---যাননি ?
---যেতে ইচ্ছা করেনি
---কোন কম্পানি? সরকারি নাকি প্রাইভেটে কম্পানি?
---প্রাইভেট কম্পানি। বাবার এক ফ্রেন্ডের। নাম মনে নেই সঠিক,,,।
---গুড।
---বুঝলাম না,,,?
---কিছুই না,,,।
---ও,,,
---কফি খাবেন ?

ফারহান ঠোঁটটা একটু বাড়িয়ে খুব শুষ্ক একটা হাসি দিয়ে বলল,
---পরবর্তী খাব,,,,,।
---বাকি তো ফাকিও হতে পারে তাই না,,।
---তাহলে আদায় করে নিব কোনো একদিন।
---ঠিক আছে (একটু হেসে)
.
আরো কিছুক্ষণ নির্বাক পুতুলের মত
দাড়িয়ে থাকল ফারহান ও নিশাত। টুকটাক কিছুক্ষণ কথা হলো। ফারহানের হাতের
ঘড়িটা সামনে এনে বলল,
---স্যরি আজ আসি ।একটু বাইরে যাব।পরে কথা হবে।
---ঠিক আছে যান।আমিও একটু বের হবো ।
---কোথায়?
---কোথায় আবার,, একটু শপিং এ যাব আব্বুর সাথে ।
---Take Care,,,
---Me too,,,
.
ফারহান চলে যায়। নিশাত অবাক হয়ে যায়!
নিশাতের সেদিনের কথাটা মনে পরে যায়। মনে মনে বলে উঠে,, "তাহলে কি ফারহান ভেবেছে? নাকি অন্যকিছু? কিছুই বুঝতে পারলোনা। ফারহানের কখন কি রুপ প্রকাশ পায় বোঝা বড় ধায়।
মাজেদা বেগম বারান্দায় এসে ডাক দিলেন,
---এই নিশাত,,,
.
নিশাত মাথাটা উুঁচু করে উপরের বারান্দার দিকে তাকায় মাজেদা বেগমের দিকে।
---কিছু বলবা আম্মু,,,
---হ্যাঁ,,তোর আব্বু ডাকছে। চলে আয় রুমে,,,
---আচ্ছা আসতেছি,,,
---তাড়াতাড়ি আয় তাহলে,,,
---জ্বী,,

নিশাত বসা থেকে উঠে হাঁটা শুরু দিল রুমের দিকে।
.
.
পরদিন সকালে_____________
---মা তুমি কি কখনো আমাকে বড় হতে দিবে না?এত বড় হয়েছি তবু রোজ ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় খাওয়ায়ে দাও পিচ্চদের মত। বন্ধুরা হাসাহাসি করে ।
---মায়ের কাছে সন্তান বড় হয়না বুঝলি,,,
---হুম খুব হয়েছে এখন যেতে দাও,,,,আর খাব না।
---সাবধানে যাস ।
.
নিশাতের রাস্তায় গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছে।নীল ওড়না আর খোলা চুল যেন বাতাসের সাথে খেলা করছে।খুব সুন্দর লাগছে নিশাতকে ।

ফারহান বাসা থেকে বাইক নিয়ে বের হয়ে দেখে নিশাত দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে এল কাছে।
---গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছেন বুঝি ?
.
নিশাত ফারহানের দিকে তাকালো। কেমন জানি বেশি সুন্দর লাগছে। এভাবে পরিপাটি হয়ে সেঁজে বের হতে পারে। ফারহান দেখতে খুব সুন্দর ও ফর্সা চেহারা। নিশাত কমল কন্ঠে জবাব দেয়,
---হ্যা।
---এখনও একটাও গাড়ি পান নাই,,?
---আপনি কি বোকা,,। গাড়ি পেলে এখানে খামাক্ষা দাঁড়িয়ে থাকবো কেনো,,!
.
ফারহান নিশাতের কথাটায় নিজেকে বোকা বোকা মনে করলো। সে তো জানে কখন গাড়ি আসে।
---না মানে। গাড়ির কোন ঠিকঠিকানা নেই বলছি। আর বিশেষ করে স্কুল, কলেজ,ভার্সিটির টাইমে বেশি দেখা যায়।
---এতক্ষণে কত গাড়ি চলে আসে ।আজ কেন যে একটাও গাড়ি পাচ্ছি না বুঝতে পারছিনা?
---আপত্তি না থাকলে আমার বাইকে যেতে পারেন।
.
নিশাত নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। এটা প্রতিদিন কার মত স্বপ্ন! নাকি সত্যি! নিজেকে একটা চিমটি কাটলো নিশাত। বোধহয় চিমটি একটু জোরে লেগেছে। নিশাত বলে উঠলো,,, উুঁহ,,!
---কি হয়েছে? এমন করছেন কেনো? কোন সমস্যা হয়েছে?
.
নিশাত ফারহানের কথায় মায়ায় পড়ে যাচ্ছে। ছেলেটার রুপ দু,টা! কখন কোন রুপ ধারুন করে বোঝা ধায় মুশকিল। কিন্তু, পথে, রাস্তায়, ভার্সিটিতে এখন পথচারীদের মত আচরণ করে।
---কি হলো,,। কিছু ভাবছেন? আর কোন সমস্যা?
---না।
---তাহলে, আপত্তি না থাকলে আমার বাইকে যেতে পারেন।
.
নিশাত প্রথমে একটু সংকোচ করলেও গাড়ি আসছে না দেখে এত রোদে দাড়িয়ে থাকার চেয়ে ফারহানের সাথে যাওয়াটাবেটার মনে করল নিশাত । এর আগে নিতে চাইতো না ফারহান। কিন্তু, আজ নিজে থেকে বলছে। বুঝতে পারলাম না কিছুই?
.
ফারহান বাইক চালাচ্ছে, নিশাত পিঁছনে বসে আছে। কেমন জানি সংকোচ করছে ফারহানকে ভালোভাবে ধরতে। যদি কিছু মনে করে। যেভাবে আছি সেভাবে থাকি।
---আপনি খুব আদরের মেয়ে তাইনা ?
---হুম তা একটু ।
---কতটুকু সেটা তো আপনি বের হওয়ার সময়ইবুঝতে পারলাম। অবশ্য এত যত্ন করে আমার মাও আমাকে খাইয়ে দেয়।এমনকি ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ও এরকম করে খাওয়ার ভাগ্য ছিলনা । নানুর বাসায় ছিলাম। এনিওয়ে আপনার ভার্সিটি এসে গেছে ।
.
ফারহানের সাথে কথা বলতে বলতে রিনি খেয়ালই করেনি কখন এতটা পথ ফুরিয়ে গেছে ।ফারহানের কথা শুনে হঠাৎ করেই যেন নিশাত কোন এক অজানা জগৎ থেকে ফিরে এল।সাথে সাথে নেমে গেল ।
---আরে আরে আজব মেয়ে তো আপনি ।একটা উপকার করলাম থ্যাংকস তো দিলেনই না উল্টা এমনভাবে চলে যাচ্ছেন যেন বাঘে তাড়া করেছে ।

নিশাত লজ্জা পেয়ে ইতঃস্তত স্বরে থ্যাংকস বলল ।
সুন্দরি মেয়েটাকে এখন খুব বোকা বোকা লাখছে দেখে ফারহান উচ্চস্বরেহেসে বলল,
---আপনার এই বোকা বোকা ফেস দেখার জন্য একটু মজা করলাম।ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।এবার আমি আসি,বাই ।
.
নিশাত বুঝতে পারল না হঠাৎ আজ এমন কেন হল?তবে এটা বুঝতে পারল যে অর্নব আসলে ততটাবেরসিক নয় যতটা সে ভেবেছিল। অল্পদিনে পরিচয়ে মনে হচ্ছে বেশ বহুদিনের চেনা মানুষ ।
এরপর বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে । সবকিছু পাল্টে গেছে এই কদিনে ।
নিশাত নামের মেয়েটাকে বিরক্ত লাগত ফারহানের, সেই মানুষটা নিশাত নামের মেয়েটাকেই এখন অনেক ভালো লাগে । বেশ ভালো বন্ধু এখন আমরা । এখন আমার সাথে অনেক কথা বলে ফারহান । দুজনে বলি অনেক কথা। এত কথা কোথা থেকে যে বের হয় কে জানে । তবে আমার এখন আর শুনতে খারাপ লাগে না ।
.
বেশ কয়েকদিন হল ফারহানের দেখা মেলেনি। বারান্দার গ্রিলের ফাকে।রাস্তায়ও দেখা হয়নি অনেকদিন।যদিও নিশাত ফারহানকে নিয়ে ভাবছে না তবুও কেন জানি চিন্তাও হচ্ছে একটু ।তাই কিছু না ভেবেই নিশাত ফারহানদের গেটের কলিং বেলটা চাপল।দু তিনবার চাপার পর চৈতীর ফুঁপাতো বোন দরজা খুলে দিল ।
---আরে নিশাত আপু যে !ভেতরে আসেন।
---ফারহান নেই ?
---ভাইয়া তো হাসপাতালে ।বাসার সবাই সেখানেগেছে শুধু আমি আর চৈতী আপু আছি বাসায়। একটু পর আমরাও যাব।
---হাসপাতালে কেন ?কি হয়েছে ফারহানের ?
---ভাইইয়ার খুব বড় অসুখ হয়েছে ।ডাক্তার বলেছে ভাইয়া আর বাঁচবে না ।
.
বলেই চৈতীর ফুঁপাতো বোন কেঁদে ফেলল ।
কথাটা শুনে নিশাত স্তব্ধ হয়ে গেল।আর কোন প্রশ্ন না করে নির্বাক পুতুলের মত দাড়িয়ে রইল।
ভেতর থেকে চৈতী এসে ডাকল নিশাত আপু...
নিশাত মুখে কোন কথা না বলে শুধু মাথা নাড়ল ।
চৈতী একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বলল,
---এটা ভাইয়া তোমাকে দিতে বলেছে ।
.
নিশাত খামটা হাতে নিয়ে, খামটা খোলার আগে রিনি একবার ফারহানের বন্ধ দরজাটার দিকে তাকালো ।সাদা খামে লুকানো চিঠিটায় লেখা ছিল.......
প্রিয় নিশাত,,
যদি কখনও পার। আমাকে ক্ষমা করে দিয়,,,।
.
হঠাৎ নিশাত হুঁশ ফিরে পেল! টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কী বাজে স্বপ্ন! যাহোক, দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি মিলেছে। চোখ মেলে নিশাত দেখল, মাজেদা বেগম ( নিশাতের মা) "নিশাত,, "এই নিশাত,,, ’ বলে ডাকছে।

ইদানিং চারপাশে ঘটা কিছু হারিয়ে ফেলার ঘটনাগুলো বোধহয় নিশার অবচেতন মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। চাপা আতঙ্ক নিশাতের চাপাই রাখতে চায়, কিন্তু তার উপায় জানা নেই। নিশাত মাকে এক কাপ মশলা চা বানিয়ে আনতে বললো। পাশ থেকে ফোন নিয়ে একটি ছবির দিকে তাকাল। এই কাজটি এখান প্রায় যতবার দুঃস্বপ্ন দেখেছে ততবারই করেছে!

একটু পর মাজেদা বেগম চা নিয়ে আসলো।
---এই নি চা,,,।
---হুম,,,
.
নিশাত চা হাতে নেয়। চোখের সামনে আবারও ভেসে ওঠে সেই চিঠি। সত্যি কি,,,? না না এটা কি করে হতে পারে। আম্মুকে কি একবার জিজ্ঞেস করবো? নাহ্ থাক,,। আম্মু অন্যকিছু ভাবতে পারে। আবার টেনশনে থাকবে।
---কি রে কি ভাবছিস? কোন সমস্যা,,?
---না আম্মু,,।
---তাহলে এমন দেখাচ্ছে কেনো? কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছিস?
.
নিশাত কোমল চোখে মায়ের দিকে তাকায়। মায়েরা কি সব বুঝতে পারে।
---কি রে কথা বলছিস না কেনো?
---কিছুনা আম্মু।
---আচ্ছা এখন চা খেয়ে পড়,,
---জ্বী আম্মু,,
.
মাজেদা বেগম মিষ্টি হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে চলে যায়। নিশাত চা নিয়ে বিষণ দুঃচিন্তায় মাথা খারাপ করে আছে। চা খাওয়ার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। মুখ ভর্তি দুঃচিন্তার ছাপ। একটু কি আন্টির কাছে যাব,,? না থাক,,,। কাল যাব এক পাক। নিশাত চা'য়ে চুমুক দিয়ে চা রেখে দেয় টেবিলে। আবার বই সামনে নিয়ে পড়তে আরম্ভ করলো।
.
.
রাত দশটার দিকে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো।আমি রিসিভ করে হ্যালো বললাম কিন্তু ঐ পাশ থেকে কোন সাড়াশব্দ নেই।আমি যখন রেখে দেয়ার চিন্তা করছিলাম তখনই শুনলাম দুর্বল গলায় কে যেন হ্যালো বলছে। আমি বেশ রেগে গিয়ে বললাম,
---কথা বলছেন না কেন?
---না মানে আরকি!তুমি কি নিশাত বলছ?
---হ্যাঁ,,,
---তোমার কন্ঠসর এমন শোনাচ্ছে কেনো?
---টনসিল ফুলে গেছে। গলা ডেবে দেখে।
---কিভাবে,,,।?
---কিভাবে আবার,,, মানুষের কেমন করে হয় সেরকম ভাবে,,,
---ও,,,
---আচ্ছা!ভাল আছেন?
---আলহামদুলিল্লাহ্ আছি ভালই। তুমি কেমন আছ?
---আলহামদুলিল্লাহ্ আমিও ভাল আছি।
.
তারপর কিছুক্ষণ কারণ ছাড়াই নীরবতা পালন। এটা আমাদের বেশি হয়। আমি তখন একটু অধৈর্য হয়ে বললাম,
---আর কিছু বলবেন?
---না মানে!
---না মানে কি?
---মানে আসলে কালকে কি তুমি ফ্রি আছ?
.
এইতো এতক্ষণে লাইনে এসেছে।আমি বললাম,
---হ্যাঁ আছি!কেন বলুন তো?
---না মানে!যদি তোমার আপত্তি না থাকে তাহলে কালকে একটু দেখা করতাম।
---ঠিক আছে।কোথায় কখন দেখা করবেন?
---আপনার সেই প্রিয় যায়গায়। কাল বিকাল চারটায়?
---ওকে।আমি চলে আসব।

তারপর ফোন রেখে দিলাম।প্রথমে ভেবেছিলাম যে দরকার নেই দেখা সাক্ষাতের।কিন্তু পরে মনে হল মেয়েটা বোধহয় আমাকে না দেখে পাগল হয়ে গেছে । মেয়েটার প্রতি কেমন জানি দুর্বলতা হয়ে যাচ্ছি দিন দিন।
.
.
.
চলবে,,,

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম ( ১৯ তম পর্ব)

নিশাত চোখ বন্ধ করে আছে। যেন সত্যি-সত্যি ঘুমুচ্ছে। সে কাউকে জানতে দিতে চায় না যে সে সারারাত ঘুমুয় নি। সারারাত জেগে কাটিয়েছে প্রায়। বাড়িওয়ালার ছেলেটির সঙ্গে তার যেদিন ভালোলাগা শুরু হলো, সেদিন রাতে থেকে মাঝে মাঝে এই অবস্থা। সারারাত সে জেগে, এক ফোঁটা ঘুম নেই। হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় নানির বাড়ির কথা। নিশাতের নানির বাড়ি গ্রামে।

অবশ্য ঐ রাতে সে একা না বাড়ির সবাই জেগে ছিল। সবাই নানা রকম ঠাট্টা-তামাশা করছিল। এর মধ্যে তার এক দূর সম্পর্কের ফুপাতো ভাই সাদা কাপড় পরে ভূত সেজে তাদের ভয় দেখাল। কত না কাণ্ড হল সেই রাতে। আহা ঐ বেচারা ফুপাতো ভাইটা বেঁচে নেই। পরের বছরই তিন দিনের জ্বরে মারা গেল। ও বেঁচে থাকলে আজও এসে কত হৈচৈ করত। ভালোভালো মানুষগুলো, যাদের হৃদয় আনন্দে পরিপূর্ণ, যারা সব সময় পৃথিবীর সবাইকে আনন্দ দিতে চায় তাদেরকে এত সকাল-সকাল পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয় কেন? ভাবতে-ভাবতে নিশাতের চোখ ভিজে উঠতে শুরু করল।
নিজেকে অনেক প্রশ্ন করে তবুও কোনোদিন নিজের থেকে উত্তর পাই নি। হয়তো কোনোদিন পাবেও না।

সূর্য এখনো ওঠে নি, কিন্তু গ্রাম জেগে উঠেছে! শহরের সাথে গ্রামের সবচেয়ে বড়ো পার্থক্য হচ্ছে, শহরের মানুষরা কখনো সূর্যোদয় দেখে না। তারা তখন ঘুমের রাজ্যে থাকে। সারারাত্রি জেগে ভোরের দিকে ঘুম দেয় ।
নিশাতের হঠাৎ মনে হল, সূর্যোদয় দেখাটা অত্যন্ত জরুরি। এই দৃশ্যটি মানুষকে ভাবতে শেখায়। মন বড়ো করে। নিশাতের পরীক্ষণেই মনে হল, মন বড়ো করে, ধারণাটা ঠিক না। গ্রামে অত্যন্ত ছোট মনের মানুষদের তিনি দেখেছেন। মন বড়ো-ছোট ব্যাপারটির সঙ্গে প্রকৃতির কোনো সম্পর্ক বোধহয় নেই।

নিশাত বিছানা ছেড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। সূর্যমামা এখনো আকাশের বুকের ভেতর থেকে বের হয় নি। বাতাশের কেমন যেনো মুগ্ধ করার মত ঘ্রাণ পাচ্ছে। হয়তো এই সকাল বেলার প্রকৃতির আবাশ।
কারও কথায় নিশাত পিছনে ফিরে তাকায়। দেখে তার মা মাজেদা বেগম দাঁড়িয়ে আছে কফির মগ নিয়ে। নিশাত আশ্চর্য হয়ে যায়। মায়েরা এরকম কেনো? ছেলেমেয়ে কখন ঘুম থেকে উঠে, না উঠে বুঝতে পারে,,? আবারও রাতে ঘুমায় কিনা সেটাও?
নিশাত কোনো উত্তর খুঁজে পায় না। মনে মনে ধারণা করে। হয়তো, আল্লাহ্ তায়ালা! মায়েদের এই ক্ষমতা দিয়ে দিছে।
মাজেদা বেগমের কথায় বাস্তবে ফিরে আসে নিশাত,
---কিরে মা। কি ভাবছিস আমার দিকে তাকিয়ে।
.
মাজেদা বেগম কফির মগ নিশাতের হাতে দিতে দিতে কথাটা বলে। নিশাত কফির মগ নিয়ে আবার সূর্যমামার দিকে তাকায়। ততক্ষণে সূর্যমামা তার লালটুকটুকে মাথা বের করছে আধটু।
নিশাত কফিতে চুমুক দিয়ে কফির ঘ্রাণ শুকে চোখ বুঝে। তারপরে কমল কন্ঠে বলে উঠে,
---আম্মু,, তোমরা কেমন করে বুঝতে পারো,,,?
.
মেয়ের কথাটা স্পষ্ট বুঝতে না পেরে মাজেদা বেগম বলে উঠলো,
---বুঝলাম না তোর কথা মা। একটু ক্লিয়ার করে বল,,!
---তুমি কেমন করে বুঝলে আমি ঘুুমিয়ে নেই। জেগে আছি।
---মায়েরা বুঝতে পারে। ছেলেমেয়েরা কি করছে এখন। তারা ভালো করে জানে। তার ছেলেমেয়ে কেমন স্বভাবগত। কখন ঘুম থেকে উঠে।
---তোমার কথা আগা গোড়া কিছুই বুঝতে পারলাম না আম্মু।
---মানে, সব মায়েরা তার ছেলেমেয়ের প্রায় সব খবর বুঝতে পারে। হয়তো, আল্লাহ্ তায়ালা! এই বিশেষ গুনটা দিয়ে দিছে নারীজাতিদের।
---কেমন করে যে বুঝতে পারে সেটাই বুঝতে পারি না।
---শোন, প্রত্যহ মায়েদের ছেলেমেয়েদের নারির সাথে মায়ের নারি সংযোগ থাকে। তখন থেকে মায়েরা বুঝতে পারে। হয়তো, সেই থেকে আল্লাহ্ তায়ালা গুণটা দিয়ে দিছে।
---কিন্তু, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নারি কেটে দেওয়া হয়।
---নারি কেটে দিলে কি নারি আলাদা হয়ে যায়?
.
নিশাত মনে মনে বলে উঠলো, আসলে ঠিক তো। নারি তো আলাদা হয় না। মায়ের সারাটা থেকে যায় তার ভেতরে। হয়তো এর কারণে, বুঝতে পারে।
---কিরে কফি তো ঠান্ডা হচ্ছে।
---জ্বী আম্মু।
---তুই কফি খা আর সূর্যোদয় দেখ। আর কফি শেষ হলে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসিস। আমি রান্নাঘরে গেলাম।
.
কথাটা বলে মাজেদা বেগম চলে গেলো। সে জানে তার মেয়ের কফিটা খেতে অনেক্ষণ লাগবে। তাই সূর্যোদয় দেখতে বললো।
নিশাত মায়ের কথা সায় দিয়ে বারান্দায় ঘেসে দাঁড়ায়। ততক্ষণে সূর্যমামা তার বিশাল লালটুকটুকে অর্ধশরীর বের করেছে।
প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে চাচ্ছে নিশাত। আগে তো এরকম ছিল না। হঠাৎ রাতারাতি চেন্জ হয়ে যাচ্ছে। টুম্পা বলেছে কথাটা।
.
.
বিকেল বেলা ফারহান বারান্দায় বসে আছে ইজি চেয়ারে। হাতে একটা উপন্যাসের বই হবে। পাশে থাকা টেবিলের উপর ফোন ভেজে চলছে সে দিকে খেয়াল নেই ফারহানের। হঠাৎ করে ফোনের রিংটোন কানের ভেতর দিয়ে মস্তিষ্কে গিয়ে জানান দেয় কেউ ফোন দিচ্ছে।

বইটা একহাতে নিয়ে ফোনটা হাতে নেয়। ততক্ষণে ফোনটা বেজে কেটে যায়। স্ক্রিনে আনসেভ নাম্বার ৪ বার মিসকল লেখা ভেসে উঠেছে।
কার নাম্বার সেটা মনে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু, বন্ধুদের না। ভাবতে ভাবতে পরক্ষণে আবার সেই নাম্বার থেকে কল আসে। ফারহান রিসিভ করে,
---হ্যালো,,।
---হ্যালো,,,।
.
ফারহান উপর পাশে থাকা কন্ঠটা চিনতে পেরেছে। একদিন ফোন দিয়েছিল। আমার ফোন দিয়ে চৈতী ফোন করেছিল নিশাতের আম্মার ফোনে। যাহোক, উপর পাশের কথাটা শুনে ফারহান অবাক হয়ে য়ায়,,,
---আমার সাথে একটু দেখা করবে ফারহান,,,?
---কেন?
---কিছু কথা ছিল তোমার সাথে।
---হুম। কবে,,?
---আজকে বিকালে,,,!
---কোথায়?
---তোমার সাথে একদিন গিয়ে ছিলাম।
---ও,,,
---আচ্ছা এখন রাখি,,
.
তুত,, তুত করে ফোন কেটে যায়।
ফারহান ভাবতে থাকে, হঠাৎ করে দেখা করতে বলছে। আর আমি কেমন করে শিকার হয়ে গেলাম। আমি কি,,,না সেটা হতে পারে না।
.
যাবেনা ভেবেও নিজেকে বেঁধে রাখতে পারেনা ফারহান । নিশাতকে দেখে মনে হয় সেই আগের মিষ্টিকে দেখছে সে। বিষণ্ণ চোখ। দেখলেই যাকে ভালবাসতে ইচ্ছা করে। মনে মনে তার প্রিয় কিছু লাইন বলে ফারহান ।
“হয়ত তুমি কাছেই আছ, তবু তোমায় ছুঁতে কি পাই, তোমার বুকে ব্যথা ছিল কেমন করে কথা দিয়ে সেই ব্যথাতে আঙুল বুলাই”
হয়ত তুমি অনেক দূরে, তোমায় কাছে পাই,,, "
এ কেমন কাছে পাওয়া,,,
না পাওয়ার থেকে বেশি ব্যথা,,,""
তুমি কি নীল শব্দের মাঝে কেন্দ্রস্থল,,,!

অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে দুইজন। কেউ কথা বলছেনা। হয়তো মনে হচ্ছে হাজার অভিমান পাহাড় বুনে গেছে।
---কেমন আছো ?”
---ভাল...
---মিথ্যা বলছ কেন?
---সব যখন জানই তো জিজ্ঞেস করছ কেন?
---তোমাকে আমি সুখী দেখতে চাই ফারহান ।
---মানুষের সব চাওয়া পূরণ হয়না” কিন্তু তুমি চাইলেই তা হয়।
.
ফারহান নিশাতের চোখের দিকে তাকায়। শক্ত কন্ঠে বলে,
---কিভাবে?
---মাঝখানের কয়েকটা বছর মুছে ফেলো,আমি তোমাকে ভাল রাখতে চাই।
---কেন?
---অনেক কষ্ট পেয়েছ তুমি, তোমার মত ভাল একটা ছেলের এত কষ্ট প্রাপ্য না। যতটা তুমি কষ্ট পাচ্ছো।
---করুণা করতে চাচ্ছ? করুনা চাইনা বলে আগে সরে এসেছি, এত বছর পর আবার নতুন করে করুণার ডালি নিয়ে এসেছ তুমি?
---করুণা নয় ফারহান , বিশ্বাস কর। আমি যা বলছি সব সত্যি বলছি। বিশ্বাস কর।
---তবে কি? আমি ভাল ছিলাম না জেনে এখন করুণা করে ভাল রাখতে চাইছ আমাকে।
---কি বললে বিশ্বাস করবে বল? আমি জানি সেটা। তুমি বল কি বল কি করলে তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে,,?
---প্লিজ নিশাত, আমি আমার অনুভূতি গুলো নিয়েই বেঁচে ছিলাম,আছি। করুণার নিচে চাপা দিয়ে আমার অনুভূতির শুদ্ধতা নষ্ট করে দিওনা।
---আমাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখ। জাষ্ট একটি বার।
---না নিশাত। আমি কখনই মিষ্টির জায়গা তোমাকে দিতে পারবনা মন থেকে। তুমি ই তো জানো, কাছের মানুষের অবহেলা সহ্য করা যায়না। আমাদের মাঝখানে মিষ্টি নামের কেউ অদৃশ্য দেয়াল হয়ে থাকবে। আমি পারবনা তোমার করুণা,তোমার অবহেলা নিয়ে বাঁচতে। এর চাইতে তুমি অন্যকাউকে নিয়ে সুখে সংসার কর। অযথা সময় গুলা নষ্ট না করে পড়াশোনা কর । ভালো থেকো।
.
নিশাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাঁটতে থাকে ফারহান। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। ফারহান হেঁটে চলেছে। প্রাপ্তির শেষ শেষ সীমানায় এসে কেন অপ্রাপ্তিকে বরণ করে নিল জানা নেই তার। চাইলেই পারত মিষ্টির অবর্তমানে নিশাতের হাত টেনে নিয়ে পথ অতিক্রম করতে। কিন্তু অবহেলা, করুণা মিশ্রিত জীবন থেকে তার অনুভূতি গুলোই তার কাছে দামি।
"বড় অবেলায় এসেছো তুমি কিছুটা পথ অতিক্রম করতে,,""
বড় নিষ্ঠুর আমি প্রকৃতির মায়াজালে,, ""
“বড় অসময়ে এসে তুমি স্মৃতি চিহ্ন রেখে যাও,""
বড় অসময়ে এসে বসে থাক অচেতন ভুবনে,
অসময়ে এসেছ বলে অসময় হয়েছে সময়
বেদনায় এসেছ বলে বেদনাই তীর্থ আমার”.........
ফারহান সন্ধ্যা থেকেই চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে আছেন। রাতেরবেলা বৃষ্টিতে ভেজা ঠিক হয় নি। জ্বর এসে গেছে। গলা ব্যথা করছে। ঢোক গিলতে পারছেন না। বয়সের লক্ষণ। শরীর বলছে-এখন আর আমাকে দিয়ে যা-ইচ্ছা-তা করিয়ে নিতে পারবে না। আমার দিন ফুরিয়ে আসছে।

মমতা রহমান রুমে ঢুকেই বলল
--–ফারহান তোর মন খারাপ,,?
ফারহান বলল,
---জানি না।
---জ্বর এসেছে,,?
---না। কিছু বলবে আম্মু,,?
---হ্যাঁ,,।
---বল,,
---ওষুধ শেষ হয়েগেছে।
---একদম শেষ।
---না,,। কালকের ড্রোস আছে।
---তাহলে কাল এনে দিব। তুমি জানালা বন্ধ করে দাও তো মা, ঠাণ্ডা লাগছে।
---এই গরমে ঠাণ্ডা লাগছে? জ্বর নাকি? দেখি।

মমতা রহমান, ফারহানের কপালে ছুঁয়ে দেখতে গেলেন। ফারহান একটু সরে গিয়ে বলল,
---গায়ে হাত দিও না মা।
.
মমতা রহমান বিস্মিত হয়ে বললেন,
---গায়ে হাত দিলে কি?
---কিছু না। আমার ভাল লাগে না।
---মা গায়ে হাত দিলে ভাল লাগে না, এটা কি ধরনের কথা? বলছিস কি এসব?
---তোমার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। জানালাটা বন্ধ করে চলে যাও।
.
মমতা রহমান জানালা বন্ধ করে চলে গেলেন। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বালিশের পাশে ফোনটার ভাইব্রেশনের শব্দে কেঁপে উঠে। ফোনটা হাতে নেয় ফারহান । স্ক্রিনে ভেসে উঠে সেই নাম্বার। ফারহান রিসিভ করে,
---হ্যালো,,,
---আপনি কি একটু ছাঁদে আসবেন,,?
---তুমি কি ছাঁদে? আর এই সময়ে ছাঁদে কেনো,,?
---আপনি আসবেন কিনা বলেন? (অভিমানি সুরে)
---ওকে আসতেছি,,,! তুমি দুই মিনিট দাঁড়াও,,,।
.
ফোন কেটে দেয় নিশাত। ফারহান অবাক হয়ে যায়। নিশাতের কথা মত শিকার হয়ে গেলো।
একটুখানি বসে রইলেন। অস্থিরতা বোধ হচ্ছে। এমন হচ্ছে কেনো?
ছাঁদের দিকে পা বাড়ালেন ফারহান। আর ভাবছে, আমি কি তার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে গেছি? নাকি অন্য কিছু?
.
.
অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি । অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হল , ফারহান আসলো ।
ফারহান এসে নিশাতের কাছে দাঁড়িয়েছে। মুখটা কেমন যেনো মলিন হয়ে আছে। ছেলেটা সত্যি খুব ভালোবাসে মিষ্টিকে। তাই নিশাত আগ বাড়িয়ে কথা বললো,
---ভাল আছো , ফারহান ?
---হ্যাঁ , তুমি ?
---মিথ্যা বলছো কেন ? আমি জানি তুমি ভাল নেই ।
---আরেহ না, তোমার ভুল ধারণা। আমি ভাল আছি তো ।
---আমি সব জানি । মিষ্টি তোমার সাথে এরকম করবে তা আমি কখনো স্বপ্নে ও কল্পনা করি নি ! সে তো জানতো তুমি কেমন,,। তবুও সে অবিশ্বাস করলো।
---তাহলে তো দেখছি সব জেনেই গেছো ।
---চৈতী যদি না বলতো তাহলে কখনোই জানতাম না ! আর সেদিন শুধু ওইটুকু শুনেছিলাম। তারপরে চৈতীর কাছে থেকে একটু একটু করে সব শুনেছি।
---ও,, তাহলে ভালো করেছো। কিন্তু, তুমি আমাকে ভুলে যাও নিশাত। তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাও প্লিজ,,,
---আমি দূরে সরে যেতে চাইনা ফারহান । তোমার পাশেই থাকতে চাই । আরো বেশি কিছু হয়ে তোমার পাশে থাকতে চাই !
---মানে ?
---আমি তোমাকে ভালবাসি , ফারহান ! কেনো বোঝনা ফারহান,,!
---করুণা দেখাচ্ছো ?
---যদি করুণা দেখাতে হত তাহলে এতদিন ধরে ভালবেসে আসতাম না ।
---কি ?
---আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালবাসি । সেইদিনের এর শুরু থেকেই । কিন্তু তা আর বলার সুযোগ পাই নি । এখন সুযোগ পেয়েও আমি তোমাকে হারাতে চাই না । প্লিজ , ফারহান ! একবার তোমাকে ভালোবাসার সুজুক করে দাও। শুধু একটা বার। দেখবে তোমার মিষ্টির প্রতি যতটা অভিমান ছিল, সব অভিমান আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে পাল্টিয়ে দেব। তোমাকে এটাও প্রমাণ করে দেব। পৃথিবীর সব মেয়ে এক না ফারহান। হয়তো মিষ্টির মত মেয়েদের ভিড়ে আজও অনেক মেয়ে আছে যারা শুধু একটু ভালোবাসা পেতে চাই। আর কিছুই চাই না ফারহান।
---আমার ভয় করে যদি আবার কষ্ট পেতে হয় ? তাহলে আমি আর বাঁচবোনা। একদম শেষ হয়ে যাব। যেমনটা একটা মোমবাতি তার ভেতরে থাকা সুঁতো মত পুড়ে শেষ হয়ে মিশে যাব।
---আমাকে বিশ্বাস করতে পার , কোনদিন কষ্ট পাবে না । আ,,,আমি কো,,কো,, কোনদিন অভিযোগ করবোনা। শুধু বিশ্বাসটা রয়ে যাবে তোমার প্রতি। হাতে হাত রাখবে ফারহান ?
.
কথাটা বলে নিশাত কেঁদে দিল। মেয়েটা অনেক ভালোবাসে বোধহয়। কিন্তু কোথায় থেকে সেই সাহস হয় না হাতের উপর হাতটা ধরে রাখতে।
---আমাকে ভাবতে হবে নিশাত। আমি দ্বিতীয় করে কষ্ট পেতে চাই না। যদি কখনও আবার কষ্ট পাই। আমি তাহলে ম,,,
.
কথাটা বলতে পারলোনা ফারহান। তার আগে নিশাত হাতটা ফারহানের ঠোঁটের উপরে রাখে। কেমন জানি অনুভুতি শিহরণ হয় ফারহানের ।
এ কেমন অনুভুতি?
---এই ছেলে তুমি আর কখনও মরার কথা বলবেনা।
---যদি কখনও,,,
---চুপ,,, একদম চুপ।
---আমার কোন অভিযোগ নেই। তোমাকে আমি টাইম দিলাম। যতদিন খুশি ভেবে নিতে পার। আমি অপেক্ষায় থাকলাম। কিন্তু,,,,
.
কিন্তু কথাটা বলে নিশাত থেমে যায়। ফারহান কিছু বলতে বলছেনা। মুখে কেমন জানি কথা আটকে আসে। আগেও এরকম হয়েছে। এখনও তার ব্যক্তিম নয়। তবুও অনেক কষ্টে বলে উঠলো,
---কিন্তু কি,,,?
.
নিশাত ফারহানের দিকে তাকায়। ফারহান শুনতে আগ্রহি।
---আমার বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত।
---কবে তোমার বিয়ে,,,?
---বাসায় আব্বু বিয়ের আলোচনা করতে শুনেছি। খুব শীঘ্রই হবে হয়তো,,।
---ও তাহলে তো ভালো। তুমি বিয়ে করে নাও। অনেক সুখি হবে। বিয়ের পর বরকে ভালোবাসবে। আর বিয়ের আগে প্রেম-ভালোবাসা ইসলাম ধর্মে নেই। এর চাইতে বরের সাথে বিয়ের পর চুটিয়ে প্রেম করবে।
---তাহলে তুমি কেনো করেছিলে,,,?
---আমি জানি না। তবে এর জন্যই হয়তো, মহান আল্লাহ্ তায়ালা! আমার সাথে মিষ্টির বিয়ে লিখে রাখে নি।
---আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবোনা। যদি জোর করে তাহলে আমি,,,,
---না না,, আত্মহত্যা মহা পাপ। এটা কখনও করনা।
---আমি গেলাম। তুমিও ছাঁদ থেকে চলে যাও,,,।
.
কথাটা বলে নিশাত ফারহানকে পাশ কেটে চলে গেলো। ফারহান পিঁছন ঘুরে তাকিয়ে রইলো নিশাতের যাওয়ার দিকে।
নিশাত ছাঁদ থেকে নেমে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে। ফারহান এখনও তাকিয়ে সিঁড়িপথের দিকে।
একটুপর ফারহান নেমে যায় ছাঁদ থেকে।
.
চলবে,,,

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম (১৮ তম পর্ব)

ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে।এ বৃষ্টি কখন থামবে কে জানে।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।ক্ষণিক বাদেই নিচে নেমে এলো নিশাত ।

কিছুই ভালো লাগছে না আজ নিশাতের! ক্লাসের একগাদা কাজ! মাথাটা ঝিমঝিম করছে ভীষণ! এক কাপ কফি পেলে মন্দ হতো না।
---আম্মু,,, ও আম্মু,,,
.
কোন সারা শব্দ পেল না নিশাত। হয়তো ওয়াশ রুমে গেছে। যাহোক, নিশাত আর ডাক দিলনা। ক্লাসের একগাদা কাজ নিয়ে টেবিলে বসে পড়লো।

এতো লেখা আর প্যাক্টিস করতে একটুও ভালো লাগেনা। রুলটা নিয়ে কিছু কাগজ তৈরি করলো। এর মধ্যে মাজেদা বেগম রুমে এলো। রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলো,
---কি রে নিশাত আমাকে ডেকেছিস?
.
নিশাত মন ভার করে মায়ের দিকে তাকালো। কিছু না বলে আবার লিখতে শুরু করলো। মাজেদা বেগম বুঝতে পারলেন মেয়ের মন খারাপ।
---এক কাপ কফি বানিয়ে এনে দেব।
---উমমম দিলে ভালো হয় আম্মু,,। (লেখতে লেখতে)
---আচ্ছা আমি চটপটে ২ কাপ কফি করে এনে দিচ্ছি।
.
কথাটা বলে মাজেদা বেগম চলে গেলো কফি বানানোর জন্য। এদিকে নিশাত টেবিলে বসে একগাদা কাগজ নিয়ে বসে লেখালেখি করছে বিষ্মতা মনে।
.
একটু পর মাজেদা বেগম চলে এলেন গরম গরম দুকাপ কফির নিয়ে।
নিশাতকে এক কাপ দিয়ে নিজে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে এসে বসে পড়লেন মেয়ের পাশে।
---কি রে কফি খা,,। গরম গরম খেলে মজা পাবি। ঠান্ডা হলে আর পাবিনা সে স্বাদ ও মজা।
---জানো আম্মু। কাল ক্লাসে কত কাজ দিছে। (মুখটা ভার করে)
---ভার্সিটিতে না গেলে এরকম কাজতো ভিড় ভাগবে তাই না। এখন তো ঠিকমত ভার্সিটিতে যেতে চাস না। কেনো,? কিছু হয়েছে?
.
মায়ের কথাটা শুনে নিশাত তাকালো মায়ের দিকে। এমন প্রশ্ন কেনো করছে? আর প্রশ্ন করা স্বাভাবিক। ঠিকমত ভার্সিটিতে না গেলে এরকম তো হবে। মা তো ঠিক বলেছে।
---কি রে। কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস,,। কিছু হয়েছে কি বল? যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে আমাকে বলে ফেল। দেখবি মনটা ফ্রেস থাকবে আর অনেক ভালো লাগবে।
---একটা কথা বলবো আম্মু রাগ করবেনা তো।
.
মেয়ের এরকম প্রশ্ন শুনে যতটা অবাক হয়েছে। তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে নিশাতের তাকানো আর কথা বলার ভাঙ্গবংগি দেখে।
---আরে রাগ করবো কেনো বল। আর কেনো রাগ করবো আমি। শোন, আমি তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড। নির্ভয়ে আমাকে বল।
---আসলে আম্মু,,, আমি একজনকে খুব পছন্দ করি। আর অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।
.
মাজেদা বেগম অবাক হয়ে যায় কথাটা শুনে। গ্রেজুয়েশন কম্পিলিট না করে বিয়ে টিয়ে করবেনা বলার মেয়ের মুখে কি শুনছে।
---কে ছেলেটা? ছেলেটার নাম কি? ছেলেটা কি করে? কোথায় বাড়ি ?
একগাদা প্রশ্ন করে বসে মাজেদা বেগম। এরকম প্রশ্ন দেখে নিশাত অবাক হয়ে যায়!
---আম্মু নাম এখন বলছিনা। তুমি ছেলেকে চেনো। বাড়ি এই শহরে। আর ছেলে কিছু করেনা। বর্তামানে বেকার। জানি না সে কি করবে।
---মানে,,? চাকরি করবেনা?
---জানি না। আর ছেলেটা আমাকে ভালোবাসেনা।
---তাহলে,,।
---আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।
---এসব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে জেরে ফেল। গ্রেজুয়েশন কম্পিলিট কর। তোর পছন্দমত ছেলের সাথে বিয়ে দেব।
---আমি শুধু ওকে চাই আম্মু। অন্য কাউকে না।
---আচ্ছা এখন হাতের কাজটা শেষ করে ঘুমা।
---হুমম।
---আর এক কাপ কফি বানিয়ে দিয়ে যাব।
---না আম্মু লাগবেনা। একটুপর শুয়ে পড়বো। বাকি কাজ সকালে শেষ করবো।
---ঠিক আছে। আমি গেলাম।
.
মাজেদা বেগম কফির মগ নিয়ে চলে গেলো। সে জানে মেয়েকে কিছু বললে পড়াশোনা ক্ষতি হবে। তার চাইতে যখন মনমানসিকতা ভালো থাকে তখন কথাটা বলবো।

নিশাত কিছুক্ষণ লেখে শুয়ে পড়ে। সে খুব চিন্তিত! আব্বু যদি না মেনে নেয়। আর ছেলেটা কে? সেটা জানলে তখন আর না করবেনা।
এলোমেলো চিন্তায় ভরপুর মাথা ভর্তি। এপাশ ওপাশ করে ঘুমিয়ে যায়।
.
.
মিষ্টির আজ বিষন্ন মনে হচ্ছে।

--–মন খারাপ?

মিষ্টির কোনো জবাব নেই।

–--কি হলো? কথা বল। উফ কি গরম রে বাপ!! আইসক্রিম খাবে? নিয়ে আসি?
.
মিষ্টির জবাব নেই।
ফারহান চলে যায় আইসক্রিমের দোকানে। আইসক্রিম নিয়ে আবার চলে আসে রুবাইয়ার কাছে। আইসক্রিম নিয়ে হাজির।

–--এই নে। খা। কিরে ধর!! কতক্ষণ ধরে থাকবো? না খেলে বল, আমিই দুইটা সাবাড় করে দিচ্ছি। হাঃ হাঃ হাঃ

–--তুই আমার বাসায় আর আসিস না। আমার সাথে দেখা করার চেষ্টা করিস না। ফোনে কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করিস না।

গম্ভীর ভাব নিয়ে কথা গুলো বললো মিষ্টি ।
ফারহান তেমন পাত্তা দিলো না। এই আর নতুন কিছু না। মিষ্টি মাঝে মাঝেই এমন করে। আবার ঠিক হয়ে যায়।

–--এই নাও গল্পের বই। তোমার জন্য এনেছি। পড়া শেষে দিয়ে দিবে।

–--না। নিবো না। আমি চাই না তুই বইয়ের বাহানা ধরে আমার সাথে কোনো প্রকারের দেখা করার চেষ্টা করিস। আমি যাচ্ছি। একটা রিক্সা ভাড়া করে দে তো।

ফারহান কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিষ্টি রিক্সায় ওঠে, হুড উঠিয়ে চলে গেলো। ফারহান কিছুই বুঝতে পারলো না। বুঝবে কি করে!! বেচারা মিষ্টির কথাগুলোই যে এখনো হজম করতে পারলো না। বাসে বসে বসে ভাবছে এমন আচরণ করার কারন কি? আমি কি কোনো ভুল করেছি? কেনো এমন করলো? বাসায় গিয়ে ফোন দেবো।

কারও কথায় ঘোর কেটে যায় ফারহানের। ওহ্! রিক্সাওয়ালার কথা শুনে,,।
---মামা আইয়া পড়চি,,। এহুন নামেন। নাকি আরও সামনে লইয়া যাইমু।
---না মামা দরকার নেই।
---আমনের কি মর খারাপ মামা।
---না মামা।
---বহুত দিন পর এই হানে আইলাম আমনেরে নিয়া। তা এহুন তো আইসেন না এই হানে।
.
ফারহান মৃধু হেসে দেয় রিক্সাওয়ালার কথা শুনে। বয়স বেশি না রিক্সাওয়ালার। আগে প্রায় আসতো এখানে আমাদের নিয়ে। মিষ্টির পছন্দের রিক্সাওয়ালা ছিল জামাল মিঞা (রিক্সাওয়ালার নাম)।
---মামা হাঁচ্চা কইরা একটা কথা কইবেন?
.
রিক্সাওয়ালার কথা শুনে ফারহান রিক্সাওয়ালার দিকে তাকালো প্রশ্নের চোখে। সেটা বোধহয় জামাল মিঞা বুঝতে পেরেছে। জামাল মিঞা বলে উঠলো,
---এইভাবে তাকাইয়া আচেন ক্যা মামা। মন কি খুব খারাপ। যদি খারাপ হয় তাইলে কিছু কমুনা।
---না। তুমি বল!
---আসলে কথা হইলো,, রিক্সায় উঠে কি যেন মনে মনে ভাবছিলেন। আমি পিছনে অনেক বার তাকাইছি। আপমনে তহুন বুঝতে হারেন নাই। কিচ্চু হইছে আমনের?
---না। মন খুব খারাপ।
---কেনো কি হইচে। হেই আপা বুঝি আর ফেরত আইসে নাইক্যা।
.
জামাল মিঞার কথা শুনে অবাক হয়ে যায় ফারহান। কি করে একথা জানলো।
---আপনে অবাক হইতাচেন আমার কথাটা হোনার পর।
---হুমম।
---আসলে একদিন আপনেরে কাঁদতে দেখতেছিলাম এইহান থেকে বসে। সেদিন কিচু কইনাই আপনারে। পরে আপনের ফেরেন্ড সায়েমকে জিগাইছিলাম। হেতি কইচে।
---ও,,,তোকে কেনো ভালো লাগে জানিস,,,?
---না মামা।
---তুই খুব ভালো। বিশেষ করে তোর কথা আমার শুনতে খুব ভালো লাগে। কিচ্ছু লুকাতে পারিস না।
---হাঁচ্চা কইচেন মামা। তার জন্য মা আমারে বহুত গ্যাল (বকা) দেয়। আমি আপনেঘোরে মতন চালাক হইতে চাই। কিন্তু, বহুত চেষ্টা করচি। পারিনা। পরে যেমন আচি তেমনি থাহুম।
---আচ্ছা আমি যাচ্ছি। তুই ওই দোকান থেকে যা ইচ্ছে খাবি। আমি যাওয়ার সময় বিল দিয়ে দেব।
---আচ্চাঁ মামা। আর কইতাচি একটু আইগা দেই সামনে,,।
---নারে। তুই যা।
.
জামাল মিঞা রিক্সা রেখে চলে গেলো একটা টং এর দোকানে। আমি তাকিয়ে আছি জামাল মিঞার দিকে। ছেলেটা খুব সহজ সরল। কথাগুলি বেষ্ট মিষ্টি।

আমিও হাঁটা দিলাম রুবাইয়ার দিকে। জামাল মিঞাকে সেই প্রথম দিন বলেছিলাম। এইখানে নামিয়ে দিবি। এই খোঁলা আকাশের নিচে বাতাশের সাথে হাঁটতে খুব ভালো লাগে। তাই ৩ বছর ধরে তাই করে যাচ্ছে।

আগে সপ্তাহে ১ বার বা ২ বার আসতাম এখানো। এখন আর প্রায় ১ ধরে বেশি আসা হয় না।
আমি জামাল মিঞার দিকে একবার তাকালাম। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না কোথায় বসে আছে । বেশ দূরে চলে এসেছি। জামাল মিঞা দোকান্দারের সাথে বিভিন্ন হাসি তামাশা করবে।
.
আমি হাঁটতে চলে এলাম রুবাইয়ার কাছে । আমার দিকে একবার তাকালো পরক্ষণে রাগি চেহারা নিয়ে সামনের দিকে নদী দেখতে থাকে। আমি কিছু না বলে পাশে পেপার রাখা ছিল একটা পাথর দিয়ে রাখা ছিল। যাতে পেপারটা বাতাশের সাথে উুঁরে না যায়।
আমি পেপারটার উপর থেকে ছোট পাথরটা একটু দূরে রেখে পেপার ছড়িয়ে বসে পরলাম। যাতে পাশে রাখা পাথরটা দিয়ে ছোটদের মত খেলা যায়।
আমার বসা দেখে দিগুণ রাগে তাকায়। আর রাগ হওয়া স্বাভাবিক। প্রায় ১ ঘন্টা ধরে এখানে বসেছিল। আমি রুবাইয়ার দিকে তাকিয়ে একটু মৃধু হেসে বলে ফেললাম,,
---Sorry,,, I am really many many sorry,,,
.
কথাটা শুনে সাপের মত ফুঁস করে উঠে।
---এই তুই এতোক্ষন কোথায় ছিলি হে,,,,?আমি সেই কখন থেকে তোর জন্য এই খানে দাড়িয়ে আছি । তুই যানিস আমি এখানে তোর জন্য
কতোক্ষন দাড়িয়ে আছি আর তুই এতোক্ষন
পড়ে এখন আসলি । বল এতোক্ষন কোথায় ছিলি বল ?
.
একদমে এতগুলি কথা বলে ফেললো। আমি শুধু হেসে যাচ্ছি। একদম চেন্জ হয় নাই রুবাইয়া।
---এই তুই দাঁত বের করে হাসবিনা বলে দিলাম।
---ওকে, ওকে স্যরি,,,।
---আবার হাসছিস,,,
---তুই আমাকে কিছু বলতে দিলি এসেছি হতে তুই সেই তোর বকবকানি শুরু করে দিলি । আর দাঁড়িয়ে কোথায় বসেই তো ছিলি ।
---কি আমি বকবকাই খালি ? আমি যে তোর জন্য এই রোদের মধ্যে তাও আবার এই প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেক্ষন।
---তুই সব সময় আমার সাথে এই ভাবে মেঝাজ দেখিয়ে কথা বলিস । কেন তুই আমার সাথে একটু মিষ্টি করে কথা বলতে পারিস না ?
---তোর সাথে মিষ্টি করে কথা বলতে আমার বয়ে গেছে । যাহ আজ থেকে তোর সাথে ব্রেক আপ করে দিলাম বন্ধুত্বতের। যা তোর গার্লফ্রেন্ডকে বল। সে মিষ্টি করে বলবে। আমি না।
---আশ্চার্য ! তুই আমার সাথে এই পাবলিস ঝগড়া কেন করতাছিস । আমার আসতে দেরী হয়েছে , কারন আমার একটু কাজ ছিলো তাই ।
---তা দুই দিন আগে যে দেখা করতে বললি। তখন তো কিছুই বললিনা। এখন কিসের কথা। তোর গার্লফ্রেন্ড যদি জানে। যে, একটা মেয়ের সাথে বসে আছিস। তাহলে নির্ঘাত ব্রেকঅাপ।
---আরে আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই এখন।
---কি বলিস এসব। এতো সুন্দর হ্যান্ডস্যাম ছেলে প্রেম করেনা। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এই নদী তুমি আমাকে ভাঁসিয়ে নিয়ে যাও। নাহলে আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা।
---একদম ফাজলামি করবিনা।
---ওকে যা সব বাদ। কি জন্য ডেকেছিস বল।
---আমাকে একটা মেয়ে পছন্দ করে। ভালোবেসে ফেলেছে ।
.
আমার কথাটা শুনে রুবাইয়া কেমন করে তাকালো আমার দিকে।
ফারহান প্রথম থেকে বলতে শুরু করে,,,,
মেঘ জমে গেছে নিল আকাশের বুকে। ঠাণ্ডা বাতাস ভয়ছে । চারদিকে একদম নিরিবিলি। বাতাশের শব্দ বাদে তাদের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

সব কিছু শোনার পর রুবাইয়া বলে উঠলো,
---দোস্ত দেখ এই ভাবে জীবন চলে না।
---কেন কি ভাবে চলে,,?
---দেখ মেয়েটা তার স্বার্থের জন্যে চলে গেছে। সে নিশ্চই সুখেই আছে আর তুই নিজের জীবনটাকে বরবাদ করে দিচ্ছিস। আর মেয়েটা তোকে ভালোবেসে যাচ্ছে। তুই মেয়েটাকে বিয়ে কর।
---আমি কখনও কাউকে বিয়ে করবো না।
---তুই বুঝতেছিস না কেনো বল,,! যে মেয়েটা তোকে ছেড়ে চলে গেছে তার স্মৃতি মনে করে কেনো বিয়ে করবি না। নিজের জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিস না।
---কই। আমি তো নষ্ট করছিনা। আর বিয়ে না করে ফিলিংস অন্য রকম। একেই বলে জীবন। কোন সাংসারিক মায়া নেই কিছু নেই আহ কি শান্তি।
---তোর ধারণা ভুল রে। আচ্ছা, ধর মেয়েটা তোকে খুব খুব ভালোবাসলো। তুই মিষ্টির মত তাকে ছেড়ে চলে গেলি তখন কেমন লাগবে বল। নিজেকে বুঝতে শেখ।
---এই তুই আমাকে ইমশোনালের কথা শোনাবি না।
---দেখ দোস্ত। এটা ইমশোনালের কথা না। একটা মেয়ে পারে একটা জীবন ছিন্নভিন্ন করতে। আবার তেমনি একটা মেয়ে পারে ছিন্নভিন্ন জীবনটাকে সুন্দর পরিপূরণ জীবন গড়িয়ে দিতে।
---এসব কথা বাদ দে রুবাইয়া,,,আমি যেটা বললাম সেটা করবি কিনা। সেটা বল?
---আমি পারবো না রে। এরকম মিথ্যে অভিনয়ে একটা জীবন শেষ করে দিতে। আমিও একটা মেয়ে। আমি পারবো না। আমার হবু স্বামী জানলে কি হবে বুঝতে পারছিস। দোস্ত Place don't mind...
---তাহলে কি আর করা। নতুন কাউকে বলতে হবে। আমি জেনে শুনে কাউকে এরকম বিপদে ফেলতে পারি না।
---শোন দোস্ত,, মেয়েটা যদি তোর সব কিছু জেনে শুনে তোকে বিয়ে করতে রাজি থাকে তাহলে তুই কেনো পারছিস না।
---নিশাত সব জানে। চৈতী সব বলেছে। তারপরে মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে। সে কি জানে না। আমি তাকে সুখি করতে পারবোনা।
---শোন, তুই যেভাবে ভাবছিস। সেভাবে সে হয়তো ভাবছে না। সে তো এটাও ভাবতে পারে।যে, তুই যেরকম মিষ্টিকে যতটা ভালোবাসতে পারিস। ঠিক ততটা তাকেউ পারবি।
---আমি পারবো কিনা জানি না।
---এটা সিম্পল ম্যান। মিষ্টির সব স্মৃতিপট মন থেকে মুঁছে ফেল। নতুন কাউকে নিয়ে আবার স্বপ্ন দেখ। দেখবি মিষ্টির চেয়ে মেয়েটা তোকে হাজার হাজার গুণ বেশি ভালোবাসবে।
---আমি যে মিষ্টিকে কথা দিয়েছি কখনও তাকে ছাড়া জীবনে কাউকে ঝরাবো না।
.
ফারহানের কথা শুনে রুবাইয়া রেগে যায়।
---তোকে এতক্ষণ এই বুঝালাম। You are,,, (প্রচন্ড রেগে দাঁতে দাঁত চেপে)
---কি হলো বলনা। থেমে গেলি কেনো। বল,,।
---দেখ ফারহান আমি যদি আগের রুবাইয়া থাকতাম। দেখতি কি করতাম।
.
ফারহান বুঝতে পারে রুবাইয়া রেগে গেছে। আর রেগে যাওয়াটা স্বাভাবিক। একটা মানুষকে টানা প্রায় ১ ঘন্টা ধরে শুধু বুঝাচ্ছে, শুধু বুঝাচ্ছে। কিন্তু, ঘুরে ফিরে এক কথা বলে যাচ্ছে ফারহান।
---কি করতি,,?
.
ফারহান কথা বলে ছলছল চোখে রুবাইয়ার দিকে তাকায়। চোখের কোণে পানি জমে গেছে। রুবাইয়া বুঝতে পারলো ফারহান আজ খুব কাঁদবে। ফারহান রুবাইয়ার চুপ থাকা দেখে আবার বলে উঠলো,
---কি করতি রে বল,,,।
---কি করতাম জানিস,,। তোকে জোর করে বিয়ে করতাম। দেখাইয়া দিতাম মিষ্টি নামের মেয়ে বাদে হাজার হাজার মেয়েরা তার থেকে দিগুণ ভালোবাসতে পারে।
---তাই,,,
---হ্যা তাই। দেখতি কত ভালোবাসতে পারে একটা মেয়ে। শুধু ওই সব মিষ্টি নামের মেয়েরা বাদে এরকম হাজার মেয়েরাও পারে ভালোবাসতে।
.
ফারহান অন্য ফিরে চোখের পানি মুঁছে ফেললো। সেটা রুবাইয়া দেখে ফেলে। ফারহান মনে করেছে রুবাইয়া নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আগের মত। কিন্তু, ফারহান রুবাইয়ার দিকে তাকাতে একটু কষ্ট পায়। তার দিকে তাকিয়ে আছে রুবাইয়ার চোখে পানি জমে গেছে।

হ্যা রুবাইয়া আমি জানি তোরাও পারিস। কিন্তু, নিজেকে নিয়ে যখন ভাবি তখন মিষ্টি নামে সেই মেয়েটা তখন চোখের সামনে ভাসতে থাকে। স্বপ্নঘরে যখন নতুন করে স্বপ্নবুনতে চেষ্টা করি। পারি না রে রুবাইয়া।
এটাও জানি তুই আমাকে এক সময় খুব ভালোবাসতি। কিন্তু, আমি ভুল মানুষের প্রেমে আজ জীবনের মোর চলে গেছে অন্ধকার গলির দিকে।
---কি রে বাসায় যাবি না,,,
.
রুবাইয়া ফারহানের কথা শুনে চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু মুঁছে ফেললো। তারপর আস্তে করে বলে উঠলো,
---চল এখান থেকে উঠি,,,,
---হুমম।
---একটা কথা রাখবি,,।
.
ফারহান রুবাইয়ার দিকে তাকায়। ফারহানও জানে কি বলবে রুবাইয়া। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কেউ আমার ভেতর ছুরি দিয়ে ভেতরের কাল্লাহ্ জিব্বাহ্ কেটে দিয়েছে। যার ফলে কোন কথা বের হচ্ছে না।
ফারহানের তাকানো দেখে রুবাইয়া বলে উঠলো,
---মেয়েটাকে ঠকাস না রে। সে সব জেনেশুনে তোর লাইফে আসতে চাইছে । তুই বাধা দিস না। বিয়ের আগে প্রেম না করে একদম বিয়ে করে ফেল। দেখবি তোর সব ভুল ধারণা প্রমাণ হবে।
.
ফারহান শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। এরকম একজন বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। নিজের স্বার্থের জন্য কিছু করছেনা। আমার ভালোর জন্য সব করতে চাচ্ছে।
ভালোলাগা মানুষকে এরকম স্যলিশন কে দিবে। সবাই তো নিজের স্বার্থের জন্য সব করে।
রুবাইয়া আবার বললো,
---দেখ দোস্ত, একটা মেয়ের ভালোবাসা পেলে তুই সব বুঝতে পারবি,,। একটা মেয়ে কতটা ভালোবাসতে পারে। তখন আমার কথা মনে পরবে।
---হুম।
.
ফারহান মাথা দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে সিকার করলো।
---সব মুঁছে ফেল। পরবর্তী জীবন সুন্দর করে সাঁজা। একটা রিকুয়েস্ট রাখিস শুধু,,, এভাবে নষ্ট করিস না জীবনটা। প্লিজ,,,,
.
ফারহান কিছুই বললো না। পাথরের মত জর বস্তুর মত বসে আছে। ফারহান জানে রুবাইয়ার কথাটা ছোট হলে সারমর্ম অনেক অনেক বড়।।
---রুবা চল এখন উঠি। আন্টি অনেক টেনশনে আছে। না বলে বের হইছিস মনে হয়।
---রুবার কথা কি রাখা যায় না রহান।
---দোস্ত এই নামটাও মনে রেখেছিস।
---কেনো, তুই যদি রুবা নামটা মনে রাখতে পারিস। আমি কেনো পারবোনা।
---আন্টি টেনশনে আছে। তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যাবি কিন্তু,,,
---হুমম যাব তো,,, প্রমিস করতে পারলিনা।
---আমি ভেবে জানাবো। আর শোন, তোর বরকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবি কিন্তু,,,।
---হুম,,
.
ফারহান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। রুবাইয়া উঠে দাঁড়ায়। দুজনে উঠে বাসার দিকে রওনা দিয়েছে। কেউ কোন কথা বললো না।

রিক্সাওয়ালার কাছে গিয়ে রিক্সাতে উঠে পড়লো রুবাইয়া। ফারহান জামাল মিঞাকে ডাকতে টং এর দোকানে চলে গেলো।
দোকান্দারকে জামালের খাবারে বিল দিয়ে চলে আসে ফারহান ও জামাল মিঞা। ফারহানের এরকম মন মরা দেখে জামাল মিঞা এক বার জিজ্ঞেস করেছিল,, মামা কি হইচে আপনের। মুখটা শুকনা শুকনা লাগছে। জামালের প্রতিউত্তরে ফারহান, মিথ্যে হাসি দিয়ে বলে,," কিছুই হয়নি রে,, ।
জামাল মিঞা বুঝতে পেরে আর কিছু জিজ্ঞেস করে নাই।
রুবাইয়াকে বাসায় নামিয়ে ফারহান সোঁজা বাসায় এসে রুমে লক করে শুয়ে থাকে।
.
রাত ৭টার সময় টেবিলে গিয়ে পানি খেয়ে আবার রুমে চলে আসে ফারহান।
ফারহানের মন ভয়ানক খারাপ। হঠাত্‍ করে খারাপ হয় নি। প্রতিদিন একটু একটু করে খারাপ হয়েছে। কিন্তু প্রতিদিনের মন খারাপগুলোকে সে মুছে ফেলতে পারে নি। তাই সেই ছোট ছোট মন খারাপগুলো একত্রিত হয়ে এক বিশাল মন খারাপের তৈরি করেছে। আর আজ বেশি মন খারাপ হয়েছে রুবাইয়ার কথাগুলি শুনে । বাসায় এসে অনেক কেঁদেছে ফারহান।

একটু পরে ফারহানকে চা দিয়ে এলো ফারহানের মা মমতা রহমান । ফারহান চোখ মুঁছে স্বাভাবিক হয়ে শুয়ে থাকে কারও আসার শব্দ শুনে। ফারহান চা শেষ করে বলল,
---"আম্মু আজকের চা'টা কিন্তু অসাধারণ বানিয়েছো"।
ছেলের কথাটা শুনে মমতা রহমান বলল,
---"আমি কতকাল চা বানিয়ে খাওয়াবো বল... আমাকে একটু চা বানিয়ে দেওয়ার মতো একজন থাকলে খুব ভালো হতো।
---কেনো আম্মু,,? একটা কাজের বুয়া রেখে দিতে পার। তাহলে আর তো তোমার চা বানিয়ে দেওয়া লাগেনা।
---বুয়া কি রাতেও কাজ করতো বল।
---তা ঠিক বলেছো।
---তোর একটা বউ থাকলে খুব ভালো হতো। প্রতিদিন সকালে, বিকালে এবং কি রাতে এক কাপ করে চা বা কফি বানিয়ে দিত।
---এসব চিন্তাভাবনা বাদ দাও আম্মু।
---তুই একটা বিয়ে কর বাবা।
---আম্মু,,,
---নিশাত মেয়েটা খারাপ না বাবা। একদম রুপ দেশের রাজকন্যার মত দেখতে। লক্ষির মত।
---আম্মু,,,আবার,,,
---ভেবে দেখিস ।
.
কথাটা বলে মমতা রহমান রুম থেকে চলে গেলো।
ফারহান আনমনে ভাবতে থাকে মায়ের কথাটা।
.
.
টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে সাথে হালকা বাতাস। ভার্সিটিত থেকে বাড়ি ফিরছে নিশাত ।
বাসায় আশা মাত্র বৃষ্টি আকাশ ভেংগে পড়তে আরম্ভ করে দিয়েছে।
রুমে এসে বারান্দায় চলে গেলো। বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা পানির ছিঁট এসে চোখে, মুখে, হাতে ও শরীরে পড়ছে। কেমন অনুভুতি সৃষ্টি হচ্ছে।
নিশাত কি যেনো ভেবে বারান্দা থেকে চলে গেলো মায়ের রুমের দিকে।

মায়ের রুমের দরজার ভেতর দাঁড়িয়ে বললো,
---আম্মু,,,
.
মেয়ের কথাটা শুনে চোখাটা খুলে দেখে নিশাত দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে।
---কিছু বলবি মা।
---হুমম।
---বল,,,
---আমি ছাঁদে গেলাম।
---এখন তো বৃষ্টি হচ্ছে।
---সেই জন্য তো যাব। আজ বৃষ্টিতে ভিজবো।
---এই একদম বৃষ্টিতে ভিজবি না। সেদিন ভিজে শরীরে জ্বর বেধে ছিলি। আজ বৃষ্টিতে ভিজতে হবেনা। যা রুমে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখ। ভিজতে হবেনা।
---আমি ছাঁদে চলে গেলাম।
---নিশাত,,,
.
কে শোনে কার কথা। নিশাত কথাটা বলে দৌড়ে চলে যায়।

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম (১৭তম পর্ব)

সন্ধ্যার পর আরেক দফা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মমতা রহমান খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা করেছেন। সঙ্গে আছে তার নিজের হাতে বানানো আমের আচার। মিজান সাহেব আম পছন্দ করেন বলে বিয়ের পর থেকেই মমতা রহমান আমের সিজনে প্রায় প্রতিদিনই বাসায় আসার সময় আম নিয়ে আসেন মায়ের বাড়ি থেকে। বছরের এই সময়টায় প্রচুর আম পাওয়া যায়। অনেক বছর আগে এমনই একটি রাতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে খেতে বসেছিল। সবাই অনেক কিছু বলাবলি করেছিল।

কিন্তু আজকে সবাই চুপচাপ। একমনে ইলিশ মাছ আর আচার দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে যাচ্ছে। মমতা রহমান প্রথম মুখ খুললেন, ‘
---আমার মনে হয় সুমনকে একটু বলে দেখতে পারি। ও একটু খোঁজ নিয়ে দেখুক, আসলেই রকি অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে কিনা।’
.
মমতা রহমানেে কথায় মনে হয় সবারই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সুমন ওদের ছোট মামা। পেটে জিলিপির প্যাঁচওয়ালা মানুষ। প্যাঁচ নিয়েই তার কারবার। এ কারণে নিজের সংসারটাও টেকাতে পারেনি। প্যাঁচ সৃষ্টিকারী মানুষরা যখন যেখানে থাকে, সেখানেই প্যাঁচ বাঁধায়; এমনকি নিজের সংসারেও। দেখা গেছে, সংসারই হয় তাদের প্রথম টার্গেট। তাদের মূলমন্ত্রই মনে হয়, ‘প্যাঁচিং বিগিনস অ্যাট হোম’! তবে তারা শুধু প্যাঁচ সৃষ্টিই করতে পারে, প্যাঁচ ছাড়াতে আর পারে না।
চৈতী বলল,
---‘ওনার কথা বোলো না তো, মা। যে কয়টা কথা বলে, সব ফালতু কথা! মামার সঙ্গে কথা বলতেও আমার কেন জানি ভালো লাগে না।’
ফারহান মুখ খুলল, ‘
---আমি বুঝি না, সামান্য একটা জিনিস নিয়ে তোমরা না,,,,।
---ভাইয়া এইটা সামান্য জিনিস বলছিস,,! একটা সংসার গড়তে কত কষ্ট,,? তা তুই বুঝবিনা।
মিজান সাহেব বেশ রেগেই গেলেন।
---এই তোরা কি ঝগড়া করবি নাকি খাওয়া দাওয়া করবি,,। (ধমকের সুরে)

সবাই একদম চুপ মেরে যায়। কারণ, মিজান সাহেব বেশ শান্ত সুস্থ মানুষ। কথার চেয়ে কাজ বেশি করতে পছন্দ করেন। নাহলে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে নামি দামি অফিসার থাকতে তাকে "মিজান সাহেব অফিসাকে " সম্মান পদক দিত না সরকার। তাকে এক নামে চেনে সৎ পুলিশ অফিসার।

তিনি লক্ষ করলেন কেউ আর কোন কথা বলছেন না। যার যখন যা লাগে সেই কথাটা ব্যতিত অতিরিক্ত কথা বলছেনা। এবং কি, মমতা রহমান কোন কথা বলছেন না। তাই তিনি এবার মুখ খুললেন,,
---ফারহান,,।
---জ্বী আব্বু,,।
---তোমার চাকরির ইন্টারভিউ এর খবর কি,,?
---জ্বী ভালো,,।
---কোন কিছু বলেছে,,?
---না। তবে আশা রাখি ইনশা আল্লাহ্! আমি চান্স পেয়ে যাব।
---তোমার কথাটা ঠিক বুঝলাম না ফারহান,,? চান্স পেয়ে যাব ইনশা আল্লাহ্!
---আমার মত অনেক জন ইন্টারভিউ দিয়েছে। মোট ২৫ জন এর উর্ধে হবে। আমার যেরকম রেজাল্ট সেরকম রেজাল্ট ১ জন আছে।
---ও,,,। এই মমতা আর দিয় না আমাকে,,। চৈতীকে আর ফারহানকে দাও,,,।
---না আব্বু আমি আর পারবোনা। (চৈতী)
---আম্মু আমাকে সামান্য আঁচার দাও,,,(ফারহান)
.
মমতা রহমান ফারহানকে আর একটু আঁচার দিল।
মিজান সাহেব আবার বললো,
---তা কতজন নিয়োগ দিয়েছে,,?
---জ্বী আব্বু ৫জন,,।
---তাহলে তো তুমিও টিকবে আশা করি আল্লাহুর রহমতে।
---জানি না।
---বুঝলাম না তোমার কথা,,? তুমি ইন্টারভিউ দিয়েছো বুঝতে পারবেনা।
---আসলে,,, এমডির পরের পদ না পেলে চাকরি করবোনা। আর একটা ছেলে আছে এমডি স্যারের আত্মীয়। তাই কনফিউশন আছি। কিন্তু, কম্পানির চেয়ারম্যান বোধহয় তাকে সিলেক্ট করবেনা। কারণ, আপনাকে নাকি উনি চেনে।
---কি নাম ওনার,,?
---কি যেন নাম মনে পড়ছেনা,,ওহ্ মোঃ ইনতিসার হোসেন তুহিন।
---তুহিন,,।
---আপনি কি ওনাকে চেনেন,,?
---হুমম। এক সময় বন্ধু ছিল। কিন্তু, আমি ঢাবিতে আর তুহিন কুয়েটে চান্স পায়। বেশ কিছুদিন দেখা হয়েছিল। পরে আর দেখা হয় নাই কোনদিন। কিন্তু, তুহিন আমাকে মনে রেখেছে শুনে খুশি হয়েছি। আর দেশের কাজ করতে নিজের পরিবারকে ভুলে গেয়েছিলাম।
---এখন ভাগ্য ফেভার করবে।
---তোমার যদি চাকরি পছন্দ হয়। তাহলে আমি কথা বলে দেখতে পারি।
---জ্বী বলতে পারেন।
.
মমতা রহমান পাশ থেকে বলে উঠলো,
---ফারহান আরও কি আঁচার দেব।
---না আম্মু। অনেক খেয়েছি। আর পারবোনা।
---ঠিক আছে নিয়ে গেলাম তাহলে,,,।
.
মমতা রহমান আঁচার নিয়ে রেখে দিল। চৈতী খাবার খেয়ে রুমে চলে যায়। ফারহানও খাবার খেয়ে রুমে চলে যায়।
মিজান সাহেবের কথার মাঝে কেউ কথা বলতে সাহস পাই না। একমাত্র মমতা রহমান ছাড়া।
পৃথিবীর সবাই বউকে একটু বেশি ভালোবাসে,,,!
.
ফারহান রুমে এসে ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুয়ে পড়ে।

এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু ঘুম তো সহজে আসেনা। আর ঘুম চোখে না আসলে শুধু নিশাতের সেই পাগলামির কথা মনে পড়ে যাই।
.
.
এভাবে কেঁটে যায় দুদিন,,,
ফারহানের মোবাইল বেজে যাচ্ছে।

--–হ্যালো।
---হ্যালো,,।
---বল।
–--তুই বিকেলে আসতে পারবি?

ওপাশ থেকে রুবাইয়া বললো।

--–অবশ্যই পারবো। বান্দা এনিটাইম হাজির। কখন আসতে হবে জনাব?

–--বিকেল ৫ টার মধ্যে।

–--ওকে। আইএম কামিং মাই ডিয়ার।
---ফাজলামি বাদ দে তো,,।
---আরে দোস্ত সত্যি আসবো,,।
---বিকেল পাঁচটা…. আমাদের সেই পুরানো আড্ডার ওখানে,,।
---ওকে,,,।
---ও হ্যা ভুলে গিয়েছিলাম। কেমন আছিস,,,?
---আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো,,। তুই?
---আলহামদুলিল্লাহ্ আমিও ভালো,,। আংকেল আন্টি কেমন আছেরে?
---আলহামদুলিল্লাহ্ সবাই ভালো,,,। তোদের বাসার সবাই কেমন আছে?
---আল্লহুর রহমতে ভালো,,,।
---কি করস এখন,,?
---একটু বের হবো,।
---কোথায়?
---পাত্রি দেখতে,,!
---তাই নাকি রে,,,। তা কোথায়? আর কোন ক্লাসে পড়ে,,?
---আরে তুই সিরিয়াসলি নিচ্ছিস নাকি,,,। হাহাহাহা,,।
---তুই একটু পাল্টাবিনা রে,,,।
---মাঝে মাঝে আগের মত হয়ে যাই,,,। কিন্তু, এখন পুরো চেন্জ।
---তাই নাকি,,,।
---হ্যাঁ,, তুই আমাকে দেখলে আর কিছু টাইম কাটালে বুঝবি,,,।
---তাহলে বিকালে দেখা হচ্ছে। কেমন চেন্জ হইছিস,,,।
.
এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলতে থাকে ফারহান আর রুবাইয়া। অনেক দিন পর কথা বলছে দুজন। কত ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল, এখনও আছে। কিন্তু, মাঝ পথে থেমে যাওয়ার মত ছিল। পরে এক সময় বলবো সেসব কথা। এখন আমাকে বের হতে হবে।
.
.
সারাদিন ঝাঁ-ঝাঁ রোদ ছিল। অথচ সন্ধ্যা মেলাবার আগেই মেঘ জমে আকাশ কালো হয়ে গেল। আমজাত সাহেব মাজেদা বেগম ও নিশাতকে নিয়ে রাস্তায় নামতেই ফোঁটা-ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল। আমজাত সাহেব বললেন,
---বৃষ্টি হলে বাঁচা যায়, কি বল ?

মাজেদা বেগম বললো,
---বৃষ্টি হলে ভালো হয়। কিন্তু, বাসায় পৌঁছানোর পর হলে বেশ ভালো হতো।
পাশ থেকে নিশাত বলে উঠলো,
---আব্বু আম্মু কিন্তু ঠিক বলেছে। এখন বৃষ্টি নামলে কোথায় দাঁড়াবো।
---তা ঠিক বলেছিস মা।
---জ্বী আব্বু,,।
.
পাশ থেকে নিশাতের মা হুট করে বলে উঠলো,
---এই তোমার তো আবার বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লে জ্বর এসে যাবে রাতে। এই ছাতাটা তুমি নাও।
---আরে সমস্যা নেই। আর ছাতা পেলে কোথায়?
---আর বল না বড় আপা দিয়ে দিল।
---নিশাত আর তুমি মাথায় নাও। আমি একটু ভিজি আর বৃষ্টির ফোঁটা মাথায় পড়ুক। কতদিন হলো সেই বৃষ্টির ফোঁটা মাথায় পড়ার অনুভুতি করি না।
.
মাজেদা বেগম চোখটা বড় বড় করে তাকালো আমাজাত সাহেবের দিকে। আমজাত সাহেব কিছু বললো না। ছাতা নিয়ে মাথায় ধরে হেঁটে যাচ্ছে । নিশাত স্পষ্টদৃষ্টিতে সেটা দেখছে। মনে মনে ভাবছে, এরকম ভালোবাসা কি আমার কপালে জুটবে,,? কে জানে,,! আল্লাহ তায়ালা ভালো জানে।

---নিশাত গাড়িতে ওঠো,,,
বাবার কথায় ভাবনার ছেঁদ পরলো।
---জ্বী আব্বু উঠতেছি।
.
কথাটা বলে নিশাত একটা টেক্সিতে উঠে পরে । বাবা সামনে বসে ডাইভারের কাছে। মাথায় শুধু একি ভাবনা,,,।
.
.
প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট পর বাসার পৌঁছে যায়।

বাসায় এসে নিশাত রুমে চলে যায়। ফোনটা চার্জে দিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় চলে আসে ।

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে নিশাতের মনোজগৎ ভিন্ন আমেজের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়। আগের অনেক কথা মনে পড়ে যায়। না, ওর কোনো দুঃখের স্মৃতি নেই। বাবা-মায়ের খুব আদরের মেয়ে সে। কষ্ট নামক জিনিস সেটা বুঝতে দেই নাই কেউ। তবে একজন মানুষ ওর জীবনের আনন্দকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সে আর কেউ নয়-ফারহান। এই বাড়িওয়ালার ছেলে। ফারহানকে হারানোর ভয় নিশাতের ওপরও ভর করেছে! যদি আম্মুকে বলে তাহলে ফারহানের বাবার সাথে কথা বলবে। ভয়ের কোনো কারণ নেই; তবুও ভয়! কাউকে চূড়ান্তভাবে ভালোবাসলে কোথা থেকে যেন হারানোর ভয়ও এসে জুড়ে বসে মনের মাঝে! এই মুহূর্তে ফারহানের সঙ্গে কথা বলতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু সে তার রুমে। ফারহানের বাসায় যাওয়া এখন ঠিক হবে না। ফারহানের নাম্বারটাও নেই! কথা বলা সম্ভব না। নিশাত বাবার কাছে থেকে ভার্সিটিতে যাওয়ার ভাড়া থেকে কিছু টাকা জমিয়ে ফারহানের জন্য একটি হাতঘড়ি আর একটি শার্ট কিনেছে। চৈতীর কাছে শুনেছে আর কয়েকদিন পরে ফারহানের জন্মদিন। এবার নিশাত ফারহানকে সারপ্রাইজ দেবে!
.
.
.
চলবে,,,,

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম (১৬তম পর্ব)

সকাল সকাল ফোনের রিংটোনে ফারহানের ঘুম ভেংগে গেল। পাইরেটস অব দ্যা ক্যারিবিয়ান মুভির রিংটোন। রিংটোন টা ফারহানের খুব পছন্দের হলেও এই মুহুর্তে অসহ্য লাগছে। বালিশের আশেপাশে হাতিয়ে ফোনটা খুঁজে বের করে চোখের সামনে ধরল। সায়েম ফোন দিয়েছে। কোন রকমে রিসিভ করে ঘুম জড়িত কন্ঠে বলল,
- হ্যালো,,,,
- কি রে ভার্সিটিতে আসিবি না?
- না।
- কেন? কিছু হয়েছে?
---না,,।
---তাহলে,,? কেনো আসবিনা?
- কারণ, ভার্সিটির চেয়েও ঘুমটা আমার কাছে বেশি ইম্পোর্টেন্ট। আর যখন বের হবো তখন তোকে ফোন করবো,,।
- ঠিক আছে। ঘুমা।
এই বলে ফোনটা কেটে দিল সায়েম। ফারহান আরো কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করতে লাগল। কিন্তু, কিছুতেই চোখে ঘুমের আবাস নেই।
বিছানা থেকে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেল ফারহান।
.
ব্রেকফাস্ট করে এসে একটু রেশ নিলাম।
আজকে আর ভার্সিটিতে যেতে মন চাচ্ছে না। কালকে গেলে চলবে। তাই অলসতা কাজ করছে।
শুয়ে থাকা, বই পড়া আর খাওয়া দাওয়া করে তিনটা চলে গেলো। ঘুমানোর আগে বন্ধুদের ফোন দিলাম.......
সবাইকে ফোন দিয়ে কালকে ভার্সিটিতে আসতে বললাম,,,
.
পরদিন ভার্সিটিতে এসে কাজটা করে ফর্মটা নিয়ে বসে পরলাম সেই পুরোনো ফ্রেন্ডসদের সাথে । মাঠের মধ্যে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম সবাই মিলে। এমন সময় দেখলাম নিশাত নামের মেয়েটা আমাকে ডাকছে ।
ফ্রেন্ডসদের ঈঙ্গিতপূর্ণ চোখের চাহনি উপেক্ষা করে পিছন ফিরে তাকালাম। দেখি নিশাত আমাকেই ডাকছে। আমি ফ্রেন্ডস বললাম,
---এক মিনিট। যাব আর আসবো।
---ঠিক আছে যা,,,

আমি চলে গেলাম ওর কাছে ।
কাছে যাওয়াতে বলে উঠলো,
---যাবেন না ?
---কোথায় ?
---কোথায় আবার ? বাসায় ?
---ও,,হুম যাব তো ।
---চলেন একসাথে যাই ।

আমার মোটেই ইচ্ছা নাই একসাথে যাওয়ার । তাই মিথ্যে বললাম,
---আমার যেতে একটু দেরী হবে । তুমি চলে যাও।
---ও...
.
নিশাতের দিকে তাকালাম। দেখি চিন্তা করছে । মুখটা ফেঁকাসে হয়ে গেছে। কত আশা নিয়ে বলেছিল। চোখমুখ অন্ধকার হয়ে গেছে । ভেবেছিল একসাথে যাবে । কিন্ত, আমার কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেছে হয়ত । আমি নিজের চোখের সামনে সফলতা দেখতে পেয়ে মনে মনে খুশি । যাক একসাথে যেতে হবে না। নিশাত কিছুতেই আমার পিঁছু ছাড়ছেনা। বাঁচা গেছে । কিন্তু হঠাৎ মেয়েটার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠাতে শংকিত হয়ে পড়লাম । নিশাত পরক্ষণে বলে উঠলো,
---আচ্ছা আমি ওই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি । আপনার যাওয়ার সময় হলে বলবেন । আমি ওই পাশটায় আছি । ঠিক আছে ?
.
নিশাতের কথাটা শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেলাম। যতচেষ্টা করছি ততো আমার কাছে আসার চেষ্টা করছে। আমি মনমরা অবস্থায় বললাম,
---জ্বী, আচ্ছা ।
.
নিশাত চলে গেলো একটু ফাঁকে। একটু দূরে দাঁড়ানো আরেকটা মেয়ের সাথে কথা বলা শুরু করল । আমি আবার বন্ধুদের কাছে ফিরে গেলাম । সবাই জানতে চাইছে মেয়েটা কে ? আমার সাথে কি ওর ? আমার তখন কিছু বলার মুড নাই । মেজাজটা খারাপ হয়ে গেছে, নিজের উপর । জানি না কেন হয়েছে ।
কিছুক্ষণ কথা বললাম বন্ধুদের সাথে। মাঝে মাঝে নিশাতের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছি। সেও আমার দিকে তাকাচ্ছে বোধহয়।
বেশীক্ষণ দাঁড়ালাম না আর । লাভ নেই কোন । আগে যাই বা পরে, মেয়েটার সাথেই যেতে হবে । বাসায় যেতে হবে । তাই বন্ধুদের বললাম,
---দোস্ত আজ উঠি। অনেকদিন পর মনটা ভালো হয়ে গেল। খুব ভালো লাগছে। একসাথে কথাবার্তা, দুষ্টুমি সব মিলে অতীতে ফিরি গিয়েছিলাম আমি। (ফারহান)
---হ্যা রে ফারহান। আমিও খুব খুশি ও আনন্দ বোধ করছি। তুই যদি ফোন না দিতি তাহলে আজ এরকম আনন্দ মুহুর্ত মিস করতাম। (সিয়াম)
---ঠিক বলেছিস সিয়াম...। (সবাই মিলে বলে উঠলো)
---আরে সব আল্লাহুর ইচ্ছে। (ফারহান)
---আর যাই বলিস না কেনো সিয়াম। সবাই চেন্জ হয়ে গেছে। (ফাহিম)
---বেটা বেশি চেন্জ হইছিস তুই। তুই তো আগে খুব কথা বলতিস। আর এখন সব চেন্জ। সাইলেন্ট মুড। (তরিকুল)
---শুধু আমি না। সবাই। (ফাহিম (
---বাদ দে এসব কথা। (ফারহান)
---হুমম। (সবাই মিলে)
---ওই রুবাইয়ার খবর কি? (ফারহান)
---জানি না রে। ওর সাথে বেশি কথা হয় না। মাঝে মধ্যে হয়। (তরিকুল)
---কেনো? (ফাহিম)
---ওকে মিস করতাছি। ও থাকলে আজ আড্ডাটা বেশি মজার হত। (ফারহান)
---হুমম,,! শুধু ও না। মিষ্টি,,, (কথাটা বলে সিয়াম জিব্বাহ্ কামড় দেয়)
---সিয়াম আবারও,,,(ফাহিম)
.
ফারহান ফাহিমকে থামিয়ে বলে উঠলো,
---আরে সমস্যা নাই। আমি আর এসব নিয়ে মন খারাপ করি না। সব কপালের লিখন। (ফারহান)
---মন খারাপ করিস না দোস্ত। আমি ইচ্ছে করে,,,(সিয়াম)
---আরে,, আমি কিচ্ছু মনি করি নাই। (ফারহান)
.
সায়েম চলে এলো।
---কি রে তোর কাজ সল্ভ হয়ছে,,? (তরিকুল)
---হুমম। আর বলিস না দোস্ত। পুরাই ফিদা। তোদের সাথে আড্ডা দিতে আসলাম। আর আমি চলে গেলাম একটা ছোটবোনের কাজে।(সায়েম)
---তুই শালা মানুষ হবি না। (ফাহিম)
---আরে আমি কি ইচ্ছা করে গিয়েছি। ওরাই তো ডেকে নিয়ে গেলো । (সায়েম)
---তুই শালা কোনদিনও ভালো হবি না। (তরিকুল)
---হাহাহাহা,,
.
সবাই মিলে হেসে উঠলাম।
---আচ্ছা দোস্ত আজ তাহলে উঠি। তোদের সবাইকে আমার বাসায় দাওয়াত রইলো। চলে আসিস কিন্তু। (ফারহান)
---আন্টি কি মজাদার পোলাও-কোরমা রান্না করে খাওয়াবে আবারও । (তরিকুল)
---হুমম। আম্মু, তোদেরকে মিস করে খুব। তোরা গেলে খুব খুশি হবে রে। (ফারহান)
---ঠিক আছে। সামনের সপ্তাহে যাব কিন্তু। (সায়েম)
---ওকে ডান। আবার মিস করা যাবে না কিন্তু। (ফারহান)
---আরে সুস্বাদু রান্না কি মিস করা যাবে। (ফাহিম)
---রুবাইয়ার নাম্বারটা দে তো। আমার কাছে ছিল। বাট, ফোন ও সিম চেন্জ করাতে ওর নাম্বার মনে নাই। সবার সাথে যোগাযোগ করতে পারি না। (ফারহান)
---নাম্বার তোল,,,(সায়েম)
---বল,,,(ফারহান)
---০১৯********
---ধন্যবাদ,,,
---দুর বেটা ধন্যবাদ দিতে হইবো না। তোর নাম্বারটা রুবাইয়া চাইছিল। বাট, আমি আর দেই নাই। কেনো দেই নাই সেটা তুই ভালো করে জানিস। (সায়েম)
---জানি,,। (ফারহান)
---ও হ্যা,,, সিয়াম তোর জবের খবর কি,,,?(তরিকুল)
---ইন্টারভিউ দিয়েছি। ভাগ্য দেখি কি করে। (সিয়াম)
---দোস্ত, আমি যাই তাহলে। (ফারহান)
---আচ্ছা যা,, আর বাসায় গিয়ে ফোন দিস। (ফাহিম)
---ওকে,,,। আল্লাহ হাফেজ,,,।
---আল্লাহ হাফেজ,,।
.
বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে গেলাম। ওরা আড্ডা দিবে কিছুক্ষণ। তারপর চলে যাবে যার যার বাসায়। বাসার দিকে চলে যাচ্ছি।
তখন মনে হলে কেউ দৌড়ে আসছে আমার পিঁছু পিঁছু। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। পিঁছন ফিরে তাকালাম। দেখি নিশাত। মেয়েটার ওপর মেজাজটা গরম হয়ে যাচ্ছে। ছোটবোনের বান্ধুবীরা তাকিয়ে ছিল তখন। আজ চৈতী আসে নাই। তাই সেরকম কিছু হবেনা। কিন্তু, চৈতীকে জিজ্ঞেস করবে তারা। তখন চৈতী,, । উফফউফফপপপ,,,!
নিশাত দৌড়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো,
---এই,,আ,,আপনাকে বললাম আমাকে ডাক দিবেন বাসায় যাওয়ার সময়। কিন্তু, ডাক দিলেন না তো।
---আমার মনে ছিলনা।
---মনে ছিলনা,, নাকি ইচ্ছে করে। Bye the way,, চলুন,,
---কোথায়,,?
---কোথায় আবার,,! বাসায়,,। নাকি গার্লফ্রেন্ডের বাসায় যাবেন। (মৃধু হেসে)
.
কথাটা শুনে রাগ উঠে গেলো। কিচ্ছু বললাম না।
---চলুন,,
.
কথা বলতে বলতে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে মেইন রোডে এলাম। ভার্সিটির সাথে মেইন রাস্তা।
ভার্সিটি থেকে বের হয়েই আমাকে সে হুকুমের সুরে বলল, একটা রিক্সা ঠিক করেন ।
মেজাজ এমনিতেও খারাপ । তার উপর এইরকম কথা শুনে সেটা আরো বাড়লো । সরাসরি বলে দিলাম,
---পারবোনা । তুমি কর ।

আমার যে মেজাজ খারাপ এটা নিশাত মনে হয় খেয়ালই করেনি । তখন বলে উঠলো,
---বলেন কি ? আপনি একটা মেয়েকে এভাবে রিক্সা ঠিক করতে বলতেছেন ?
---কেন ? মেয়েরা রিক্সা ঠিক করলে কোন সমস্যা আছে ?
---নাহ । কিন্তু যখন সাথে কোন ছেলে থাকে তখন তো করে না । সেটা জানেন না বুঝি!
.
আমার তর্ক করতে ইচ্ছা করছে না । এই মেয়ের সাথে তর্ক করে ফায়দা নাই । ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেই যেটা বলবে সেটাই করবে । মনে মনে বলে উঠলো ফারহান, " সব মেয়েই কি এমন ? শিওর না ।

রিক্সা ঠিক করলাম একটা । রিক্সাওয়ালার বয়স বেশি না । রিক্সায় উঠেই আমি বললাম,
---মামা হুডটা তুলে দেন তো ।
,
রিক্সাওয়ালা মামা বললো,
---আইচ্চা মামা দিতাছি,,,।

তখন নিশাত বাধা দিয়ে বলে উঠলো,
---রৌদ নাই তো । হুড তোলার কি দরকার ? মামা হুড তুলতে হবে না। চলুন,,,
---ঠিক আচে মামা,,। (রিক্সাওয়ালা)
.
আমি বিবর্তবাদ করছি। সেটা বোধহয় নিশাত বুঝতে পেরেছে। শুধু আজকে রিক্সায় উঠি নাই। এর আগে একদিন উঠে ছিলাম। তখন পরিবেশটা রাতের শহরের পরিণতি ছিল। তখন সেরকম বোধ হয় নাই। আর তখন ছিল আম্মুর জন্য মেডিসিন আনার জন্য। মাথায় তখন এসব চিন্তাভাবনা ছিল না। আর এখন পুরো দিন। চতুর্দিকে জনসংখ্যাবৃদ্ধি। এই না যে আমি কোন দিন কারও সাথে রিক্সাতে ঘুরেবেড়াই নাই।
---তোমার কোন সমস্যা,,,?
---না মানে..
---আমরা কি প্রেম করতেছি নাকি । এত ভয়ের কি আছে ? থাকুক এরকম । কোন সমস্যা নাই। সোজা হয়ে বসুন।

আমার এখন অধিক শোকে পাথরের মত অবস্থা । নিজেকে একটা পুতুল মনে হইতেছে । যাকে নিয়ে ইচ্ছামত যা খুশি করা যায় । ইচ্ছা হলে হাত একটা চাপ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা যায় । আবার চাইলেই লাগিয়ে দেয়া যায় । বড়ই শোচনীয় অবস্থা । কিচ্ছু করার নেই। সব কপালের লিখন। রিক্সাওয়ালা মামা রিক্সা চালাচ্ছে। আমরা দুজনে বসে আছি। মাঝে মাঝে নিশাত আমার দিকে তাকাচ্ছে আর মনে মনে হাসছে।
.
.
.
চলবে,,,,!!!

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম (১৫তম পর্ব)

ভোরের সূর্যের আলো ঝলমলিয়ে রৌদ্দুর জানালা দিয়ে ছেঁদ করে ঘুম ভাঙিয়ে দিল।
ঘুমানোর আগে জানালাটা বন্ধ করা হয় নি। ঘুম ভেঙে প্রথমে খারাপ লাগলেও এখন আর খারাপ লাগছে না। জানালা দিয়ে বাতাস আসছে রুমে। ঘরে কেমন যেন ১টা আরামদায়ক শীতলতা। পাতলা চাঁদর গায়ে দিয়ে শুয়েছিলাম। ইচ্ছা করছে কাঁথাটা জড়াতে আবার আলসেমিও লাগছে। এমন সময় বালিশ টা কাঁপতে শুরু করল। এই মোবাইল নামক যন্ত্রটা এখন আর কাউকে একাকী থাকতে দেয় না।
আলসেমি করতে করতেই ফোনটা কেটে গেলো। খুব চেনা ১টা নাম স্ক্রিনে নাম্বারটা ভেসে আছে। ফোনটা রেখে
খোলা প্রান্তরে ভোরের সূর্যটা দেখতে অন্যরকম লাগে।
ভোরের সূর্যটা তার নিজেস্ব আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীতে। রাত নামক শব্দটা দিন নামে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
সাদা একটা পর্দা যেন আকাশ থেকে নেমে এসেছে। বাতাস পেয়ে পর্দাটা কাঁপতে থাকে, একেবেঁকে যায়। বড় অদ্ভুত লাগে। শুয়ে থেকে এই মুহুর্ত দেখা যায় না।

আমি বিছানা ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। পাশের বাসার কদম ফুল গাছটা আমাদের বারান্দা থেকে হাত বাড়ালে ছোঁয়া যায়। বৃষ্টি ভেজা ফুল গুলো কে ছুঁয়ে দিতে আমার সব সময়ই ভালো লাগে। তবে আজ কি একটু বেশিই ভালো লাগছে !!!! নাহ এতোসব ভাববার সময় নেই। একটু পর একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে বের হতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি করে ওয়াশ রুমে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে তৈরি হয়ে নিলাম।

ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করার জন্য খেতে এলাম ।
---গুড মর্নিং আম্মু,,, গুড মর্নিং আব্বু,,,গুড মর্নিং মাই ডিয়ার স্মল ডাইনি,,,
কথাটা বলতে বলতে ফারহান চেয়ারে বসে গেলো।
---গুড মর্নিং,,,(মা)
---গুড মর্নিং,,,(বাবা)
---গুড মর্নিং,,, ( চৈতী চোখটা বড় বড় করে)
---কি খাবি,,,? জ্যামরুটি ডিম ভাজি দিয়ে।
---হুমম দাও,,,
---আম্মু পেঁটুকরে ডিম ভাজি দিওনা। (আস্তে করে চৈতী বললো)
.
ফারহান ভালো ভাবে শুনতে পাইনি তবুও জানে তার ছোটবোন কি বলেছে।
---আম্মু আরও দুইটা ডিম ভাজি দাও,,,।
---আরও মানে,,! তুইতো একটার বেশি খাস না। আজকে হঠাৎ,,,
---এহম, এহম উহুহু,,,(ফারহানের গলায় আটকে যায়)
---এই নি পানি খা,,,। আমি ভেজে নিয়ে আসছি,,,
.
ফারহান ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিল।
---আমি পেঁটুক তাই আজ থেকে পেঁটুকের মত সব বেশি বেশি খাব।
.
ফারহানের আব্বা কথাটা শুনে হেসে দিল। সে এই ঘটনা লক্ষ করেছে তাহলে।
---নিয়মের বাহিরে বেশি খেলে পেট খারাপ হবে ফারহান,,।
---আব্বু তুমি জানো ও কি বলেছে।
---হুমম।
---তাহ,,,,
---শোন, মনে রাখিস, যে জিনিস বেশি সুস্বাদু,,। সে জিনিস বেশি ক্ষতি কর। পোলা খুব সুস্বাদু,, যদি প্রতিদিনকার চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলিস তখন সেটা পেট খারাপ করে দিবে । কারণ, সব কিছু নিয়মের বাহিরে খেলে সেটা বদহজম হয়। বিশেষ করে তেলযুক্ত খাবার। আর যেটা বলছিস সেটাও একটা তেল দিয়ে ভেজেছে। এমনিতে ডিম খুব অপকারী। কিন্তু, বেশি খেলে পেট খারাপ। আমি জানি তুই খাবি না। চৈতীকে দেখানোর জন্য বলছিস।
---ঠিক বলেছো আব্বু।
---আচ্ছা বাদ দাও কথাটা,,, তোমার আম্মু বললো, তুমি বলে চাকরি করবে?
---জ্বী আব্বু।
---কি চাকরি করবে সেটা ডিসাইড করেছো,,?
---আমার ডিফেন্সের চাকরি করতে ভালো লাগেনা,,,।
---তাহলে কি করবে,,? বিজনেস করবে,,?
---দেখি,,,। আর আজকে একটা ইন্টারভিউ দেব। দোয়া করবেন।
---প্রাইভেট,,,? নাকি সরকারি অফিসে,,?
---প্রাইভেটে,,,।
---প্রাইভেটে যদি কর। তাহলে আমার এক বন্ধুর অফিসে জয়েন করতে পার। অনেক বড় কম্পানি। তুমি যদি চাকরি কর তাহলে তার সাথে কথা বলে দেখবো।
---জ্বী,,।
---তাহলে আজকের ইন্টারভিউ দাও।
---জ্বী,,।
---আবার ভেবনা ইন্টারভিউ দিতে যাব না। ইন্টারভিউ দিলে জ্ঞান বারে। আর অনেক কিছু বুঝতে ও জানতে পারবে।
---জ্বী,,।
---এই নি ডিম ভাজি,,
---সত্যি, সত্যি ভেজে নিয়ে আসছো,,?
---হ্যা। তুই তো বললি,,।
---আরে এমনি বলেছি।
---এমনি বলিস আর যাই বলিস। আজ এই দুইটা খেয়ে নি।
---আমি পারবোনা।
---আরে দুর। পারবি আমি জানি।
---তুমি একটা নাও। আর একটা আমি খাচ্ছি।
---ঠিক আছে।
---তুমি না,,,,(ফারহানের বাবা)
---আমি না কি হ্যা,,। তুমি চুপ করে খাও। তুমি তো ২টা খেতে আগে। সাথে আবার ফলমূল খেতে।
---সেটা এক সময় খেতাম। এখনতো না।
---ওরা আজকে খাবে। যখন তোমার মত বয়স্ক হবে তখন খাওয়া কমিয়ে দিবে। ব্যস।
---তুমি জান না। অতিরিক্ত একবারে বেশি খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো না।
---আম্মু,,,, আব্বু এখন ঝগড়া করবে।
---তুই খা তো বাবা। তোর ইচ্ছামত যত পারিস খা। কারও কথায় কান দিবি না।
.
.
এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা। না খেয়ে পড়ছে। না খেয়ে পড়লে কি পড়ার ভেতর মনযোগ আসবে। একা একা কথা বলে যাচ্ছে মাজেদা বেগম।
দুইবার ডেকে যায় সকালের খাবারের জন্য। কিন্তু, নিশাত বলে আর একটু পরে খাব, খাব করে আর খেতে আসছেনা।

মাজেদা বেগম ভাতের প্লেট নিয়ে রুমের ভেতর ডুকে পরে। টেবিলের উপর প্লেট রেখে পানির জন্য চলে যায়। পানি লবন নিয়ে রুমে আসে।
---আম্মু এভাবে কথা বললে পড়ার ডিস্টার্ব হয়।
---না খেয়ে পড়া লাগবে নাকি। কাল কতবার বললাম যাস না এই রাতে। না,, কে শোনে কার কথা। কন্ঠসর তো আনক্লিয়ার হয়ে গেছে। টনসিল ফুলে গেছে বোধহয়।
---আম্মু আমার পড়া শেষ হয়নি। আমি খাব না। আজকে আমার পরীক্ষা হবে। আগে জানলে কি বৃষ্টিতে ভিজতাম,,।
---ভিজতাম মানে,,? তুই কি ইচ্ছে করে ভিজেছিস,,?
---ক,,,কই নাতো। বৃষ্টিতো ছাড়বেনা ভেবে রওনা দিয়েছিলাম। তাই আর কি।
---হুমম। আমি খাওয়ায়ে দিচ্ছি,,।
---আম্মু,,,।
---চুপ,,, গলার সর ক্লিয়ার করার জন্য চা বানিয়ে আনছি। ভাত খেয়ে নি আগে।
.
মাজেদা বেগম নিশাতকে ভাত খা'য়ে দিচ্ছে। আর নিশাত চুপ করে খাচ্ছে । কাল বৃষ্টিতে ভিজে রাতে টুম্পার কাছ থেকে নোট নিয়ে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে ডাক দিতে গিয়ে বুঝতে পারে গলা ডেবে গেছে (কন্ঠসর স্পষ্টতা হচ্ছে না)। বুঝতে পারে বৃষ্টিতে ভেজার ফল। তাই নিজে এক কাপ চা বানিয়ে খেতে একটু ক্লিয়ার হয়েছে।

মাজেদা বেগম মেয়েকে ভাত খাওয়ায়ে গরম গরম এত কাপ চা করে দিয়ে যায়। নিশাত চা খেয়ে আবার পড়তে বসে।

১২ টার পর বাসা থেকে বের হয় টেষ্ট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। সেরকম কোন জটিলতা পরীক্ষা না। জাষ্ট টিচার টেষ্ট এক্সাম নিচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের বুঝানোর জন্য।
.
.
ফারহান দুপুরে বাসায় চলে আসে ইন্টারভিউ দিয়ে। খাবার খেয়ে বিছানায় চলে আসে। আজ খুব ক্লান্ত। অনেক হেঁটেছে। গাড়ির চাকা পাম যাওয়াতে কত হেঁটে যেতে হয়েছে তার ঠিক নেই। মধ্যরাস্তায় গাড়ি নষ্ট হলে তখন গাড়ির কোন দেখা মেলে না।
একবার ভেবেছিল ইন্টারভিউ দিবে না। আবার কি মনে করে হেঁটে হেঁটে চলে যায়।

মমতা রহমান ছেলের রুমে এসে দেখে ফারহান শুয়ে পড়েছে। বোধহয় খুব ক্লান্ত। তাই এসে খেয়ে ঘুুমিয়ে পড়েছে।
মমতা রহমান গিয়ে ছেলের পাশে বসে মাথায় রাখলো। ফারহান ডাক দিকে ঘুরে দেখে আম্মু।
---কি রে ইন্টারভিউ কেমন দিলি,,,? একটু তো বললি না।
---আলহামদুলিল্লাহ্! ভালো দিয়েছি।
---আলহামদুলিল্লাহ্। যাক আল্লাহুর রহমতে ভালো দিয়েছিস। আমি দোয়া করেছিলাম তুই যেন টিকে যাস।
---জানি না সিলেক্টেড হবো কিনা। কিন্তু, আশা আছে সিলেক্ট হবো আম্মু। কারণ, আমার রেজাল্ট দেখে একটু প্রশংসা করেছে ওই কম্পানির চেয়ারম্যান।
---যাক কথাটা শুনে খুশি হোলাম। আল্লাহুর কাছে লাক্ষকটি শুকুরিয়া,,, আচ্ছা তুই বোধহয় খুব ক্লান্ত। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। তুই ঘুমা। একটা ঘুম দিলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।

ফারহান মাথাটা মায়ের কোলে রাখলো। মমতা রহমান ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ফারহান একটু পর ঘুুমিয়ে পরে। আজ বেশি ক্লান্ত। না হলে এতো তাড়াতাড়ি কখনও ঘুম আসেনা ফারহানের।
.
.
---হ্যালো।
--- হাঁ শুনছি বল।
--- এতক্ষণ লাগল আমার ফোন ধরতে! তুমি জান না আমি তোমাকে কত মিস করি। তুমি দেরি করে ফোন ধরলে আমার ভালো লাগে না।

---আররে বাবা শাওয়ারে ছিলাম তো। এমন বাচ্চাদের মত কর কেন!
--- আমি তো বাচ্চাই। এই বাচ্চাটাকে একটু আদর করে দাও না। একটা পাপ্পি দাও না প্লিজ।
.
নিশাত একটু লজ্জা পেয়ে যায় কথাটা শুনে।
---আমি এখন ফোন রাখছি।
--- এই না না। রেখ না প্লিজ। আর একটু কথা বলি!
--- আচ্ছা বল।
--- আচ্ছা তুমি এত সুন্দর কেন? শাওয়ারের পর তোমাকে নিশ্চয় আরও অনেক সুন্দর লাগছে। বিশেষ করে তোমরা যখন মাথায় তওয়ালে পেছিয়ে রাখ। আর কানের সামনে ভেজা চুল ভেয়ে পানি গড়িয়ে পরে।

--- তা তো ভাল লাগবেই! তোমরা ছেলেরা না সব ওই একটা বিষয় ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পার না!
---এই তুমি রাগ করছো কেনো,,?
---বল তো তুমি এরকম কাকে,কাকে দেখেছো,,?
---শুধু তোমাকে,,,।
---হোয়াট,,,! আমাকে,,?
---হুমম।
---হুমম কি?
---না মানে,, তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম। তখন সকালে গোসল করে এসে আমাকে ডেকেছিলে। আর আমি হা করে তোমাকে দেখতে ছিলাম।
---ইস আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে,,,
.
কারও ধাক্কায় চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
---কিরে নিশাত কি হয়েছে।
---দিলা তো স্বপ্নের বারোটা বাজিয়ে।
---কিসের স্বপ্ন। আর এই রাত ৮ টার সময় কেউ স্বপ্ন দেখে।
---আম্মু স্বপ্ন দেখতে সময়-টময় লাগেনা। ঘুম এলে অটোমেটিক ভাবে কল্পনা জগৎ শুরু হয়ে যায়।
---তা ঠিক বলেছিস। তা কি স্বপ্ন দেখলেন ম্যাডাম,,?
---বলা যাবে আম্মু সিক্রেট ব্যাপার,,,।
---তাই নাকি,,।
---হুম।
---বুঝতে পেরেছি কি স্বপ্ন দেখেছেন।
---কি স্বপ্ন দেখেছি বল,,,?
---সেটা বলা যাবেনা একান্ত সিক্রেট ব্যাপার।
---আম্মুওওওও,,,
---হাহাহাহা,,,, যা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। তোর আব্বু বসে আছে।
---ওক্কে মাই ডিয়ার মম,,,,
.
.
.
চলবে,,,

বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম ( ১৪তম পর্ব)

ফারহান আমার পাশে হাঁটতে থাকে।

আকাশে মাঝে মাঝে বিদুৎ চমকাচ্ছে আর বিকট আওয়াজ হচ্ছে। মনের ভেতর তখন হঠাৎ ভয় হয়। এই বুঝি আকাশটা আমার মাথার উপরে ভেংগে পড়লো।

রাস্তা একদম ফাঁকা। এমনিতে বৃষ্টির দিনে, কোন গাড়িওয়ালা গাড়ি চালায় না। বৃষ্টিতে কে বা যাবে কোথায় । তার উপর রাত প্রায় অনেক। সব মিলিয়ে সুনসান নিরবতা। শুধু মেঘের গর্জন আর বৃষ্টির শব্দ আর আমাদের হাঁটার শব্দ ছাড়া কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না।

বাসার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি। তখন বুঝতে পাড়লাম আমার সাথে কেউ নেই। আমি একটু ভয় পেয়ে যাই। তখন মনে হচ্ছিল আমি একা একা হাঁটতেছি এই বৃষ্টি শহরে,,,?
পিছন গিরে তাকিয়ে দেখি ফারহান তার শার্ট খুঁলে ফেলেছে। সুন্দর চেহারা ফারহানের। একদম ফর্সা গা। স্যান্ডেল গ্যান্জির ভেতর থেকে ফর্সা গা ফুঁটে উঠেছে। কেমন জানি মনের ভেতর আকর্শন করছে ফারহানের দিকে। ফারহানের বেপারটা বুঝতে পারলাম না। আমি একটু ভয় আর সাহস নিয়ে ফারহানের কাছে এগিয়ে গেলাম।

কাছে গিয়ে অবাক হোলাম,,! তিনটা বিড়ালের বাঁচ্চা সহ মা গাছের নিচে বসে আছে। মনে হচ্ছে বাঁচ্চাগুলির ঠান্ডা লাগছে। আমি ফারহানের কাছে দাঁড়াতে বিড়াল একটু ভয় পেয়ে যায়। তখন ফারহান বলে উঠলো,
---কি রে টুসি ভয় পেয়ে গেলি,,। উনি আমার বন্ধু হয়। তোকে কিচ্ছু করবেনা।

আমি ফারহানের মুখে বন্ধু কথাটা শুনে একটু অন্যরকম ভালো লাগা সৃষ্টি হলো।
ফারহানের কথাটা বোধহয় বিড়াল ঠিকমতন বুঝতে পারে নাই। তাই হয়তো বিড়ালটি তার বাঁচ্চাদের হাত দিয়ে (সামনের দুপা → বিড়ালের দুটি হাত) কাছে টেনে নিল। আর ফারহানের কথা কেমন করে বুঝবে,,,! আমরা তো মানুষ আর ওরা প্রাণী।
---ও বোধহয় তোমার কথা শুনে ভয় পেয়েগেছে।
---না।
---তাহলে যে ওর বাঁচ্চাদের সেভ রাখার চেষ্টা করছে।
---আসলে তুমি যেটা ভাবছো সেটা না। টুসি সহ বাঁচ্চাদের ঠান্ডা লাগছে। তাই ও সবাইকে কাছে টেনে শরীর গরম করার চেষ্টা করছে। যাতে ওর বাঁচ্চারা ঠান্ডায় কোন কষ্ট না পাক।
---তুমি কি করে বুঝলে।
---আমি বুঝতে পারি। ওদের সব কিছুই বুঝতে পারি। তাই এখনও বুঝতে পাড়লাম ওদের ঠান্ডা লাগছে।
---ও,,, তোমার ঠান্ডা লাগছেনা।
---ওহ্! আমি শার্ট খুলেছি ওদের দেওয়ার জন্য। আর আমি তোমার সাথে কথা বলে ভুলে গিয়েছিলাম।
.
ফারহান শার্টটা চিঁপে (শার্টের পানি বের করে) টুসি সহ ওদের বাঁচ্চাদের শার্টটা সুন্দর করে পেঁছিয়ে গাছের গোড়াতে সুন্দর করে রেখে দিল।
---এখানে আর বৃষ্টির পানি লাগবেনা। বুঝলি টুসি।
.
আমি অদ্ভুত হয়ে গেলাম। বিড়ালটি ফারহানের কথা বুঝতে পেরেছে। কারণ, ফারহানের দিকে বিড়ালটি হাত দিয়ে ডাকছে।
---কি রে আমাকে যেতে দিবি না।
.
বিড়ালটি মাথা নাড়ালো। আমি আরও অবাক হয়ে গেলাম। কি করে বুঝলো ফারহান বিড়ালটির কথা।
---কি হলো। বল টুসি।
.
বিড়ালটি এবার সামনের দুহাত দিয়ে ফারহানের হাতের খাঁমছি দিচ্ছে।
---আমি থেকে যাব তোদের সাথে।
.
বিড়ালটি নিরব হয়ে গেলো কথাটা শুনে। ফারহান তখন বলে উঠলো,
---দেখ টুসি। আমার বন্ধু শীতে কাঁপছে। অনেক্ষন বৃষ্টিতে ভিজেছি। আরও ভিজলে জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি কাশি বেঁধে যাবে তো। সে অনেক ভালো স্টুডেন্ট। পড়াশোনা ক্ষতি হবে। বল এখন কি করবো আমি। যাব, নাকি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে তোর সাথে গল্প করবো।
.
ফারহানের কথাটা বুঝতে পেরে বিড়ালটি পা নামিয়ে ভেঁজা শার্টের ভেতর ঢুকে পড়লো।
ফারহান তখন বলে উঠলো,
---টুসি কাল দেখা হবে কেমন। আমি এখন যাই। আল্লাহ্ হাফেজ।
.
ফারহান বিদায় নিয়ে তবুও উঠছেনা বিড়ালটির কাছে থেকে।
---কি হলো বসে রইলে যে।
---তোমার কি খুব ঠান্ডা লেগেছে।
---না।
.
ফারহান মিষ্টি হাসি দিল আমার কথাটা শুনে।
---হাসছো কেনো,,?
---তোমার ঠান্ডা লেগেছে তবুও বলছো ঠান্ডা লাগে নি।
---আমিতো সত্য বললাম।
---তোমার ঠোঁটতো কেঁপে যাচ্ছে। তুমি বোধহয় বৃষ্টিতে বেশিক্ষণ ভেঁজনি।
.
আমি আর কিচ্ছু বললাম না। আমি ফারহানের সাথে থেকে ঠান্ডা ভুলে গেছি। এমন কি সব ভুলে গেছি।
---টুসি কি হলো বিদায় দে।
.
টুসি একটু নড়ে উঠলো।
---টুসি,! আল্লাহ হাফেজ।
.
---চলো,,
---একটা কথা বলতে পারি,,,?
.
ফারহান একটু অবাক হয়ে নিশাতের দিকে তাকালো।
---অবশ্যই বল,,।
---প্রথম যখন আল্লাহ হাফেজ বললেন। তখন উঠলেন না। কিন্তু, দ্বিতীয় বার কথা বললে তখন নড়ে উঠলো। তখন আল্লাহ হাফেজ বললে।
---শোন, প্রথম আমাকে বিদায় দেই নি। ও চাইছে ওর কাছে থাকি আর গল্প করি। পরে যখন বললাম। তখন একটু নড়ে উঠে বললো আল্লাহ হাফেজ ।
---আচ্ছা, যদি এমনি নড়ে উঠে।
---না নিশাত। টুসি তখন আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য নড়েচড়ে উঠে। যাতে আমি বুঝতে পারি।
.
আমি আর কিচ্ছু বললাম না। শুধু তাকিয়ে দেখলাম। আসলে ছেলেটা খুব ভালো।
আহ্,,,রাস্তার একটু ভাংগা থাকাতে নিশাত পড়ে যেতে ফারহান হাতটা ধরে ফেললো ।
---এভাবে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে যাও,,।
.
আমি ফারহানের কথাটা শুনে ভিষণ লজ্জা পেলাম। সে কেমন করে বুঝতে পাড়লো,,? হয়তো সেও আমাকে দেখতেছিল।
---কি হলো এভাবে তাকিয়ে থাকবে। নাকি হাতটা ছেড়ে দেব।
.
আমি স্বাভাবিক হোলাম।
আমি একটু বেশি লজ্জা পেয়েগেছি এখন।
কি অদ্ভুত ছেলেটা। কত লাজুক,,! কত দুষ্ট,,! কত রাগি,,,! কত ভালোবাসা,,,! কত মায়া চোখে, মুখে,,! সব মিলিয়ে পারফেক্ট ছেলে,,,,

.
একটু পর বাসায় এসে পরলাম।
সিঁড়ি দিয়ে উঠে পরলাম।
---ধন্যবাদ,,,
---ধন্যবাদ কেনো নিশাত,,,?
---সুন্দর মোমেন্টে আমার সাথে ভেজার জন্য। ও,,,
---ও কি,,
---সব কিছুর জন্য আবারও ধন্যবাদ,,,
.
কথাটা বলে উপরে উঠে আসতে লাগলাম।
ফারহানের মাথাটা তুলে ভেজা চোখে ওর সেই অদ্ভুত হাসিটা আবার হাসল। আমি আবারো অসাড় হয়ে গেলাম। ভালবাসা কি সবাইকেই এমন অসাড় করে দেয়..................????!!!
.
.
ফারহান বাসায় এসে ঔষুধ আম্মুকে দিয়ে তার কোন কথা না শুনে রুমে চলে গেলো।
রুমে এসে ফারহান ড্রেসটা চেন্জ করে। বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে পুরনো দিন গুলোর কথা মনে পরে গেল তার ।
মিষ্টি ভার্সিটি থেকে কখন আসবে সে অপেক্ষায় থাকত। সে কখনো বের হত । একসাথে এইখানে ওইখানে বেড়াতে যাওয়া খুন বড্ড মনে পরছে ফারহানের ।
মিষ্টির সাথে যেদিন প্রথম রিক্সা করে এসেছিল। সেদিন রাতে ছাদে একসাথে বসে ছিল দুজনে ।
মিষ্টি আর ফারহান ছাঁদে বসে ছিল একটু দূর করে পাছে খালা এসে পরেন এই ভেবে, ফারহানের কাছে চাঁদের আলোয় মিষ্টিকে যেন কোন মায়াময় মায়াবতীর মত লাগছিল যাকে সে হাজার বছর ধরে খুজেছিল। তাকে পেয়ে গেছে বাকী জীবনটা পারি দেওয়ার জন্য। এসব কথা মনে পড়তে ফারহান তখন মৃধু হেসে উঠে। ফারহানের হাসিটা মিষ্টির চোখ এড়ালো না। তখন ফারহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
---ফারহান! তোমার হাসিটা খুব মায়াবি...।
.
মিষ্টির কথা শুনে ফারহান ভ্রুঁটা কিছুটা উুঁচু করে তাকালো মিষ্টির দিকে। কিহ্ মায়াবী দুচোখ,,! মুখটা মায়াবতী,,,!
---এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো,,?
---তোমাকে,,?
---আমি কি দেখতে খুব সুন্দর,,,!
---হুমমম! তুমি দেখতে অসম্ভব সুন্দরী। মায়াবী মুখ,,! দুচোখের মাঝে বিশাল মায়াজালের ফাঁদ,,,!আর এই পুর্ণিমা রাতের মাঝে মনে হচ্ছে, কোন এক চাঁদের পরী আমার সামনে এসে বসে আছে।
.
ফারহানের মুখে এই কথাগুলি শুনে মিষ্টি লজ্জায় লাল হয়ে যায়। মাথাটা নিঁচু করে বসে থাকে। মাথা তুললে ফারহান আরও লজ্জায় ফেলতে পারে।
---কি হলো,,। খুব লজ্জা পেলে নাকি,,?
---আমি বলতে পারবোনা।
---তাই,,,!
---হুমম।
---একটু হাতটা দিবে,,,?
---হাতটা স্পর্শ করা ঠিক না বিয়ের আগে।
---আচ্ছা ঠিক আছে ধরবো না। হাতটা না হয় বাসর রাতে ধরবো। কেমন!
.
মিষ্টি ফারহানের মুখে এই কথাটায় আরও বেশি লজ্জিত হয়ে যায়। ছেলেটা আমাকে লজ্জায় মেরে ফেলবে ।
ফারহান বুঝতে পারে মিষ্টি অনেক, অনেক লজ্জা পেয়েছে। তাই কিছু বললো না।
.
এসব কথা মনে পড়তে ফারহান অঝরে কাঁদতে লাগলেন। কেনো এমন হলো,,? কি করেছিলাম আমি,,? আমি কি তাকে খুব বেশি অপরাধ করেছিলাম,,? জানি না কতবড় অপরাধ করেছিলাম,,! আমি তো তাকে কোন স্পর্শ করি নাই। কেনো বিশ্বাস করতে পারলো না মিষ্টি। হয়তো আমার ভুল ছিল। মিষ্টি আমি এখনও তোমাকে ভালোবাসি,,। খুব ভালোবাসি,, খুব,,,,,
.
ফারহান কাঁদতে কাঁদতে বালিশের কাভার ভিজিয়ে ফেলেছে। চোখটা মুঁছে ফেলে দরজার টোকার শব্দ শুনে। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে ফারহান।
চৈতী বুঝতে পারে ভাইয়া কেঁদেছে খুব। হয়তো পুরানো স্মৃতি মনে পরে আজ কেঁদেছে। কে বা কাঁদবে না,,! যেকোন মানুষ হোক না কেনো, যদি সত্যি কারে, কাউকে ভালোবাসে সে নিশ্চয় কাঁদবে।
---ভাইয়া তোর কি মাথা ব্যথা করছে,,,?
---না রে,,,।
---ভাইয়া তোর চোখটা লাল হয়েগেছে তো। অনেক বেশি ভিজেছিস,,।
---হুমম।
---আচ্ছা, ভাত খেতে আয়।
---খেতে ইচ্ছে করছেনা রে। তোরা খেয়ে নি।
---আম্মু কি তোকে ছাড়া খাবে বল,,!
---আমার ভালো লাগছেনা।
---অল্প খেয়ে চলে আসিস। চল ভাইয়া,,
.
চৈতী ফারহানকে টেবিলে নিয়ে যায়। চৈতীর চোখটা বালিশের কভার ভেজা এড়ায় নি। কি করবে। বলে কি এই কাঁন্না বন্ধ হবে। না,, কখনও না। হয়তো কোন মেয়ের ভালোবাসা, ভাইয়াকে বন্ধ করে দিতে পারে। তাই তো একটু চেষ্টা করছে।
.
.
নিশাত খাবার খেয়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে। বিছানায় ধপ করে পরে যায় কদম ফুল নিয়ে । ছেলেটা খুব মায়াবী,,! কত যে ভালোবাসতে পারে সেটা দেখে বুঝতে পেরেছে।
আজকের বৃষ্টিরাতের কথা কখনও ভুলতে পাড়বো না! কত মায়াবী ঠোঁট,,! বৃষ্টিতে বেজার সময়, ফারহানের গোলাপি কালার ধারণ করেছিল দুখানা ঠোঁট ।
ইস যদি একটু ছুঁয়ে দিত আমায়। না, না এসব কি ভাবছি আমি,,! দূর এসব বিয়ের আগে ব্যবিচারিনিদের কাজ। এসব করা যাবে না।
কিন্তু, যখন কদম ফুলটা দিল, তখন ফারহানের হাতের স্পর্শ পেয়ে শরীর শিওরে উঠে।
এসব ভাবতে ভাবতে নিশাত একদম পাগল হয়ে যাচ্ছে।
ফোনটা বেজে উঠলো টং,টং করে।
এই স্বপ্নের ক্যানভাসের মাঝে কে ডিস্টার্ব করছে ফোন দিয়ে। নিশাত ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে। ২৬ টা কল,,,! ৮ টা ম্যাসেজ,,,! Oh My God,,,!
---হ্যালো,,,
---কি রে ফোন রেখে কোথায় ছিলি,,,? কতবার ফোন দিয়েছি দেখছিস,,! তোদের না সময় মত ফোনে পাওয়া যায় না। কি করিস ফোন রেখে আল্লাহ তায়ালা জানে।
.
একবারে কথাগুলি বলে ফেললো টুম্পা,,,। নিশাত বিরক্তি হলে কিচ্ছু বললো না। এই সুন্দর মোমেন্ট (Moment) এর সময় মাথা গরম করে মনটা নষ্ট করার দরকার নেই। মনে মনে বলে নিশাত বলে উঠলো,
---আর বলিস না। ফোন রেখে ফার্মেসির দোকানে গিয়েছিলাম। ফার্মেসির দোকানে যাওয়ার সেই যে বৃষ্টি নামলো। আর ১ ঘন্টার মধ্যে ছাড়ার কোন নাম গন্ধ নেই। পরে ভিজে ভিজে বাসায় এসে। ড্রেস চেন্জ করে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমাতে যাচ্ছি আর তুই ফোন দিলি।
---আহারে বেঁচারী। কত না কষ্ট করেছিস,,।
---বাদ দে ওসব কথা। কি বলবি বল। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
---আমার কথাটা শোনার পর ঘুমটা ছেড়ে যাবে দোস্ত।
---মানে,,,?
---কালকে যে এক্সাম আছে সেটার খেয়াল আছে,,,!
---Oh No...আমার মনে ছিলনা। দোস্ত কি কি নোট আছে আমাকে দে তাড়াতাড়ি। প্লিজ,,!
---আহারে,,। আমার দোস্ত। কয়দিন ধরে ক্লাস করছিস না সেটার খেয়াল আছে।
---আর বলিস না। বাসায় এতো পরিমাণ কাজ যে, আম্মু একা সামলাতে পাড়ছেনা। তাই বাসার কাজ করছি দোস্ত।
---ওহ্ আমার কাজের মেয়েরে। তুই করবি কাজ,,! সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে। হাহাহাহা,,,!
---হ্যাঁ,,! আর এতে হাসার কি আছে,,? আর তোর কেনো কনফিউশন আছে,,,?
---উমমম কনফিউশন তো আছে বটে ম্যাডাম,,।
---বল কি কনফিউশন,,?
---যে মেয়ে কফি পর্যন্ত বানিয়ে খেতে চাই না। সে কিনা কাজ করছে,,,হে,,,
---আচ্ছা বাদ দে তো। স্যার কি কি নোট দিছে দে তাড়াতাড়ি,,,
---ওহ্,! এখন পড়াশোনা নিয়ে খুব ই দেখাচ্ছিস। মনে হচ্ছে ফুল মার্ক তুই পাবি।
---দুর মার্ক টার্ক পরে দেখা যাবে। আগে বল,,,
---আগে তুই বল, তোর হ্যান্ডস্যাম ছেলেটা কি তোর প্রেমে পড়েছে।
---বাজি কথা বাদ দে তো। যা বলছি তাই বল,,। কি কি নোট দিছে সব দে।
---আচ্ছা তুই খাতায় লেখ,,,
---ওয়েট,, ১ মিনিট। খাতা এনে নেই,,,
---ওকে,,,
---আচ্ছা বল এখন,,,
টুম্পা বলছে আর নিশাত লিখছে।
.
.
.
চলবে,,,,